চারিদিকে গাড় সবুজ বন নস্তিব্দতা ভেঙ্গে পাখির কলতানে সে এক স্বপ্নের জগৎ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট ভ্রমন চিরদিন আপনার স্বরণীয় হয়ে থাকবে। বর্ষা ও শরৎকালে সুন্দরবনের সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। ঝকঝকে আকাশ ও তীব্র রোদের মাঝে মুহুর্তেই চলে আসতে পারে বৃষ্টি। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার উধাও। সুন্দরবনে রোদ বৃষ্টির খেলা দেখা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই সৌন্দর্য বলে বোঝানো যায় না, শুধু উপভোগ করা যায়।
প্রকৃতির অপরূপ বিস্ময় এই ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে সৌন্দর্য ধরা পড়ে বর্ষা ও শরৎ কালে। যারা রোমঞ্চপ্রিয় অজানাকে জানার আগ্রহ যাদের প্রবল, তাদের ডেস্টিনেশন হতে পারে সুন্দরবন। প্রতিটি মুহুর্তে যেন এই বন রং বদলায়। বন বিভাগের বেধে দেওয়া নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিরাপদে ভ্রমন করা যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শরনখোলা রেঞ্জের কটকা। এটি বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত।
সহজেই হাটা যায় এমন কাঠের তৈরি একটি পথ আছে এখানে। সিডরের ধ্বংসলীলার চিহ্ন এখনো দেখা যায় এই পথের শেষ মাথায়, আছে একটি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার যেখান থেকে পুরো বনটাই দেখা যায়। এখান থেকে জামতলা বিচে যাওয়া যায়। জঙ্গলের কাছেই সমুদ্র সৈকত তাই এখানে গেলে বিচটি উপভোগ করতে ভুলবেন না। তবে সাবধান এখানে জঙ্গলের মধ্যে বাঘ আছে। তাই ট্যুর অপারেটর বা দক্ষ গাইড ছাড়া এখানে একা একা চলাফেরা করবেন না।
কচিখালি আর একটি আকর্ষণীয় স্পট। এটিও বঙ্গেপসাগরের তীরে। বর্ষাকলে প্রবল ঢেউয়ের কারনে পর্যটকবাহী কোন জাহাজ কচিখালি যেতে চায় না। শরৎকালে অর্থ্যাৎ সেপ্টেম্বরের মাঝামঝি সময় থেকে আবার মুখর হয়ে উঠে পর্যটকদের পদচারনায়। জামতলা বিচের মতো কচিখালিও আকর্ষণীয়। এখানে চিত্রা হরিন, বন্য শুকর, অজগর, লোনা পানির কুমির, বন মোরগ, বেঙ্গল কোবরাসহ অসংখ্য পাখির দেখা মিলবে। চিত্রা হরিন খুব কাছ থেকে দেখতে পাবেন।
মোংলার খুব কাছে পর্যটকদের জন্য বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ইকো টুরিজম কেন্দ্র। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য চমৎকার ব্যবস্থা আছে। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে চারি পাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় এখানে। প্রথমত সংঘবদ্ধভাবে এখানে ঘুরতে হয়। উজ্জল জামা কাপড় পরিধান করা নিষেধ। বনে নিঃশব্দে প্রবেশ করতে হবে। কোন প্রকার শব্দ হলে বন্যপ্রানী টের পেয়ে যায়।
কোন প্রকার পারফিউম বা সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না কারন প্রানীর ঘ্রানশক্তি ভিষন প্রবল। জঙ্গলের ভিতর গেলে নিঃশব্দে হেটে চারিদিকে চোখ রাখুন বোঝার চেষ্টা করুন কোথাও কোন কিছু নড়াচড়া করছে কি না? বনে ঘোরাঘুুরি করার জন্য ফুলহাতা টি শার্ট বা শার্ট এবং ফুল প্যান্ট পরিধান করা ভালো। পায়ে রাবারের বুট, মেয়েরা হালকা রঙ্গের সেলোয়ার কামিজ বা টি শার্ট ও ট্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন। শাড়ী পরে বনে না ঢোকাই ভাল। সব সময় সাথে একটি গামছা এবং বর্ষাতি রাখতে হবে। সাথে পানির বোতল খুবই জরুরী । সুন্দরবনের মতো দুর্গম স্থানে যাওয়ার জন্য ট্যুর অপারেটরদের সাহায্য নিতে হবে।