1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
চীনে বাড়ছে নারীদের আবাসিক ক্লাব, পুরুষ প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

চীনে বাড়ছে নারীদের আবাসিক ক্লাব, পুরুষ প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ঝেজিয়াং প্রদেশের এক গ্রামীণ কটেজে বসে কয়েকজন নারী কফির মগ হাতে ইনডোর গেম খেলছেন। নাম দেওয়া হয়েছে ‘কেকের কাল্পনিক দুনিয়া।’ এটি এমন এক আবাসিক কটেজ, যেখানে পুরুষদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নারীরা এখানে আসেন কয়েক দিনের জন্য, কাটান সময় নিজেদের মতো করে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনে এমন নারীবান্ধব আবাসিক ক্লাবের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

এই ধরনের কটেজে আসা নারীরা অন্য নারীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন। অনেক নারীই এমন নিরাপদ স্থানের খোঁজ করেন হয় একাকিত্ব দূর করতে, নয়রানি থেকে মুক্তি পেতে।

৪৩ বছর বয়সী ঝাং ওয়েনজিং, যিনি ওই কটেজে অবস্থান করছেন, এএফপিকে বলেন, ‘শুধু নারীরা আছেন—এমন পরিবেশ আমাকে নিরাপদ মনে করায়। আমরা নিজেদের মধ্যে সহজেই অনেক বিষয় শেয়ার করতে পারি।’ তার সঙ্গে সুর মেলান ২৮ বছরের ফাংইয়ান। তিনি জানান, ‘পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আমি অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি।’

চীনে বর্তমানে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট জিম, হোস্টেল, কো-ওয়ার্কিং স্পেসের চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে। নারীরা তাদের আর্থিক সক্ষমতা ব্যবহার করে মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথ খুঁজছেন।

‘কেকের কাল্পনিক দুনিয়া’-তে প্রথম দিন থাকার জন্য ভাড়া ৩০ ইউয়ান (৪ দশমিক ১৭ ডলার)। তবে চতুর্থ দিন থেকে ভাড়া বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ ইউয়ানে। এই কটেজের প্রতিষ্ঠাতা ৩০ বছর বয়সী চেন ইয়ানি, যিনি ‘কেকে’ নামেও পরিচিত। তিনি জানান, কর্মস্থলে পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে খারাপ অভিজ্ঞতা থেকেই এ ধরনের নারীবান্ধব আশ্রয়ের ধারণা আসে তার মাথায়।

চেন ইয়ানি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মাত্রার হয়রানির মুখোমুখি হয়েছি। এমনকি এমন পর্যায়েও গিয়েছিল যে কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তখন ভাবতে শুরু করি, একটি নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক জায়গা কেমন হতে পারে…যেখানে কোনো আতঙ্ক থাকবে না।’

এরপর সাংহাই থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে হাংঝোউয়ের শহরতলির একটি পুরোনো বাড়ি কিনে সংস্কার করেন তিনি। পরে ইনস্টাগ্রামে ঘোষণা দেন—এই স্থানটি কেবল নারীদের জন্য, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে ও নির্ভয়ে থাকতে পারবেন।

এএফপির প্রতিবেদকের সফরের সময় সেখানে ১১ জন নারী অবস্থান করছিলেন। কেউ এসেছেন ছুটির বিশেষ পরিবেশের খোঁজে, কেউ এসেছেন বিয়ে ও সন্তান নিয়ে আত্মীয়স্বজনের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন ও সামাজিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে।

চেন ইয়ানি জানান, চীনা পরিবারে নারীদের প্রায়শই দাদা-দাদি, সন্তান এবং গৃহস্থালির কাজ সামলাতে হয়। তার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের দায়িত্বও থাকে। ফলে এমন এক জায়গার প্রয়োজন, যেখানে কোনো দায়িত্ব ছাড়াই তারা কেবল নিজেদের মতো থাকতে পারবেন।

২৯ বছরের ইউয়ান জিয়াওচিয়ান বলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ার ফলে নারীরা এখন নিজেদের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারছেন। তাদের চাহিদা পাল্টাচ্ছে, আর সে কারণেই এমন নারীবান্ধব আবাসিক স্থানের চাহিদা বাড়ছে।

চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘কেকের কাল্পনিক দুনিয়া’র মতো ক্লাবের সংখ্যা বাড়ছে। ঝেজিয়াং প্রদেশের শিউক্সিতে ইয়াং ইউন চালু করেছেন ‘হার স্পেস’। ঐতিহ্যবাহী আসবাবপত্র ও দেয়ালে ক্যালিগ্রাফি সমৃদ্ধ এ স্থান দেখতে অনেকটা বুটিক হোটেলের মতো।

ইয়াং ইউন বলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল এমন একটি জায়গা তৈরি করা, যেখানে শুধুমাত্র নারীরাই থাকতে পারবেন। চাকরি হারানো, স্বামীর সঙ্গে বিরোধ, বাবা-মায়ের মৃত্যু কিংবা শহরের জীবনযাপনের ক্লান্তি—যেকোনো পরিস্থিতিতে একজন নারী এখানে এসে উষ্ণতা ও প্রশান্তি খুঁজে পাবেন।’

তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১২০ জন নারী ৩ হাজার ৯৮০ ইউয়ান ফি দিয়ে সদস্যপদ নিয়েছেন। ইয়াং বলেন, ‘তারা আসেন কি না, সেটি মূল বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই স্থানটির অস্তিত্ব তাদের মানসিক শক্তি জোগায়।’

বেইজিংয়ের অল-উইমেন কালচারাল স্পেস ‘হাফ দ্য স্কাই’-এর প্রতিষ্ঠাতা লিলিথ জিয়াং মনে করেন, এ ধরনের সম্প্রদায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজে একটি বড় শূন্যতা পূরণ করছে। তিনি বলেন, ‘পুরুষদের মেলামেশার অনেক সামাজিক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নারীদের জন্য তা খুব সীমিত। দীর্ঘ মেয়াদে এই বিকল্প স্থানগুলো তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com