রাস্তা ভাঙ্গা, অনেকগুলা ফেরি- না এসব অজুহাত আর চলবে না। এসব কিছুই নেই। রাস্তা মসৃন, পটুয়াখালি হয়ে গেলে কোন ফেরি নেই। কাজেই একটা সুযোগ পেলেই ঘুরে আসুন কুয়াকাটা। দেখে আসুন নীরবে নিভৃতে দাড়িয়ে থাকা সুন্দর একটি সৈকত।
কিভাবে যাবেন :
আমি বলবো জলপথে যান। ঢাকা থেকে প্রতি রাত ৮.৩০ মি: এ ৩-৪ টি লঞ্চ বরিশালের উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ডেক ২০০ টাকা, কেবিন ৯০০/১৭০০ টাকা (সিংগেল/ডাবল)।
পরদিন খুব ভোরে নেমে সাথে সাথে লঞ্চ ঘাটের ঠিক বাইরে দাড়ানো বাস এর টিকেট কাটুন। এ বাসগুলো সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ভাড়া ২০০ টাকা। টিকেট কেটে পালেই চট্টগ্রাম হোটেলে নাস্তা করে নিন। এরপর বাসে উঠে বসুন। সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। রাস্তা খুবই ভালো। এ রাস্তা দিয়ে গেলে লেবুখালি ফেরি পার হতে হবে। তবে ফেরিমুক্তভাবে যদি যেতে চান তবে পটুয়াখালি হয়ে যান। সন্ধ্যা ৬.৩০ এ ছেড়ে যায় পটুয়াখালির লঞ্চ। এতে উঠে সকালে পটুয়াখালি নেমে বাস এ যেতে পারেন। ভাড়া নেবে ১৫০ টাকা।
এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি বাসেও কুয়াকাটা যাওয়া যায়। গাবতলি/কল্যানপুর থেকে রাতে সাকুরা পরিবহনসহ বেশ কটি বাস ছেড়ে যায়। পরদিন সকাল ৭ টার দিকে কুয়াকাটা পৌছায়। ভাড়া ৭০০ টাকা।
বরিশাল-কুয়াকাটা রাস্তা :
রাস্তা খুবই ভালো। কোন ভাঙ্গা নেই।
ফেরি সমাচার :
বরিশাল কুয়াকাটার মধ্য কদিন আগেও ৪ টি ফেরি ছিলো। এখন আছে মাত্র ১ টি, লেবুখালি ফেরি। বাকিগুলো ব্রিজ হয়ে গেছে। পটুয়াখালি কুয়াকাটার রাস্তায় কোন ফেরী নেই।
কোথায় থাকবেন :
কুয়াকাটার হোটেল : কুয়াকাটায় পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল গড়ে উঠেছে। একেবারে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকার হোটেলও পাবেন এখানে। নীচের কিছু মান সম্পন্ন হোটেলের ঠিকানা ও ভাড়া দেয়া হলো। আশা করি সবার কাজে লাগবে।
ভাড়ার ব্যাপারে একটা কথা। হোটেলে গুলোর পাবলিশড রেট এখানে দেয়া হলো তবে কুয়াকাটাতে বছর ভর ৪০-৫০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। তাই অবশ্যই হোটেল নেবার সময় বারগেইন করবেন। আরেকটি কথা পর্যটন বাদে বাকী সবাই বড় বন্ধের সময় ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তাই যাবার আগে কনফার্ম হয়ে যাবেন ভালো করে। পারলে ফোনের কথা রেকর্ড করে রাখবেন।
১. ইয়োথ ইন (পর্যটন করপোরেশন), কুয়াকাটা, ফোন : ০১৭১২-৫৬৫৭৬১
২. হোটেল স্কাই প্যা লেস, পর্যটন এরিয়া, কুয়াকাটা ফোন : ০১৭২৭-৫০৭৪৭৯
৩. হোটেল বনানী প্যা লেস, পর্যটন এরিয়া, কুয়াকাটা, ফোন : ০১৭১-৩৬৭৪১৯২
৪. হোটেল নীলাঞ্জনা, রাখাইন মার্কেট, কুয়াকাটা | ফোন : ০১৭১২-৯২৭৯০৪
৫. বিশ্বাস সি প্যাগলেস হোটেল, বেড়ি বাধ, কুয়াকাটা | ফোন : ০১৭৩-০০৯৩৩৫৬
৬. সাগর কণ্যা রিসোর্ট লি:, পশ্চিম কুয়াকাটা, কুয়াকাটা | ফোন : ০১৭১১-১৮১৭৯৮
৭. হোটেল কুয়াকাটা ইন, সদর রোড, কুয়াকাটা | ফোন : ০১৭৫-০০০৮১৭৭
৮. কিংস হোটেল,সাগর পাড়, কুয়াকাটা | ফোন : ০১৭১৩-২৭৭৬৩০
আর আপনি যদি আপ এন্ড কোন হোটেল চান তবে কুয়াকাটা গ্রান্ড বা শিকদার রিসোর্টস এর ভিলাজ এ থাকতে পারেন।
খাবেন কোথায় :
মাছ খাবার জন্য কুয়াকাটা একটি আদর্শ জায়গা। বীচ এর কাছে কয়েকটি অস্থায়ী দোকানে মাছ নিয়ে বসে থাকে। দামাদামি করে ঠিক করে দিলে সামনে বসে ভেজে বা রেধে দেবে। এছাড়া হোটেল ক্ষেপুপাড়া, তরঙ্গ রেষ্টুরেন্ট, কুয়াকাটা বীচ রেস্টুরেন্ট সহ নানান রেষ্টুরেন্ট এ খেতে পারেন। মানুষ বেশী হলে ফ্রিজে রাখা মাছ দাম ঠিক করুন এরপর রান্না করে দিতে বলুন। এছাড়া জেলেদের কাছ থেকে তাজা ইলিশ কিনে রেষ্টুরেন্ট এ দিলে ওরা রান্না করে দেবে কিছু টাকার বিনিময়ে।
তবে যাই করুন না কেনো লেবুর চর বীচ এ গিয়ে মাছ কিনে তা রান্না করিয়ে মোটা চালের ভাত দিয়ে খেতে ভুলবেন না। বিকেলের দিকে ২০০ টাকা দিয়ে একটা মোটরসাইকেল নিয়ে দুজন চলে যান লেবুর চর। একটা দোকানে গিয়ে মাছ বাছাই করুন এবং রেধে দিতে বলনু। সাথে গরম ভাত। ওপেন বীচে এভাবে একটা ডিনার করলে একটা জনমে ভুলতে পারবেন না সে খাবারের স্বাদ বা পরিবেশ।
কি কি দেখবেন :
বেশি ঘোরার দরকার নেই। একটা মোটরসাকেল ভাড়া নিন। ওরাই ঘোরাবে। প্রথম দিন গঙ্গামতি, কাকড়ার চর আর বৌদ্ধ মন্দির হয়ে বিকেলে লেবুর চর যান। ভাড়া নেবে দুজন ৪০০-৫০০ টাকা।
পরদিন সুর্যদয় দেখার জন্য কোন মোটরসাইকেল চালকের সাথে কথা বলে রাখুন। সকালে এসে নিয়ে যাবে। ভাড়া নেবে ২ জন ২০০ টাকা। আর ২০০ টাকা দিয়ে গ্রুপ ট্যুর এ ফাতরার বন ঘুরে আসুন। ভালো লাগবে। আর হ্যা নুতন নির্মিত ইলিশ পার্কটিতে একটি সন্ধ্যা ঘুরে আসতে ভুলবেন না। আপনি অর্ডার করলে এরা বড় একটি ইলিশের পেটে বসে ইলিশ খাবার ব্যাবস্থা করবে।
কোন বিপদে পড়লে :
কোন হোটেল হয়রানি করলে, রেষ্টুরেন্ট পচা খাবার দিলে বা গলাকাটা দাম রাখলে অথবা অন্য যে কোন ধরনের হয়রানির শিকার হলে দ্রুত ট্যুরিষ্ট পুলিশকে জানান। ফল পাবেন হাতে নাতে। কুয়াকাটা বীচে ট্যুরিষ্ট পুলশের ক্যাম্প আছে। ওনারা অনেক কো-ওপারেটিভ। ট্যুরিষ্ট পুলিশের ফোন নম্বর : ০১৭-৬৯৬৯০৭৪০
Courtesy: Mahmud Hasan Khan