চীনের আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হলো বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ নগর (The Forbidden City in Beijing)। একসময় এই নগরীতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল, তাই এর নাম হয় নিষিদ্ধ নগর। এখানে চীনের প্রাচীন স্থাপত্যবিদদের দ্বারা নির্মিত এই প্রাসাদটিতে চার হাজারেরও বেশি সুসজ্জিত কামরা রয়েছে। এসব কামড়ায় লাল এবং হলুদ রংয়ের কারুকার্য রয়েছে। এই প্রাসাদের ছাদ সোনা দিয়ে তৈরি। এটি ‘ইম্পেরিয়াল প্যালেস’ নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জটিল প্রাসাদ। কথিত আছে এখানে ৯৮০টি ভবন ও ৯৯৯৯টি কক্ষ আছে! মিং এবং ছিং সম্রাটদের থেকে শুরু করে ১৯১২ সালে চীনের শেষ সম্রাট পু ই পর্যন্ত এই প্রাসাদই ছিল সম্রাটদের বাসস্থান। বর্তমানে এই প্রাসাদটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
চীনে ভ্রমণের কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে সবার আগে ভেসে উঠে চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China)। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর এবং চীনের প্রতীক। প্রাচীরটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার। গড়ে এর উচ্চতা প্রায় ৬ থেকে ৮ মিটার এবং কিছু কিছু জায়গায় প্রায় ১৬ মিটার পর্যন্ত। চীনের এই প্রাচীরটি বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। প্রাচীন যাযাবর জাতি, বিশেষত, যাযাবর মঙ্গোলিয়ানদের থেকে বাঁচানোর জন্য চীনা সম্রাটরা এই প্রাচীর নির্মাণ করেন। চীন ভ্রমণে আসলে অবশ্যই দেখতে ভুলবেন না এই প্রাচীন আত্মরক্ষামূলক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শনটি।
এ ছাড়া আরও আছে: লাসায় অবস্থিত পোতালা প্রাসাদ, শাংহাই এর দ্যা বান্ড, ভিক্টোরিয়া হারবার, হুয়াংশান বা হলুদ পাহাড় (মাউন্ট হুয়াং), হাংচৌ এর ওয়েস্ট লেক, ল্যশান জায়ান্ট বুদ্ধ, হানি টেরেস, লংমেন গুহা, ইয়ুনগাং গুহা ইত্যাদি।
চীন বিশ্বের বড় দেশগুলোর মধ্য অন্যতম। আর জনসংখ্যার দিক দিয়ে চীন বিশ্বে প্রথম। দেশটি সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ। চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, নদী, সমুদ্রসহ আধুনিক নগরায়ন সারা বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আর তাই, চীন বিশ্ব পর্যটনের অন্যতম গন্তব্যস্থল। চলুন আমাদের সঙ্গে চীনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় ৫টি স্থান ঘুরে আসুন।
ছেংতু রিসার্চ বেজ অব জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং
চীনের জায়ান্ট পান্ডা শুধুমাত্র চীনা পর্যটকদের কাছেই জনপ্রিয় নয়, এই প্রাণীটি পৃথিবী জুড়ে শিশু থেকে শুরু করে সবার কাছে জনপ্রিয়। আপনি যদি পাণ্ডা সম্পর্কে না জানেন তবে আপনার জন্য বলছি, চীনের জায়ান্ট পান্ডা ভালুকের মত দেখতে সাদা কালো রঙের এক প্রকার প্রাণী। চীনের অনেক চিড়িয়াখানাতেই আপনি এদের দেখতে পাবেন। তবে সবচেয়ে বেশি জায়ান্ট পাণ্ডার দেখা মেলে সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু শহরে, যাকে জায়ান্ট পাণ্ডার হোমটাউন বলা হয়। এ শহরের উত্তরে অবস্থিত ছেংতু রিসার্চ বেজ অব জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং সেন্টারে প্রাকৃতিক পরিবেশে খুব কাছ থেকে এই কিউট প্রাণীটি দেখার সুযোগ আছে। ১৯৮৭ সালে মাত্র ৬টি বৃহৎ পাণ্ডা নিয়ে এই রিসার্চ সেন্টার পান্ডা ব্রিডিংয়ের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এই সেন্টারে ৮০টির মতো জায়ান্ট পাণ্ডা রয়েছে। এখানে এখন পর্যন্ত ১২৪টি জায়ান্ট পাণ্ডার জন্ম হয়েছে। এখানে আপনি ভলান্টিয়ার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে পান্ডাগুলোর কাছাকাছি যেতে পারেন এবং এদের জীবনধারণ ও বংশবিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
লি নদী
চীনের কুয়াংসি প্রদেশের কুইলিনে অবস্থিত লি নদী। লি নদী বিখ্যাত এর স্ফটিক স্বচ্ছ জল, শহরের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে যাওয়া এবং নদীর পাশের চমৎকার পাহাড়ের জন্য। এই লি নদী শিল্পীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বলা হয়, লি নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে চীনের চিত্রশিল্পীরা এবং কবিরা তাদের শিল্পকর্মের প্রেরণা পেয়ে থাকেন। ৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লি নদীটির কুইলিন এবং ইয়াংসুও এর মধ্যবর্তী স্থানটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর। নদীটির দু’পাশে চমকপ্রদ আড়াআড়ি পাহাড়, নলখাগড়ার বন, গ্রামগুলোর সুসজ্জিত চাষাবাদ এবং ঘন বাঁশ বাগান পর্যটকদের নজর কাড়ে। মেঘলা এবং রৌদ্রজ্জ্বল দিনে লি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। পর্যটকদের সুবিধার জন্য নদীতে ভেসে বেড়ানোর জন্য ছোট ছোট বাঁশের ভেলা এবং সুসজ্জিত নৌকা রয়েছে। পর্যটকরা তাদের পছন্দ মতো বাহনে চড়ে নদী ভ্রমণ করে থাকেন।
টেরাকোটা
১৯৭৪ সালে শ্যানসি প্রদেশের সিআন শহরের প্রান্তে সেখানকার কৃষকেরা খনন কাজের মাধ্যমে যে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি উন্মোচন করে তা নিঃসন্দেহে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার-দ্য টেরাকোটা আর্মি (The Terracotta Army)। প্রায় ২২০০ বছর ভূগর্ভস্থ সমাধি এই টেরাকোটা আর্মি। এটি চীনের প্রথম সম্রাট ছিন শি হুয়াং এর সমাধি। আসলে এই টেরাকোটা আর্মি জীবন্ত কোন সেনাবাহিনী নয়। সম্রাট ছিন শি হুয়াংয়ের মৃত্যুর পর স্থানীয় লিনথং জেলার কৃষকেরা সম্রাটের সম্মানার্থে এসব পোড়ামাটির সেনাবাহিনী তৈরি করেন। এখানে মানুষের মত দেখতে ৮০০০ সেনার মূর্তি আছে যেগুলো প্রায় মানুষের মতোই লম্বা। এই মূর্তিগুলোর একটির সাথে অন্যটির চেহারার মিল নেই। তাই নির্মাণের দক্ষতা দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। সেনার পাশাপাশি আরও রয়েছে ৫২০টি ঘোড়া, ১০০টির মত রথ এবং বেশকিছু বেসামরিক লোকজন। পোড়ামাটির এই সেনাবাহিনীতে সামরিক পদমর্যাদা দিয়ে সাজানো হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, প্রাচীন সামরিক বাহিনী যেভাবে সুসজ্জিত থাকতো, কৃষকদের তৈরি মূর্তিগুলোতে সেই রূপ দেওয়া হয়েছে।
রুবি/তৌহিদ