মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৮ অপরাহ্ন

ঘুরতে যেতে পারেন ‘বনলতা সেন’-এর নাটোরে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫
‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।’

জীবনানন্দ দাশের এই বিখ্যাত পঙক্তি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আপনি যদি একটু প্রশান্তি খুঁজে বেড়াতে চান, তবে নাটোর হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য। নাটোর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি জেলা। যা ‘রাজসিক নাটোর’ নামে পরিচিত।

নাটোরে রয়েছে একাধিক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এখানে রয়েছে রানি ভবানীর রাজবাড়ি, উত্তরা গণভবন, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি ও চৌগ্রাম জমিদারবাড়ি। এ ছাড়া রয়েছে চলনবিল ও হালতি বিলের মতো জায়গা। যেগুলো পরিবেশপ্রেমীদের জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়।

নাটোরকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এখানে দেশের সব প্রান্ত থেকে সড়ক, রেলপথ ও আকাশপথে সহজেই পৌঁছানো যায়। রাজশাহী থেকে এক ঘণ্টা সড়কপথে নাটোর পৌঁছানো সম্ভব। যা এই অঞ্চলের কাছে অত্যন্ত সুবিধাজনক।

চলুন, জেনে নিই নাটোরের কয়েকটি বিখ্যাত স্থান সম্পর্কে।

রানী ভবানীর রাজবাড়ি
নাটোর শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রানী ভবানীর রাজবাড়ি। যা প্রাচীন নাটোর রাজবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। বাংলার সুবেদার মুর্শিদকুলী খানের শাসনামলে এই রাজবাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এটি প্রাসাদ, দিঘি, মন্দির, উদ্যান ও মনোরম অট্টালিকা দিয়ে একটি সুসজ্জিত নগরীতে পরিণত হয়।

নাটোর রাজবংশটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল—বড় তরফ এবং ছোট তরফ। রাজপ্রাসাদ দুটি এই দুই তরফের জন্য আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছিল। উদ্যানের মধ্যে প্রশস্ত জায়গা রয়েছে। যেখানে বড় তরফের প্রাসাদ উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং ছোট তরফের প্রাসাদ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। রাজবাড়ির পোড়ামাটির টেরাকোটায় মোড়ানো প্রাসাদের মেঝে ও শ্বেতপাথরের উপস্থিতি এখনো রাজবংশের ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। পরিচর্যার অভাবে রাজপ্রাসাদের অনেক অংশ ভেঙে পড়ছে। রাজবাড়ি দর্শনের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশমূল্য দিতে হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। বনভোজনের জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

উত্তরা গণভবন
নাটোর শহরের দিঘাপতিয়ায়, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উত্তরা গণভবন। এটি ১৭৩৪ সালে দিঘাপতিয়ার দেওয়ান দয়ারাম রায় নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরে রাজা প্রমদানাথ রায় ১১ বছর ধরে এই রাজপ্রাসাদটি পুনর্নির্মাণ করেন। প্রাসাদটি পুনর্নির্মাণে তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নির্মাণ উপকরণ ও গাছপালা ব্যবহার করেন। চারদিকে সীমানাপ্রাচীর ও পরিখা দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছিল রাজপ্রাসাদটিকে। উত্তরা গণভবনের মূল ফটকটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। ফটকের মাঝখানে একটি বিশাল ঘড়ি রয়েছে, যা ঘণ্টাধ্বনি দিয়ে সময় জানায়। রাজবাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফলের গাছের সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

চলনবিল 
নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও বগুড়া জেলার অল্প কিছু অংশ নিয়ে চলনবিল। চলনবিল এক বিশাল জলাভূমি। এটি দেশের অন্যান্য বিলের তুলনায় খুবই বিশেষ। সব ঋতুতেই চলনবিলের পানি প্রবাহিত থাকে। বর্ষাকালে ছোট ছোট গ্রামগুলো বিলের মধ্যে দ্বীপের মতো দেখা যায়। নৌকায় ঘুরে বেড়াতে গেলে বিলের সীমানা শেষ হয় না।

মাথার ওপর উড়ন্ত পাখি, পাশাপাশি নৌকার শব্দ ও পানি থেকে ছোট মাছের লাফালাফি এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা দেয়। শুকনা মৌসুমে দুই বিলের মধ্যে ডুবোসড়কগুলো জেগে ওঠে। অনেকেই সেখানে হেঁটে বা মোটরসাইকেল চালিয়ে ঠাণ্ডা পানির স্পর্শ পান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com