চীনে গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ২৫৬১। যার মধ্যে ১৮৪৪টি বিশ্ববিদ্যালযয়ে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। কমপক্ষে ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। এর অর্থ হচ্ছে, এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে “ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো ডিগ্রি” প্রদান করা হয়। এমনকি, এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক বৃত্তি রয়েছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য। মাস্টার্স প্রোগ্রামে বেশী সংখ্যক বৃত্তির ব্যবস্থা থাকলেও পিএইচডি প্রোগ্রামেও কম নয়।
চীনের উল্লেখযোগ্য বৃত্তির সংখ্যা ছয়টি। যেমন: চাইনিজ গভার্ণমেন্ট স্কলারশিপ (সিএসসি) লোকাল গর্ভার্নমেন্ট স্কলারশিপ (২৩টি প্রদেশের প্রাদেশিক সরকার এই বৃত্তি প্রদান করে), বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ স্কলারশিপ (বিআরআই), মফকম স্কলারশিপ, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ (শুধু চাইনিজ ভাষায় দক্ষরাই এখানে আবেদন করতে পারে)। মাত্র একটি আবেদনের মাধ্যমেই উপরোক্ত সবগুলো বৃত্তির জন্য একজন আবেদনকারীকে বিবেচনা করা হয়। আলাদা আলাদা আবেদনের কোন প্রয়োজন নেই।
বৃত্তির আবেদনের প্রক্রিয়া দুই ধরনের: ক) নিজ দেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে; খ) সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। উভয় আবেদন প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয় অনলাইনের মাধ্যমে। দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় চীনা দূতাবাস, সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ও কনফুসিয়াস ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালনায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে গৃহীত আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিমাত্র কেন্দ্রীয় ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে। অর্থাৎ একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিষয়, ডিগ্রি, ও সবগুলো বৃত্তির আবেদন পরিচালনা করা হয়। এক কথায়, চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন গোটা দেশে একীভূত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরিচালিত হয়।
সাধারণত প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের নিউজ অংশে। আবেদন গ্রহণ করা হয় মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জুন পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় শুধু ফল (সেপ্টেম্বর) সেশনের জন্য। প্রতিটি বৃত্তি দেওয়া হয় তিন বছরের জন্য। কেবল সিএসসি স্কলারশিপ সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত দেওয়া হয় এবং বাকীগুলো তিন বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এখন শুধু সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবো। সর্বশেষ অর্জিত ডিগ্রিতে প্রাপ্ত জিপিএ ৩.৩, আইএলটিএস-এ কমপক্ষে ৬.০ ব্যান্ড স্কোর, কমপক্ষ দুইটি গবেষণা পেপার, ও একটি রিসার্স প্রপোজাল-এই চারটি যোগ্যতা কারো থাকলে সে বৃত্তির জন্য অনায়াসে বিবেচিত হবে। সবাইকে আবেদনের দুইটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রথমে সম্ভাব্য সুপারভাইজার এর নিকট হতে অফার লেটার নিয়ে প্রি-এডমিশন লেটারের জন্য আবেদন করতে হয়। প্রি-এডমিশন লেটার পেয়ে গেলে চূড়ান্ত আবেদন করতে হয়।
সবচেয়ে বড় কথা হলো এই যে, যত আগে আবেদন করা যাবে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশী। অর্থাৎ বৃত্তি পাওয়ার জন্য জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যেই আবেদন সম্পন্ন করা দরকার। আবেদন গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অফিস প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। সুপারভাইজারের অফার লেটার পাওয়ার জন্য শুধু আপডেটেড সিভি ও রিসার্স প্রপোজাল ই-মেইলের সঙ্গে পাঠালেই চলবে। ই-মেইল কন্টেন্ট দশ লাইনের বেশী না হওয়ায় ভাল।
ইংরেজির পাশাপাশি কারো যদি চাইনিজ ভাষায় প্রাথমিক লেভেলের সনদও থাকে তার জন্য বৃত্তি পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত। অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক ব্যতিত অন্য শিক্ষকরা সাধারণত সুপারভাইজ করেন না। তাই তাদের নিকট ই-মেইল না পাঠানোই ভাল।
চীনা বৃত্তির মাসিক স্টাইপেন্ড একটু কম হলেও তুলানমূলক ভালো। কারণ, টিউশন ওয়েভার, আবাসন ও ইউটিলিটি সার্চ সম্পূর্ণ ফ্রি, খাবার ও যাতায়াত খরচ এত কম যে ইচ্ছা করলে অনেকেই টাকা সেভ করতে পারে। সুপার ভাইজার গবেষণা ছাড়া শিক্ষার্থীকে দিয়ে তার ব্যক্তিগত কাজ করান না। চীনারা বিদেশীদের অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। তবে দায়িত্বহীন শিক্ষার্থীদের তারা পছন্দ করেন না। তারা কাজে বিশ্বাসী, কথায় নয়। চাইনিজ ভাষা জানলে ওই দেশে সারাজীবন ওয়ার্ক ভিসায় কাজ করা ও বসবাস করা সম্ভব।
একটিমাত্র ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চীনের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের তথ্য জানা সম্ভব। চাইনিজ স্কলারশিপ কাউন্সিলের একটি ওয়েবসাইট আছে যা এখানে প্রযোজ্যI এই ওয়েব লিংকে প্রবেশ করলে যে ইন্টারফেস প্রদর্শিত হবে সেখানে কয়েকটি টাস্কবার আইকন পাওয়া যাবে। সকল প্রকার বৃত্তির তথ্য, ডিগ্রি প্রোগ্রামসমূহ, ও প্রদেশভিত্তিক সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংক এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। তাছাড়া এই লিংক অনুসরণ করে পছন্দের প্রোগ্রাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব পেজে প্রবেশ করে সকল তথ্য জ্ঞাত হয়ে আবেদন সম্পন্ন করা যাবে।
ওয়েবসাইটটিতে জানা যাবে কি কাগজপত্র লাগবে। যেমন: সর্বোচ্চ ডিগ্রির ভেরিফাইড অথবা নোটারাইজড সনদ (ভেরিফিকেশন হতে হবে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট শাখা হতে), একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (ভেরিফাইড অথবা নোটারাইজড), ও প্রি-এডমিশন লেটার। এছাড়া, রির্সাস প্রপোজাল, প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের এবস্ট্রাক্ট, আইএলটিএস সনদ (ফটোকপি), ও মূল ফিজিক্যাল এক্সামিনিশান রিপোর্ট (বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার কতৃর্ক হলে ভাল)।
বৃত্তি আবেদনের ফলাফল সাধারণত জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়। চীনের নর্থ-ইস্ট প্রদেশগুলো বেশী উন্নত। ওই সকল প্রদেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করেI তারা বেশী সংখ্যক বৃত্তিও প্রদন করে থাকে। বেইজিং, সাংহাই, চেজিয়াং, জিয়াংসু, গুয়াংতং, ছংশিং, শানতং, শিয়ামেন-এই প্রদেশগুলোতে বৃত্তি আবেদনের জন্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যের জন্য নিম্নোক্ত ওয়েবলিংক সার্চ করলেই যথেষ্ট-(www. china-admissions.com/). সুপারভাইজার যদি অফার লেটার দেয় এবং প্রি-এডমিশন লেটার পেয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আবেদন করতে পারলে ফুল স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম