যদিও হাঙ্গেরি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যামেরিকা কিংবা কানাডার মতো জনপ্রিয় স্থান নয়, কিন্তু উচ্চশিক্ষার জন্য যা যা থাকা প্রয়োজন সবই রয়েছে এখানে। হাঙ্গেরির উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা, বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গত দশ বছরে হাঙ্গেরিতে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য এসেছে। হাঙ্গেরিতে প্রায় ১০টি নিবন্ধিত উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে পলিটেকনিক ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রদানকারি সেক্টর।
হাঙ্গেরিতে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য এখানে স্টুডেন্ট ভিসা প্রচলিত আছে। এখানে ইতালির মতো তিন ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা প্রচলিত রয়েছে। এই তিন ধরনের ভিসা থেকে আপনার প্রয়োজনমতো ভিসা বাছাই করে সেটির জন্য অ্যাপ্লাই করতে হবে। এই তিন ধরণের ভিসা হচ্ছে,
এই ধরণের ভিসায় একজন রেজিস্টার্ড শিক্ষার্থী যেকোনো ধরনের কোর্স করতে পারবেন। এছাড়া যেকোনো হাঙ্গেরিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেতে হবে এবং স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে। এ ধরনের স্টুডেন্ট ভিসায় কোনো স্পন্সরের দরকার পড়বে না। এ ধরনের ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ভিসা নিয়ে হাঙ্গেরিতে গিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরিও করতে পারবেন। আপনার ভিসার আবেদন ফর্মে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের নাম উল্লেখ করে দিতে পারেন কিংবা চাইলে তাদের জন্য আলাদা করেও ভিসার আবেদন করাতে পারেন। এই স্টুডেন্ট ভিসায় ২০০০০ থেকে ৩০০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।
এ ধরনের ভিসা পেতে হলে আপনার পরিবারবর্গের কোনো সদস্যকে পূর্বেই হাঙ্গেরি অথবা যেকোনো শেনজেন কান্ট্রির অধিবাসী হতে হবে। এছাড়া পড়ালেখার খরচ ও বাসস্থান খরচ ওঠানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে ও কমপক্ষে ২১ বছর বয়সী হতে হবে। স্পন্সর ছাড়াও এ ধরনের ভিসার আবেদন করা যায়। এ ধরনের ভিসা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম ও ফুল টাইম চাকরিও করতে পারবেন। তবে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য আলাদা আলাদা ভিসার আবেদন করতে হবে। এই স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন করতে ৩০০০০ টাকা থেকে ৩৫০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।
এই ভিসা পেতে হলে আপনার পরিবারের যেকোনো সদস্য বা আত্মীয়স্বজনকে হাঙ্গেরি অথবা শেনজেন কান্ট্রির অধিবাসী হতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য বীমাও থাকতে হবে। ভিসার আবেদন করার জন্য স্পন্সরের দরকার পড়বে না। এ ধরনের ভিসার কোনো মেয়াদ থাকে না। পড়ালেখার পাশাপাশি যেকোনো ধরণের চাকরিও করতে পারবেন। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য আলাদা কোন ভিসার আবেদন করতে হবে না। এছাড়া এই ভিসায় আবেদন করতে কোনো ধরনের খরচ হয় না। ভিসার আবেদন করার জন্য ইন্টারনেট থেকে ভিসার আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে পারবেন অথবা যেকোন ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকেও ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান পাবেন।
হাঙ্গেরিতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে যেসব ডকুমেন্টের প্রয়োজন পড়বে সেগুলো হচ্ছে,
স্টুডেন্ট ভিসার ধরন নির্বাচন করে, ভিসার আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করুন। তারপর সেটা পূরণ করে অনলাইনেই আবেদন করুন। উল্লেখ্য যে, আপনি যেকোন ট্র্যাভেল এজেন্সি অথবা হাঙ্গেরিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকেও ভিসার আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আলাদা সার্ভিস ফি প্রযোজ্য। আবেদন করার পর, বিভিন্ন সাপোর্টিং ডকুমেন্টেশন ভিসার আবেদন ফর্মের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। সাপোর্টিং ডকুমেন্ট ওয়েবসাইট থেকে স্ক্যান করাতে হবে। হাঙ্গেরিয়ান অথবা শেনজেন ভিসা সাপোর্টেড অফিসে সকল ধরনের সাপোর্টিং ডকুমেন্টের কপি জমা দিতে হবে।
যদিও এই ধাপটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। আপনার ভিসা আবেদন ফর্মের সাথে সাপোর্টিং ডকুমেন্টে যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সে সমস্যার সমাধান করার জন্যই আপনাকে ভিসা অফিসে যেতে হবে।
হাঙ্গেরির স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করার পর, আপনার জন্মদিন ও ভিএলএন নাম্বার দিয়ে ভিসার অবস্থান ট্র্যাকিং করতে পারবেন। ভিসার অবস্থান ট্র্যাকিং করার জন্য এখানে ক্লিক করুন। ভিসা ও ভর্তির প্রসেসিং হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৮০ থেকে ৯০ দিন লাগতে পারে। অনলাইনে ভিসার আবেদন করার জন্য সর্বোচ্চ ১৫০০০ টাকা থেকে ৩০০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। অনলাইন ভিসা অ্যাসিস্ট অ্যাকাউন্ট করার জন্য ১০০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা খরচ হবে। বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের জন্য ২৫০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
হাঙ্গেরিতে প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলের সাথে কাজ করতে পারবেন। সেখানে আপনি বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা ও অ্যাক্টিভিটির সাথে জড়িত থাকার সুযোগ পাবেন। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বিভিন্ন ধরণের সঙ্গীত, নাচ ও সাংস্কৃতিক ক্লাব রয়েছে। বসবাসের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে আপনি চাইলে প্রত্যেক মাসে ৫০০০ টাকা থেকে ১০০০০ টাকা খরচ করে ভালোমানের স্টুডেন্ট হোস্টেলে থাকতে পারবেন। প্রাইভেট ফ্ল্যাটে থাকতে চাইলে প্রতি মাসে আপনাকে গুনতে হবে ১৫০০০ টাকা থেকে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রত্যেক মাসে শুধুমাত্র খাবার খরচ পড়বে ৭০০০ টাকার মতো।