নাগরিকত্ব নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সমালোচনায় বিদ্ধ বলিউডি নায়ক অক্ষয় কুমার জানিয়েছেন কানাডায় পাসপোর্ট পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন তিনি।
এনডিটিভি জানিয়েছে, সম্প্রতি অক্ষয় বলেছেন, “আমি আমার কানাডিয়ান পাসপোর্ট পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেছি এবং সেখানকার নাগরিকত্ব পরিবর্তন হলেই।
অক্ষয় থাকেনও ভারতে, করও জমা দেন জন্মভূমির দেশেই। সেখানে তিনি একের পর এক সিনেমাও করে যাচ্ছেন। তবুও কানাডিয়ান নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য নানা ভাষায় সমালোচনা-বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে অক্ষয়কে। কিন্তু এবারে কানাডা পর্ব শেষ করতে চলছেন তিনি।
অক্ষয় জানান, কানাডার নাগরিকত্ব নেওয়ার কারণ না জেনে মানুষ যখন কিছু বলে, তখন তার খারাপ লাগে।
“ভারতই আমার কাছে সবকিছু। আমি যা কিছু অর্জন করেছি, যা কিছু পেয়েছি তা এখান থেকেই। আমি ভাগ্যবান যে আমি কানাডার পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আপনি খারাপ বোধ করেন যখন লোকেরা কিছু না জেনে কিছু বলে… “
বলিউডের ‘খিলাড়ি’ অক্ষয় কুমারের জন্ম পাঞ্জাবের অমৃতসরে, বড় হওয়া দিল্লিতে। তার কানাডার পাসপোর্ট নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয় ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সময়।
ওই নির্বাচনে বলিউডের এক সময়ের নায়িকা টুইঙ্কেল খান্না ভোট দিলেও তার স্বামী নায়ক অক্ষয় কুমার ভোট দেননি। কারণ কানাডার নাগরিকত্ব নেওয়ার পর ভারতে তিনি ভোটাধিকার হারান।
কেন কানাডাকে বিকল্প দেশ হিসেবে বেছে নিতে হয়েছিল সে সম্পর্কে ‘হেরা ফিরি’, ‘নমস্তে লন্ডন’, ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’, ‘প্যাডম্যান’ এর মত হিট সিনেমার নায়ক অক্ষয় জানান, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দিন এমনও গেছে যে পরপর ১৪টি সিনেমা তার ফ্লপ হয়েছে।
“তখন হতাশায় একেবারে মুষড়ে পড়েছিলাম। তখন কানাডাপ্রবাসী এক বন্ধুকে ফোন করি। বন্ধু বললেন, চিন্তা করিস না দোস্ত। আমি আছি। দুজনে মিলে কিছু একটা করবই।“
অক্ষয় জানান, সেই বন্ধুই তাকে কানাডার পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেন। কানাডায় গিয়ে কিছুদিন কাজও করেছেন অক্ষয়। তবে কী মনে করে ফের ভারতে ফিরে ১৫ নম্বর সিনেমাটিও শেষ করেন তিনি।
“কোনো আশা ছিল না। কিন্তু সেই সিনেমাই জীবন বদলে দেয়। সুপারহিট হয়।“
ওই সিনেমার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অক্ষয় কুমারকে। কিন্তু কানাডার সেই পাসপোর্টও তিনি হারাতে চাননি। এদিকে ভারত আবার দ্বৈত নাগরিকত্ব দেয় না।
এর জন্য কম কটু কথা শুনতে হয়নি অক্ষয়কে। তিন বছর লোকসভা নির্বাচনের সময় তাকে নিয়ে রীতিমতো ট্রল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশ বা সংস্কৃতি নিয়ে কোনো কথা বললেই মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ত তার ওপর। তাদের মতে, “যে দেশের নাগরিকই না, সে আবার কেন দেশের বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে!”
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন অক্ষয় কুমার। টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, “আমি কোন দেশের নাগরিক, তা নিয়ে হঠাৎ কিছু মানুষের এত উৎসাহ দেখে অবাক হচ্ছি। তারা আমাকে নিয়ে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। আমার কানাডার পাসপোর্ট রয়েছে, এ কথা কখনো লুকিয়েছি কিংবা অস্বীকার করেছি? গত সাত বছরে আমি একবারও কানাডা যাইনি। আমি ভারতে কাজ করছি। আমি এবং আমার পরিবার এখানেই আছি। ঠিক সময়ে আমি যাবতীয় ট্যাক্সও পরিশোধ করি।“
সে সব ঘটনার চারবছর পর ৫৫ বছর বয়সী অক্ষয় নিজেই জানালেন, পাসপোর্ট পরিবর্তনের জন্য কানাডা সরকারের কাছে তিনি আবেদন করেছেন।
যদিও বলিউডি সিনেমায় ফের ‘দুর্দিনে’ আছেন অক্ষয়। এমনকি তিনি তার পারিশ্রমিকও কমিয়েছেন।
অক্ষয়ের ‘সেলফি’ এবং রেকর্ড
এদিকে শুক্রবার অক্ষয় অভিনীত ছবি ‘সেলফি’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।
মালয়ালম সিনেমা ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’-এর হিন্দি রিমেক ‘সেলফি’। রাজ মেহতা পরিচালিত এই সিনেমায় অক্ষয় কুমার, ইমরান হাশমির সাথে আরও অভিনয় করেছেন, নুসরত ভরুচা, ডায়না পেন্টিসহ আরও অনেকে। এ ছাড়া অতিথি চরিত্রে আছেন ম্রুনাল ঠাকুর।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই সিনেমার প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন অক্ষয়। আর সেই প্রচার কাজে একটি বিশ্ব রেকর্ডও গড়েন তিনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, গত বুধবার মুম্বাইয়ে সিনেমার প্রচারে নেমে মাত্র ৩ মিনিটে ভক্তদের সঙ্গে ১৮৩টি সেলফি তোলেন অক্ষয়। আর তাতেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠে যায় এই অভিনেতার।