1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
চীনে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা, কতটা সুফল মিলবে
বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

চীনে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা, কতটা সুফল মিলবে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

চীন বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। তবে চিকিৎসার জন্য এখনো পর্যন্ত খুব একটা বাংলাদেশি নাগরিক চীনমুখী হয়েছেন—এমন তথ্য তেমন পাওয়া যায় না। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই চিত্র বদলাচ্ছে। এবার চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিং শহরের চারটি সরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য এবং ইতিমধ্যেই সেসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শুরু করেছেন অনেকে।

চীনে চিকিৎসা কতটা বাংলাদেশিদের কতটা টানবে, জনপ্রিয় হবে—তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞ মেডিকেল ট্যুরিজম ও ট্রাভেল এজেন্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি বর্তমান সুবিধাগুলো অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী চীনে যাবেন চিকিৎসা নিতে।

চীনের মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করেন ভিনদেশি লিমিটেডের কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসী। তিনি আকাশযাত্রাকে বলেন, “প্রথমত, বাংলাদেশি রোগীদের চীনে চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ বাড়বে তিনটি কারণে— সর্বাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি: চীনে এমন অনেক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা এখনো অনেক উন্নত দেশেও চালু হয়নি। দ্বিতীয়ত, দ্রুত ভিসা সুবিধা-আবেদন করলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই অনুমোদন মিলছে মেডিকেল ভিসা । তৃতীয়ত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরের তুলনায় চীনে চিকিৎসা খরচ অনেক কম। ফলে চীনে চিকিৎসার ভালো একটি সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে।”

বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল ভারত। সহজ ভিসা ও সাশ্রয়ী খরচ ছিল এর প্রধান কারণ। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক কারণে ভারতীয় ভিসা দেওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশিরা থাইল্যান্ডের দিকে ঝোঁকেন, কিন্তু সেখানেও অনলাইন ভিসা চালুর ফলে সময় লাগে ৪৫-৬০ দিন, এবং ভিসা প্রত্যাখ্যানের হারও বেড়ে যায়। এরপর অনেকেই মালয়েশিয়ায় চেষ্টা করেন। ভিসা পেতে তুলনামূলক সহজ হলেও খরচ বেশি হওয়ায় তা জনপ্রিয় হয়নি। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা ভালো হলেও খরচ অনেক বেশি। ফলে বাংলাদেশি রোগীদের সামনে চিকিৎসার গন্তব্য সীমিত হয়ে পড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে চীন হয়ে উঠতে পারে এক নতুন ও কার্যকর গন্তব্য। দ্রুত ভিসা, উন্নত চিকিৎসা ও তুলনামূলক কম খরচ—সব মিলিয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।চট্টগ্রামভিত্তিক ট্রেফেল ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের ম্যানেজার মোহাম্মদ মামুন বলেন, “ভারত ও থাইল্যান্ডের ভিসা জটিলতায় রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। ভারত মেডিকেল ভিসা কষ্টসাধ্য আর থাইল্যান্ডের মেডিকেল ভিসা পেতে ৪৫ দিন লাগছে। এখন চীনে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টায় রোগী ও একজন অ্যাটেনডেন্টের ভিসা পাওয়া যাচ্ছে, যা সবার জন্য বড় সুযোগ।”

তিনি জানান, ঢাকা থেকে কুনমিং যেতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট, এবং আসা-যাওয়ার টিকিটের দাম ৪৯ হাজার টাকা। তুলনায়, ঢাকা-ব্যাংকক ফ্লাইটে সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, আর টিকিট ৪০ হাজার টাকা। ভিসা ফি প্রায় একই।

চীন মেডিকেল ভিসাপদ্ধতি অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। বাংলাদেশি রোগীদের সুবিধার্থে ঢাকা দূতাবাসে ‘গ্রীন চ্যানেল’ চালু করেছে। এখন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ব্যাংক ডিপোজিট সার্টিফিকেট ও রোগীর অ্যাটেনডেন্টের রক্তের সম্পর্ক প্রমাণের গ্যারান্টিপত্র ইস্যু করছে এবং ভিসার জন্য আবেদন করতে পারছে। আগের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন নেই। আর অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও ঢাকায় চীনা দূতাবাসে মেডিকেল ভিসার জন্য আলাদা কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে, যাতে রোগীরা দীর্ঘসময় অপেক্ষা না করে সরাসরি আবেদন জমা দিতে পারেন।

তবে চীনে নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারের পরামর্শের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন। জান্নাতুল ফেরদৌসী জানান, রোগীর প্রেসক্রিপশন, টেস্ট রিপোর্ট ও পাসপোর্ট কপি জমা দিলে তারা তা কুনমিংয়ের নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার পরিকল্পনা ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার পর তারা ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করেন। সাধারণত ১৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে মেয়াদি ভিসা দেওয়া হয়।

ফ্লাইট থেকে শুরু করে হাসপাতালে পৌঁছানো পর্যন্ত সহায়তা দেয় ট্রাভেল এজেন্সির দল। ভাষাগত সমস্যার কারণে একজন গাইডও নিযুক্ত করা হয়। কুনমিংয়ে হালাল খাবারের রেস্টুরেন্ট থাকায় বাংলাদেশি রোগীরা খাওয়া-দাওয়াতেও কোনো অসুবিধায় পড়েন না-যোগ করেন জান্নাতুল ফেরদৌসী ।

বাংলাদেশি রোগীদের জন্য কুনমিং শহরে চীন সরকারের নির্ধারিত হাসপাতালগুলো হলো, ইউনান প্রদেশের দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল, দ্য ফার্স্ট অ্যাপ্লাইড অব কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ইউনান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল এবং ইউনান ক্যান্সার হাসপাতাল।

রোগী ও বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতাও বলছে ইতিবাচক কথা। গত মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি রোগী, চিকিৎসক ও ট্রাভেল এজেন্সির একটি প্রতিনিধি দল কুনমিং সফর করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্য, জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হায়দার হোসেন কুনমিংয়ে হৃদরোগ এবং ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসা করিয়েছেন। তিনি বলেন, “চীনের চিকিৎসা ব্যবস্থা, রোগী ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নত এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। ঢাকায় যেখানে হার্টের চিকিৎসায় খরচ হতো ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা, সেখানে চীনে বাসস্থান ও খাবারসহ সব মিলিয়ে আমার চিকিৎসা খরচ হয়েছে মাত্র ১,০০০ ডলার (বিমান ভাড়া ছাড়া)।”

অন্যদিকে, প্রোস্টেট সমস্যা নিয়ে চিকিৎসায় চীন সফরকারী আজিজুল হাকিম জানান, “আমি জার্মানি ও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়েছি, তাই তুলনা করতে পারি। চীনে আমার চিকিৎসায় খরচ হয়েছে মাত্র ১,১০০ ইউয়ান — প্রায় ১৭,০০০ টাকা। থাইল্যান্ডে একই চিকিৎসায় খরচ হতো প্রায় ৩ লাখ টাকা।”

চিকিৎসা পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ‘সিওক হেলথকেয়ার’-এর সিইও এমএম মাসুমুজ্জামানের মতে, “চীনা হাসপাতালগুলো আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতিকে সমন্বিতভাবে প্রয়োগ করে। উদাহরণস্বরূপ, তীব্র পিঠে ব্যথায় আক্রান্ত একজন ক্যান্সার রোগী ক্যান্সারের ঔষধের সাথে হস্তক্ষেপ না করে চিকিৎসার অংশ হিসেবে আকুপাংচার পেতে পারেন। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা।”

‘ট্র্যাক মেডি সার্ভিসেস’-এর চিকিৎসক ও সিইও ডা. রাশেদুল হাসান বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে চীনের চিকিৎসা প্রযুক্তি এমনকি থাইল্যান্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে জিন থেরাপি, রোবোটিক সার্জারি ও পার্সোনালাইজড মেডিসিনে চীনের অগ্রগতি এখন বিশ্বমানের।”

সরকারি হিসাবে, ২০২৩ সালে বিদেশে চিকিৎসা নিতে গেছেন প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি। তাদের বেশিরভাগই গিয়েছেন ভারতে। এখন সেই সংখ্যা চীনের দিকে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com