বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন

কানাডার আকাশে বাংলাদেশের অদিতি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

অদিতি সরকার। মাত্র ২০ বছরে বয়সেই কানাডার আকাশে পাইলট হিসেবে উড়লেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাথুরিয়া গ্রামের তরুণ এই স্বপ্নবাজ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কানাডার ভ্যানকুভার প্রিন্সিপাল এয়ার ফ্লাইং স্কুল থেকে পাইলট প্রশিক্ষণ নেন অদিতি। এরপর ফার্স্ট অফিসার হিসেবে বিমানে যোগ দেন। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন শাহরুল আলম

২০ বছরে বয়সেই কানাডার আকাশে পাইলট হিসেবে উড়লেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাথুরিয়া গ্রামের অদিতি সরকার। অদিতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কানাডার ভ্যানকুভার প্রিন্সিপাল এয়ার ফ্লাইং স্কুল থেকে পাইলট প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে একই প্রতিষ্ঠানে ইন্সট্রাক্টরের রেটিং শেষে ৩ বছর পাইলট প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। এরপর ফার্স্ট অফিসার হিসেবে বিমানে যোগ দেন।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাথুরিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া অদিতি সরকারের বেড়ে ওঠা জয়পুরহাট শহরে। বাবা সমাজকর্মী অপূর্ব সরকার। মা মাহবুবা সরকার। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় অদিতি সরকার। মেজো বোন অর্থি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় পড়ছেন মেডিকেলে। ছোট বোন অর্ণী সরকার এ-লেভেলে পড়ছেন ভারতের শিলিগুড়িতে।

যেভাবে কানাডায়
অদিতি সরকারের প্রাথমিক পাঠ জয়পুরহাটের জামান মডেল স্কুল অ্যান্ড একাডেমিতে। এরপর কার্শিয়াং দার্জিলিংয়ের হিমালি বোর্ডিং ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর কলকাতার জেমস একাডেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও ঢাকার লালমাটিয়ার লরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। ২০১৭ সালে এ লেভেল শেষ করে কানাডার ভ্যানকুভার প্রিন্সিপাল এয়ার ফ্লাইং স্কুলে চলে যান পাইলট প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে। সেখানেই ইনস্ট্রাক্টরের রেটিং করে তিন বছর পাইলট প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। এরপর ফার্স্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন বিমানে।

প্রশিক্ষণকালীন দিন ও বাবা হারানোর শোক
কানাডার ভ্যানকুভার প্রিন্সিপাল এয়ার ফ্লাইং স্কুলে প্রশিক্ষণকালীন অদিতি সরকারের জীবনে নেমে আসে শোকের কালো ছায়া। ঠিকঠাক চলছিল প্রশিক্ষণ। নিয়মিত যোগাযোগ হয় বাড়ির সঙ্গে। এরই মধ্যে হঠাৎ বাড়ি থেকে খবর পান, তাঁর বাবা আর বেঁচে নেই। সব ওলটপালট হয়ে যায় যেন অদিতির! তবু তিনি দমে যাননি। বাড়িতে আসার চেষ্টা করেও তাৎক্ষণিক আসতে পারেননি। অনেকটা বুকে পাথর বেঁধে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান। সেই সঙ্গে নেন খণ্ডকালীন চাকরি। সেই কঠিন সময় মোকাবিলা করে বিমান পরিচালনার প্রশিক্ষণ শেষ করেন তিনি। অদিতি সরকারের মা সেই কঠিন দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘২০১৯ সালে অদিতির বাবা মারা যান। এরপর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অদিতি হাল ছেড়ে দেয়নি। খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজের প্রশিক্ষণের টাকা জুগিয়েছে। অনেক কষ্টে অদিতি আকাশে ডানা মেলেছে। সে যেন আমার স্বপ্নর রাজ্যে উড়ে বেড়াচ্ছে। এমন মেয়ের জন্য গর্ব না করে থাকা যায়!’

অদিতির এমন সাফল্যের খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে। পাথুরিয়া গ্রামের মানুষসহ জয়পুরহাটে বইছে খুশির জোয়ার! অদিতির প্রাথমিক পাঠ যেই প্রতিষ্ঠান থেকে সেই জামান মডেল স্কুল অ্যান্ড একাডেমির পরিচালক ও শিক্ষক গুলশান আরা জামান বলেন, ‘আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের একজন অদিতি। ছোটবেলা থেকেই সে খুব মেধাবী। সেই সঙ্গে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ছিল সমান মনোযোগ। তার পক্ষেই সম্ভব এমন অসম্ভবকে সম্ভব করা। অদিতির অন্য দুই বোনও খুব মেধাবী। আমি তার এমন সাফল্যে আনন্দিত ও গর্বিত। আশা করি তার বোনেরা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।’

আগামীর স্বপ্ন
আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে অদিতি সরকার বলেন, ‘আমাকে নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। বাবা চাইতেন আকাশে উড়বো আমি। আমারও স্বপ্ন ছিল, বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে উড়ে বেড়াবো নীল আকাশে। সেটি আর হয়নি! তবে মা তো আছেন। আছে প্রিয় বাংলাদেশ। দেশের আকাশে মাকে নিয়ে উড়ে বেড়াতে চাই। সুযোগ পেলে দেশের হয়েও কাজ করতে চাই আগামীতে।’
অদিতির ছোট বোন অর্ণী সরকার বোনের খবর শুনে উচ্ছ্বসি হয়ে বলেন, ‘লেখাপড়া শেষে করে যদি কারও মতো হতে চাই তবে অবশ্যই আমার বড় আপুর মতো হব। কেবল আমিই নই; অসংখ্য মেয়ে আপুর মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখে।’

আমরাও স্বপ্ন দেখি, একদিন বাংলার আকাশে উড়ে বেড়াবে অদিতির মতো অসংখ্য তরুণ!

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com