পৃথিবীর স্বর্গ খ্যাত ভারতের কাশ্মীরে বেড়েছে পর্যটকদের পদচারণ। একসময়ের বিরোধপূর্ণ এ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। সর্বশেষ গত বছর ২৫ লাখের অধিক পর্যটক ভ্রমণ করেছে কাশ্মীরে। যার উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই বাংলাদেশি।
জম্মু এবং কাশ্মীর ট্যুরিস্ট ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, একসময় কাশ্মীরে দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করত। বর্তমানে শতাধিক বিমান ওঠানামা করছে শ্রীনগর বিমানবন্দরে। এসব বিমানে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক যাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরে। এ ছাড়া সড়কপথেও প্রতিদিন যাচ্ছে হাজার হাজার পর্যটক। সর্বশেষ ২০২২ সালে ২৫ লাখ পর্যটক গিয়েছে কাশ্মীরে। যা কাশ্মীরের ইতিহাসে রেকর্ড। চলতি বছর এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কাশ্মীরের একটি গাইড প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ইমরান জারগার বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর আমাদের প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণ করেছে ৪ হাজারের অধিক পর্যটক। চলতি বছর ছয় মাসের মধ্যেই এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। পর্যটকদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই হচ্ছে এশিয়ান। বিশেষ করে বাংলাদেশি। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকা- বেড়েছে কাশ্মীরে। জানা যায়, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর পাল্টে যেতে থাকে ভূ-স্বর্গ খ্যাত জম্মু কাশ্মীরের পরিস্থিতি।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীরকে ঘিরে আগ্রহ বাড়ে পর্যটকদের। মাঝখানে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে কিছুটা স্থবির হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে পর্যটকদের পদচারণ। এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করছে কাশ্মীরের বরফ, উপত্যকা, বরফ ঢাকা পাহাড়, ফুল ও ফলের বাগান, টিউলিপ বাগান, পশমের বস্ত্র, কাঠ ও চামড়ার কাজের কুটির শিল্প, উইলো গাছের জঙ্গল ইত্যাদি। প্রতিটা পরতে পরতে পর্যটকদের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ দিচ্ছে বরফ ঢাকা গুলমার্গ, সোনমার্গ, সোনমার্গের জিরো পয়েন্ট ও থাজিওয়াস গ্লেসিয়ারে, পেহেলগাম, অরুভ্যালি, চন্দনওয়ারি, বেতাব ভ্যালি, ডাল লেক, হরি পর্বত, দুরবানি দুর্গ, নিশাবাগ, শালিমার বাগ, পরিমহল।
ভ্রমণে পর্যটকদের অন্যমাত্রা যোগ করছে ডাল লেকের হাউস বোটে রাত্রি যাপন, শিকারা রাইট ও ডাল লেকের ভাসমান দোকানে কেনাকাটা। শুধু পর্যটক নয়, মুসলিম অধ্যুষিত পর্যটন রাজধানী কাশ্মীরে রয়েছে মুসলমানদের অনন্য নিদর্শন শত শত বছরের পুরনো মসজিদ ও বিখ্যাত পীর আউলিয়াদের দরবার। তাই ইসলামের নিদর্শন দেখতে এবং পীর আউলিয়াদের মাজার জেয়ারতে মুসলিম পর্যটকরা ছুটছেন হযরত বাল মসজিদ, কাশ্মীর উপত্যকার বৃহত্তম মসজিদ ‘জামিয়া মসজিদ’, আখুন্দ মোল্লা শাহ মসজিদ, মখদুম সাহেবের মাজার, বাবা রেশির দরগাহ, দস্তগীর সাহেবের মাজার, জয়েন উদ্দিনের মাজারে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে কাশ্মীর ভ্রমণে যাওয়া ফাতেমা বেগম বলেন, আগে ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখে কাশ্মীরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু ভিডিওর চেয়ে বাস্তবের কাশ্মীর অনেক বেশি সুন্দর। কাশ্মীরের এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একইভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন কাশ্মীর ভ্রমণকারী মোহাম্মদ হাকিম আলী। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছি, কিন্তু কাশ্মীরের মতো এমন সুন্দর এলাকা পৃথিবীর কোথাও দেখিনি।