ভৌগলিক সৌন্দর্যে বৈচিত্রপূর্ণ মালয়েশিয়ায় রয়েছে নানা সংস্কৃতি ও জীবনধারা। পেনাংয়ের অল্ড জর্জ টাউন, মালাক্কার ঐতিহাসিক অঞ্চল পরিদর্শন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমূহে ভ্রমণ এবং বার্নোর ১৩০ মিলিয়ন বছর পুরনো বনে সময় কাটাতে ভ্রমণ পিপাসুরা মালয়েশিয়া পছন্দ করেন। নাতিশিতোষ্ণ আবহাওয়ার কারণেও অনেকে মালয়েশিয়ায় ছুটি কাটাতে যেতে চান।
বাংলাদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে মালয়েশিয়া অন্যতম পছন্দের জায়গা। মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের রেল ও সড়ক যোগাযোগ নেই। তাই মালয়েশিয়ায় যেতে চাইলে আপনাকে আকাশপথেই যেতে হবে। আপনাদের জন্য হালট্রিপ দিচ্ছে এয়ার টিকেট ও হোটেল বুকিং এর সুবিধা।
মালাক্কা সিটি, মালাক্কা
মালাক্কা প্রদেশের রাজধানী মালাক্কা সিটি ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে খুবই সমৃদ্ধ। এটি ২০০৮ সালে ইউনেস্কার কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। এক সময়ের এই উপনিবেশিক শহরের স্থাপত্য শৈলী, খাবার ও রাতের ফুটপাতের বাজারের জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণ করে। এই ঐতিহাসিক শহর শুধুমাত্র পর্তুগীজ ও ডাচদের উপনিবেশের জন্যই পরিচিত নয়, পঞ্চদশ শতকের সুলতানী আমলের সময়কার সংস্কৃতিকে মালয় সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ বলা হয়। মালাক্কার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল সেইন্ট পল চার্চ নামের দূর্গ। যা ডাচ গভর্নরের বাসভূমিও ছিল।
জর্জ টাউন, পেনাং
মালয়েশিয়ায় ভ্রমণকারীদের কাছে পেনাং সবসময়ই আকর্ষণের শীর্ষে থাকে। পিনাং নামের একটি গাছ থেকে পেনাং শহরের নামকরণ করা হয়েছে। পিনাং গাছ পাম গাছের মতো দেখতে। এটি মূল ভূমি ও দ্বীপ এই দুই ভাগে বিভক্ত। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় জর্জ টাউন পড়েছে দ্বীপাঞ্চলে। জর্জ টাউন যেন এক উন্মুক্ত জাদুঘর। ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকা এ অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের অসংখ্য ভবন, চার্চ ও দুর্গ রয়েছে। এখানে পথে পথে ঘুরলে অনেক ঐতিহ্যবাহী দোকান চোখে পড়বে। যার প্রত্যেকটির রয়েছে নিজস্ব শৈলী ও নকশা। এছাড়া এখানে পথে পথে পথচিত্র ও দেয়ালে দেয়ালে দেয়ালচিত্র চোখে পড়ার মতো। ঐতিহাসিক নানা মন্দির, নামকরা ফুডকোর্ট, মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় কফিশপের কারণেও পেনাং পর্যটকদের পছন্দের বড় কারণ।
দ্য পারহেন্তিয়ান্স, তারেংগানু
দক্ষিণ চীন সাগরের তারেংগানু উপকূলে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপমালা মালয়েশিয়ার পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এ প্রবাল ঘেরা দ্বীপপুঞ্জ ছোট ও বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এ দ্বীপপুঞ্জব্যাপি সাদা বালি, স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ অগভীর পানি এই দ্বীপপুঞ্জকে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে। গ্রীষ্মন্ডলীয় স্বর্গ হিসেবে খ্যাত এই দ্বীপপুঞ্জে স্কুবা ডাইবিং, স্নোরকেল, ক্যানোয়িং এর মতো সামুদ্রিক বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে যেতে চাইলে মার্চ-অক্টোবরের দিকে যাওয়া যাবে না। কারণ এসময় সব হোটেল কিংবা গেস্ট হাউজগুলো বন্ধ থাকে।
দামুন ভ্যালি, সাবাহ
দামুন ভ্যালি ইকো-ট্যুরিজম ও বনভূমির জন্য মালয়েশিয়ায় ভ্রমণের জন্য অন্যতম সেরা জায়গা। এটি ১৩০ মিলিয়ন বছরের পুরনো নিম্নভূমিতে অবস্থিত। এ বনভূমিতে অবিশ্বাস্য রকমের জীব-বৈচিত্র রয়েছে। ৪৩৮ বর্গকিলোমিটারের এ বনাঞ্চলে ১০০ প্রজাতিরও বেশি বন্য প্রাণী ও তারও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এটিকে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের আভাসভূমিও বলা হয়। পর্যটকদের ভাগ্য ভাল হলে এখানে ওরাওওটাং, বেঁটে হাতি, ধুসর চিতার দেখা পেয়ে যেতে পারেন। তবে এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল জনবসতি না থাকায় এর পরিশুদ্ধ পরিবেশ। জঙ্গলে ঘোরাফেরা, নাইট সাফারি ও প্রত্নতাত্তিক কাদাজান-দাসুন সমাধিতে যাওয়ার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ ভ্রমণ গাইডের সহায়তা নিতে হবে।
আলোর সেতার, কেদাহ্
যেসব পর্যটক মালয়েশিয়ার কেদাহ্ প্রদেশে ভ্রমণ করেন তাদের অধিকাংশই মূলত লংকায়িততে তাদের সময় কাটান। কিন্তু সেখান থেকে মোটামুটি ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খুবই আকর্ষণীয় দ্বীপ রয়েছে যা আলোর সেতার নামে পরিচিত। আলোর সেতারে আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে, জহির মসজিদ, বড় ঘড়িওয়ালা ভবন, রয়েল হল এবং সুলতান জাদুঘর। পর্যটকরা চাইলে এখানে ২৫০ মিলিয়ন বছরের পুরনো, ৭১৫ ফুট উচ্চতার চুনাপাথরের পাহাড়ও দেখতে পারবেন। এখানকার কুয়ালা কেদাহে্ পর্যটকরা ১৭ শতেকর ভগ্নপ্রায় দুর্গ দেখতে পারেন। যা উত্তর মালয়েশিয়ার সবেচেয়ে পুরনো দুর্গ।
কোটা কিনাবালু, সাবাহ্
কোটা কিনাবালু, মালয়েশিয়ার সাবাহ্ প্রদেশের রাজধানী। এটি সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় না হলেও এর সব শপিং মল, কমলা রঙের বালু দিয়ে তৈরি বাড়ি, ১০ মিনিটের দূরত্বের দ্বীপ, ভাসমান মসজিদের কারণে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করে থাকেন। এখানকার তেনজাং অরু বিচের সুর্যাস্ত খুবই দর্শনীয়। এছাড়া লিকাস উপসাগরের উপকূল ও দ্বীপের পাথরের উপর হাটাহাটিও পর্যটকরা উপভোগ করেন। এখানকার টেংকু আব্দুল রহমান মেরিন পার্কে সৈকত, স্নোরকেলিং ও অবকাশযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। শহর থেকে অল্প দূরত্বে বন ভ্রমণেও যেতে পারেন।
আইপোহ্, পেরাক
আইপোহ্, মালয়েশিয়ার পেরাক প্রদেশের রাজধানী। বাগান বিলাসের শহর খ্যাত আইপোহ্ শহরের চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো এবং এর চুনাপাথরের পাহাড়গুলো সত্যি আকর্ষণীয়। এ শহরজুড়ে রয়েছে উপনিবেশ আমলের ভবন, ঐতিহ্যবাহী দোকানপাট এবং অসংখ্য হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির। শহরের অল্প দূরেই রয়েছে উপনিবেশ আমলের নির্মাণ অসম্পূর্ণ থাকা সুবিশাল অট্টালিকা। যা কেলির দুর্গ নামে নামে পরিচিত।
দ্য ক্যামেরুন হাইল্যান্ডস, পাহাং
১৯ শতকের শেষ দিক থেকেই দ্য ক্যামেরুন হাইল্যান্ডস মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ ভূ-জরিপকারি উইলিয়াম ক্যামেরুন এটি আবিষ্কার করেন এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেন। এই উচ্চভূমির উচ্চতা আনুমানিক ৩৬০৯ ফুট থেকে ৫৯০৬ ফুটের মধ্যে। এটি ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও বিশুদ্ধ পরিবেশের জন্য প্রসিদ্ধ। অবাক করার বিষয় হল এই উচ্চভূমিই মালয়েশিয়ার সবচেয়ে উচু পাহাড়ি এলাকা। বর্তমানে এই আকাঁমছোয়া অঞ্চলে গ্রিন-টি, স্ট্রবেরি ও সবজির খামার গড়ে উঠছে।পর্যটকরা শীতল পরিবেশ ও পর্বতারোহণের জন্য এ অঞ্চলে ছুটে আসেন।
পাংকোর দ্বীপ, পেরাক
পেরোকের পাংকোর দ্বীপের নামটি এসেছি থাই শব্দ ‘প্যাং কো’ থেকে যার অর্থ সুন্দর দ্বীপ।এই ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ মালাক্কা প্রণালী অভিমুখে অবস্থিত। এক সময় এটি মাছ, জেলে ও জলদস্যুদের জন্য বিখ্যাত ছিল কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন এটি পর্যটকদের কাছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গে পরিণত হয়েছে।এখানে মাত্র ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করে তাই অনাসায়েই এখানকার সৈকতে অবকাশযাপন করা যায়, মোটরসাইকেল ভাড়া করে পুরো দ্বীপ ঘুরা যায়।এ দ্বীপে স্কুবা ডাইভিং ও স্নোরকেলিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।
পুলাউ টিওম্যান, পাহাং
পুলাউ টিওম্যান ১৯৭০ সালে বিশ্বাখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা দ্বীপ হিসেবে নির্বাচিত হয়। এখন অনেকটাই বদলে গেছে তবুও চীন সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এ দ্বীপ মালয়েশিয়ার অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এ দ্বীপের প্রবালের প্রাচুর্য, বৃষ্টি বেষ্টিত বনাঞ্চল, স্পর্শহীন সৈকত পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পর্যটকরা এ দ্বীপে স্নোরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, বনে ঘোরাঘুরি, মোটরসাইকেল কিংবা বাইসাইকেল ভাড়া করে দ্বীপ ঘুরে দেখতে পছন্দ করেন। অনেকেই আবারও জলপ্রপাত বা ঝর্ণা দেখতেও যান।