শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন

ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

প্রকৃতির সৌন্দর্যের মোহে ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা বরাবরই মোহগ্রস্ত। ব্যস্ততা, পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, হতাশা, চাপ, দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রেখে মনের প্রশান্তি, সজীবতার জন্য ভ্রমণের বিকল্প আর কি হতে পারে। হাতে সময় নিয়ে ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি থেকে।

পায়ের নিচে মেঘের খেলা আর সবুজ চাদর বিছানো ভূমির গল্প আমরা শুনি। কিন্তু বাস্তবে কি সেই কল্পনার দেখা মেলে? কিংবা সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য কি কখনো হয়ে ওঠে? জ্বি, হয়ে ওঠে অবশ্যই। আমরা সাজেক ভ্যালির কথা বলছি।

কল্পনা আর রোমাঞ্চের সবগুলির সমহ্নয় এক হয়ে ধরা দেবে আপনার সামনে। সেটি দেখার জন্য আপনি ধবধবে সাদা মেঘেদের রাজ্য থেকে ঘুরে আসতে পারেন। যেখানে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে মেঘেরা ঝিমোয়।

আপনার স্মৃতির ডায়েরিতে যুক্ত হবে এমন সব অভিজ্ঞতা যা কখনোই ভোলার নয়। ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি কারণ, এই সময়ে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের জায়গা সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley)।

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি, বাংলাদেশের একটি বড় ইউনিয়ন হিসাবে সমধিক পরিচিত। সাজেকের মোট আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গমাইল।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাজেকের উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট। সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও কিন্তু ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থেকে সাজেক যাওয়ার দূরত্ব কম হয় এবং যাতায়াতও খুবই সহজ।

খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। অন্যদিকে দীঘিনালা থেকে সাজেকের দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার পথ।

সাকেজের অবস্থান

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন অঞ্চল। সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরে ভারতের মিজোরাম সিমান্তে অবস্থিত।

সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত, যার আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গমাইল। এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুড়া, দক্ষিণে রাঙ্গামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা অবস্থিত।

সাজেকের ইতিহাস

সাজেক রুইলুইপাড়া, হামারিপাড়া এবং কংলাক পাড়া, এই তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত একটি অঞ্চল। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত আর কংলাক পাড়া ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে থাকে। রাঙামাটির অনেকটা অংশ জুড়েই দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। এই জন্য সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়ে থাকে।

সাজেকে সর্বত্র তুলোর মতো মেঘেদের আনাগোনা দেখা যায়। চারপাশে পাহাড় আর সবুজে ঘেরা এক মায়াপুরি। এখান থেকে দুর্দান্ত সূর্যোদয় এবং ক্লান্ত সূর্যাস্তের দেখা মেলে। সাজেকের রুই-লুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়-এ যাওয়া যায় খুব সহজে।

কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা চোখে পড়ে।

এখানে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উপজাতি অধিবাসীদের নানা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির নানা উপকরণ উপভোগ করা যায়।

কি আছে সাজেক ভ্যালিতে

সাজেকের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ভৌতিক পাহাড়, সাদা তুলোর মত গা ছোঁয়া মেঘেদের কথোপকথন, উদাস পথিকের মতো মেঘেদের ছুটে চলা একজন রসকষহীন মানুষকেও মুগ্ধ করবে।

সাজেক এমন একটি জায়গা, যেখানে প্রকৃতির সবগুলি রূপ এক জায়গায় এসে ধরা দেয়। প্রকৃতির এই আশ্চর্য্যজনক জায়গায় এক দিনে তিনটি রূপ ধারণ করে।

ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি

কখনো বা খুব গরম অনুভূত হতে পারে আবার একটু পরেই হঠাৎ কোথা থেকে ঝেকে বসবে ঝুম বৃষ্টি। আবার একটু পরেই ঘন মেঘের চাদরে ঢেকে যাবে চারপাশ। প্রাকৃতিক এমন নিসর্গ আর তুলোর মত মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ির খেলা মোহাবিষ্ট করে ফেলবে আপনাকে।

পর্যটকদের জন্য সাজেকের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কংলাক পাহাড়। কঙ্কাল পাহাড়, সে এক অভূতপূর্ণ দৃশ্য। কুয়াশায় যখন চারপাশ ঢেকে যায়, তখন মনে হতে পারে যেন বিশালকায় এক ভৌতিক দৈত্য দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে। ভোর বেলায় কঙ্কাল পাহাড়ের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

সাজেক ভ্যালির অন্যতম আকর্ষণ সাজেকের শেষ গ্রাম কংলাক পাড়া লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। কংলাক পাড়া থেকেই কর্ণফুলী নদী উৎপত্তিস্থল শুরু এবং তা ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়।

যে কোন পর্যটক চাইলে রুইলুই পাড়া থেকে দুই ঘন্টা ট্রেকিং করে প্রকৃতির এক মনোরম কমলক ঝর্ণা দেখে আসতে পারেন। সুন্দর এই ঝর্ণাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা বা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামেও পরিচিত।

সাজেক এর সূর্যোদয়

সাজেক, যেন এক বিখ্যাত শিল্পীর তুলিতে আঁকা দৃষ্টিনন্দন এক ছবি। মাস, বছর, দশক যায় কিন্তু সাজেক থেকে যায় চিরযৌবনা। যে কেউ সাজেকে গেলে অবশ্যই ভোর দেখাটা মিস করলে কিছুই দেখা হবে না। মেঘেদের নয়নাভিরাম অপূর্ব এক দৃশ্য তৈরি হয় ভোরে।

আর সূর্যোদয় যেন রূপকথার সেই বিরাটকায় এক চোখা রাক্ষসের পিটপিটে লাল চোখ। এই জন্যে আপনাকে খুব ভোরে উঠে চলে যেতে হবে হ্যালিপ্যাডে, সেখান থেকেই দেখা মিলবে আপনার কাঙ্খিত সেই সূর্যোদয়ের।

বিকেলে চলে যেতে হবে কোন উঁচু জায়গায়। সূর্যাস্তের মোহনীয় দুর্দান্ত রঙ্গিন রূপ আপনাকে বিমোহিত করবেই। সন্ধ্যার পর সাজেকের পরিষ্কার আকাশে দেখা মিলকে খই ফোটা মিলিয়ন তারার মেলা।

প্রাণ জুড়ানো সেই দৃশ্য আপনার প্রাণ জুড়িয়ে দেবে। আকাশ খুব বেশি পরিস্কার থাকলে এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে দেখা হয়ে যেতে পারে কোন মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের সাথে।

সাজেক আসলে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশ এবং আদিবাসীদের যাপিত জীবনের নানা অনুসঙ্গ। সরল জীবনের আদিবাসীদের জীবনবোধ এবং তাদের কৃষ্টি কালচার আপনার কৌতহলী মনকে ভরিয়ে দেবে।

আর হাতে সময় থাকলে সাজেক ভ্যালি থেকে ফেরার পথে ঢু মেরে আসতে পারেন হাজাছড়া প্রাকৃতিক ঝর্ণা, যা আপনাকে দুর্দান্ত আনন্দ দেবে। দেখে আসতে পারেন দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ এবং দীঘিনালা বনবিহার।

ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সাজেকের রূপের তুলনা একমাত্র সাজেক। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকা সাজেক যেন মায়াময় এক জগত। সাজেক বছরের যে কোন সময় মানে সারা বছরই ভ্রমণ করা যায়। তবে জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে সাজেকের চারপাশে মেঘেরদের আনাগোনা বেশি থাকে।

সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে সাজেক যাতায়াত খুবই সহজ। প্রথমেই খাগড়াছড়ি আসতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দুরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।

নিজস্ব গাড়ি না থাকলে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরের কাছে থেকে বিভিন্ন ধরণের গাড়ি ভাড়া নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন।

সাজেক রিসোর্ট

সাজেক ভ্যলিতে অনেক রিসোর্ট আছে। তাদের মধ্যে রুন্ময় রিসোর্ট আর আলো রিসোর্ট আপনার পরিবারসহ থাকার জন্য যথেষ্ট মানসম্পন্ন। সিঙ্গেল বা বন্ধুবান্ধবসহ ইমানুয়েল রুইলুইপাড়া ক্লাব হাউজ রিসোর্টে থাকা সুবিধাজনক।

বন্ধু বান্ধব বা যাদের থাকা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যাথা নেই তাদের জন্য পারফেক্ট হবে। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই রিসোর্টগুলোতে রুম খালী আছে কিনা তা ফোন করে বুকিং দিয়ে গেলে সুবিধা হবে।

ওখানে রিসোর্টগুলোতে বললে আপনাকে পছন্দমত রান্না করে দিবে সেক্ষেত্রে প্রতিবেলা প্রতিজন ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে । তবে যাবার দিন আগে ফোন করে খাবারের কথা বলে রাখলে তারা খাবারের ব্যবস্থা করে রাখারও বন্দোবস্ত থাকে।

পর্যটন মোটেল

খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে। একটু খোঁজ নিলেই হাতের কাছে পেয়ে যাবেন । খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলও থাকতে পারেন, এটি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলেই একটু পরে পরবে।

মোটেলের সব কক্ষই ২ বিছানার । ভাড়াঃ এসি ২১০০ টাকা, নন এসি ১৩০০ টাকা । মোটেলের অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে। কাজেই হাতে সময় থাকলে কিংবা ছুটিতে ঘুরে আসুন সাজেক ভ্যালি থেকে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com