হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর যাত্রা শুরু করে ১৯৮০ সালে। এখানে আছে দুটি টার্মিনাল। বর্তমান বিমানবন্দরটির অবকাঠামো বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট নয়, তা অনেক দিন ধরেই স্পষ্ট। এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েও বিভিন্ন দেশ প্রশ্ন তুলেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
মঙ্গলবার জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ অনেক দূর শেষ হয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টার্মিনালের ‘সফট ওপেনিং’ করবেন। তার আগেই ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হবে। আর বাকি ১০ শতাংশ কাজ শেষ হবে আগামী বছর।
বিমানবন্দর মানেই এখানে বিশালাকৃতির লাইন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, ট্রলি নিয়ে ঠেলাঠেলি, গাদাগাদি, যাত্রী সাধারণের ভিড় আর ব্যবস্থাপনার ঘাটতি। থার্ড টার্মিনাল যাত্রীদের এই অনুভূতিটাই বদলে দেবে। কারণ এখানে থাকছে সুন্দর বোর্ডিং ব্রিজ, দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশনে যাতায়াতের এস্কেলেটর, আর ষড়ঋতুর ছয়টি রঙের সমাহার। দেয়ালজুড়ে থাকছে দেশের ষড়ঋতুর ছয়টি রঙের নয়নাভিরাম দৃশ্য। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই চোখে পড়বে বিশালাকৃতির জাতীয় ফুল শাপলা। জলে ভাসা পদ্মে ঢেউয়ের অপরূপ দৃশ্য। এমন চিত্র দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও পরিবেশ-প্রকৃতি সম্পর্কে যাত্রীদের ধারণা জন্মাবে। নতুন টার্মিনাল হলে যাত্রীদের চাপ অনেকটা সামলানো যাবে এবং বিমানবন্দরটি এক সত্যিকারের আন্তর্জাতিক রূপ পাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এটি হবে এমন একটি বিমানবন্দর যেখানে কোনো যাত্রী নেমেই গোটা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য ধারণা পাবেন তারা। ভবিষ্যতে তৃতীয় টার্মিনালের জন্য একটি রানওয়ে করারও প্রস্তাব রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরগুলোর মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে জাপানের বিশেষ দক্ষতা, সুনাম ও ভাবমূর্তি রয়েছে। সেটা
মাথায় রেখেই সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দায়িত্বটা জাপানকে দেওয়ার। প্রত্যাশা করা যায়, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং হবে বিশ্বের অন্যতম বড় বড় এয়ারপোর্টের মতোই নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ।
বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২ ঘণ্টায় গোটা দক্ষিণ এশিয়া প্রদক্ষিণ করা যায়, ৪ ঘণ্টায় এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোতে যাওয়া যায়, ৬ ঘণ্টায় মধ্যপ্রাচ্যসহ আফ্রিকায় যাওয়া যায়, ৮ ঘণ্টায় ইউরোপ পৌঁছা যায়। ইউরোপের হাব পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয় সুইজারল্যান্ডকে। তেমনভাবে বাংলাদেশেরও হাব হয়ে ওঠার উপযোগী ভৌগোলিক অবস্থানে আছে। সে সুযোগ থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন হাব করার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ঢাকায় থার্ড টার্মিনাল, কক্সবাজারের সমুদ্রগর্ভে রানওয়েসহ অত্যাধুনিক এয়ারপোর্ট, সিলেটেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করছেন। আমরা মনে করি, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল যাত্রীদের জন্য বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ দেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টরকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।