ভারতের একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ পদে মোটা মাইনের চাকরি করতেন তিনি। কিন্তু ৫০ বছরে বয়সে কেবল ব্যবসা করার তাগিদে সেই চাকরি ছেড়ে গড়ে তোলেন প্রসাধনী সামগ্রী প্রতিষ্ঠান ‘নাইকা’। এরপরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, বর্তমানে তিনি ভারতের অত্যতম শীর্ষ ধনী নারী। তিনি আর কেউ নন, ফাল্গুনী নায়ার।
বড় ব্যবসায়ী বিষয়টি শুনলে শুরুতেই মাথায় যে বিষয়টি আসে সেটি হচ্ছে পারিবারিক সম্পত্তি বা অল্প বয়সে ব্যবসায়ে হাতেখড়ি। কিন্তু ফাল্গুনী নায়ারের গল্পটি এর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
ভারতের স্বনির্মিত ধনকুবের নারীদের মধ্যে একজন হচ্ছেন তিনি। স্বনির্মিত বলতে কোনোও পারিবারিক সম্পত্তি নয়, সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা সম্পদকে বোঝায়।
১৯৬৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মহারাষ্ট্রের মুম্বাইতে এক গুজরাটি পরিবারে তার জন্ম। তার বাবাও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।
তিনি মুম্বাইয়ের সিডেনহাম কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। আর এমবিএ করেন দেশটির স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) থেকে।
শুরুতে এএফ ফার্গুসন অ্যান্ড কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে ১৯৯৩ সালে তিনি যোগ দেন কোটাক মাহিন্দ্রা গ্রুপে। এরপরে কিছু সময়ে তিনি লন্ডন ও নিউইয়র্কেও কাজ করেছেন। কিন্তু ২০০১ সালে ভারতে ফিরে আসেন ফাল্গুনী।
২০০৫ সালে তিনি কোটাক মাহিন্দ্রা ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন। পরে ২০১২ সালের এপ্রিলে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন প্রসাধনী সামগ্রীর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘নাইকা’। সে সময়ে তিনি তার নিজের সঞ্চয়ের ২ মিলিয়ন ডলার স্টার্টআপটিতে বিনিয়োগ করেন। এরপরে নায়ারকে আর পেছনের ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে নাইকা অনলাইনে ৪ হাজার ৫০০টিরও বেশি পণ্য বিক্রি করে এবং ভারতজুড়ে তাদের ১০০টিরও বেশি স্টোর রয়েছে।
ঠিক এমন সময়ে ভারতের বাজারে নাইকার আর্বিভাব হয় যখন দেশটিতে নারীদের অনলাইনে প্রসাধনী সামগ্রী কেনার কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে যখন নাইকা চালু হয়, তখন গ্রাহকরা অনলাইনে প্রসাধনী সামগ্রী কেনার সুযোগ পান।
ভারত টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইকা’ই হচ্ছে ভারতর স্টক এক্সেচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়া একজন নারী দ্বারা পরিচালিত প্রথম কোনো কোম্পানি।
দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টার্টআপের শুরুর দিকে ছোট অফিস ও কম সংখ্যাক কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে ব্যয় যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করেছেন ফাল্গুনী। এতে তিনি লোকসানের পরিমাণ কমাতে সক্ষম হন। পাশাপাশি অহেতুক বড়সড় ছাড়, ফ্রি ডেলিভারির মতো অফারেরও পক্ষপাতী নন তিনি।
ফাল্গুনী নায়ার মনে করেন, এরকম অফার দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে ক্রেতা টানলেও পরে খরচ বাড়াতে বাধ্য হয়।
এছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে শেয়ারবাজারে ভালো করতে পারেনি, নেই তুলনায় নাইকা আইপিওতে দুর্দান্ত সফল। এরপরে প্রতিষ্ঠানটির মোট মূল্য ৫০ হাজার কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে রয়েছে কোম্পানিটির পারফর্ম্যান্স। শেয়ারবাজারে প্রবেশের আগের বছরে লাভজনক সংস্থা হয়ে ওঠে নাইকা। ২০১৮-১৯-এ সংস্থার মোট রাজস্ব আয় ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি রুপি।
ভারতীয় এই উদ্যোক্তা ২০২২ সালে ফোর্বসের ভারতের ১০০ ধনীর তালিকায় ৪৪তম স্থানে জায়গা করে নেন। ফোর্বসের দ্য রিয়াল টাইম বিলিয়নিয়ার তালিকায় ফাল্গুনী নায়ারের সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
তিনি এখনও কোম্পানিটির সিইও। তার স্বামী সঞ্জয় নগর কোহলবার্গ ক্রাভিস রবার্টস ইন্ডিয়ার সিইও। এই দম্পতির দুই সন্তান- অদ্বৈত নায়ার ও আঞ্চিত নায়ার নাইকা’তেই কাজ করেন।
সূত্র: ডিএনএ, হিন্দুস্তান টাইমস, ভারত টাইমস
Like this:
Like Loading...