বাংলাদেশি অনেক শিক্ষার্থী কানাডায় পড়াশোনা করতে আগ্রহী। এইচএসসি ও অনার্স পাস করেই অনেক শিক্ষার্থী কানাডার বিভিন্ন কলেজগুলোতে আবেদন করে থাকেন। গত আট/১০ বছর ধরে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা কানাডার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে পাড়ি জমাচ্ছে। তবে বৈচিত্র্যপর্ণ আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের প্রথমে কানাডার আবহাওয়ায় খাপ খাইয়ে নিতে একটু অসুবিধা হয়।
কানাডার নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ডিগ্রিসমূহ বিশ্বমানের তো বটেই, আমেরিকা এবং কমনওয়েলথভুক্ত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিরও সমতুল্য। তাছাড়া পড়াশোনা চলাকালীন কানাডার নাগরিকত্বও পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
পড়াশোনার ভাষা : ইংরেজি ও ফরাসি দুটি ভাষাতেই কানাডার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করা যায়। তবে যে ভাষায় পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক সে ব্যাপারে আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতাও থাকতে হবে। ভর্তির শুরুতেই ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাই করার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়া লাগে। যেমনÑ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় TOEFL এ ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় নূন্যতম ৭৯ পেতে হয়। তবে ১০০-এর বেশি নম্বর পেলে ভালো। এছাড়া বিজনেসের শিক্ষার্থীদের GMAT টেস্টে ভালো স্কোর পেতে হয়।
শিক্ষাব্যবস্থা : কানাডায় একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে দুভাবে পড়াশোনা করতে পারে। ফুলটাইম অথবা পার্টটাইম পড়াশোনায় এখানে রয়েছে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, ডক্টরাল, পিএইচডি কোর্স। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও রয়েছে কো-অপারেটিভ এডুকেশন, ডিসট্যান্ট লার্নিং, কন্টিনিউয়িং এডুকেশন এবং স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মতো আরও অনেক কোর্স ও পদ্ধতি। এখানে শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্কশপ ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা রয়েছে এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে।
যে বিষয়ে পড়া যায় : কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ফুড সায়েন্স, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড রিসোর্সেস, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, এগ্রিকালচার, ইকোনোমিক্স, অ্যাপ্লায়েড কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসট্রোনমি, অ্যাপ্লায়েড জিওগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল সায়েন্স, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এডুকেশন, হোম ইকোনোমিক্স, মিউজিক, ফিলোসফি, হিস্ট্রি অ্যান্ড রিলিজিওন, ইংলিশ, ল, থিয়েটারসহ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার বিষয় এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার বিষয় পড়তে পারবেন।
আবেদনের সময় : কানাডার অ্যাকাডেমিক বছর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হয়। বছরে দুটি সেমিস্টার থাকে। সেপ্টেম্বর অথবা জানুয়ারি সেমিস্টারে ভর্তির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া আট মাস আগে শুরু করা ভালো।
কানাডায় পড়াশোনাবিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট:
১. কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনাবিষয়ক তথ্যের ওয়েবসাইট: https://www.univcan.ca/
২. কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ওয়েবসাইট: https://www.ouac.on.ca/
৩. স্টুডেন্টবিষয়ক সরকারি ওয়েবসাইট: https://www.canada.ca/en/immigration-refugees-citizenship/services/study-canada.html
৪. উপকারী ওয়েবসাইট: https://www.studyincanada.com/ এবং http://immigrationandsettlement.org/
কানাডায় জনপ্রিয় তিনটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম:
১. ভেনিয়ার কানাডা গ্রাজুয়েট স্কলারশীপ (Vanier Canada Graduate Graduate Scholarships (Vanier CGS): প্রতিবছর কানাডিয়ান সরকার মোট ১৬৭টি এই বৃত্তি প্রদান করে থাকে এবং বছরের যে কোনো সময়েই বিভিন্ন কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য ভ্যানিয়ার স্কলারশিপসহ মোট ৫০০ জনের মতো শিক্ষার্থী থাকে।
আপনাকে প্রথমে কানাডিয়ান কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে। এই বৃত্তির পরিমাণ বছরে প্রায় ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলার, যা পিএইচডি প্রোগ্রামের তিন বছর পর্যন্ত দেওয়া হয়। যোগ্য হওয়ার জন্য একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, গবেষণার সম্ভাব্যতা এবং নেতৃত্ব গুণাবলি এই তিনটিকেই সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
প্রার্থীরা যে কানাডিয়ান ইন্সটিটিউশনে পড়তে চান, তাদের দ্বারা অবশ্যই মনোনীত হতে হবে। প্রতি বছর প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়, আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার জন্য এই বৃত্তি পেয়ে থাকে
আবেদনের সময়সীমা: জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে আবেদনকারীরা প্রতিষ্ঠান সিলেক্ট করে আবেদনপত্র প্রস্তুত এবং জমা দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যেই Vanier CGS প্রোগ্রামে মনোনয়ন জমা দিতে হবে। ২০১৯ সালের মার্চের শেষের দিকে মনোনয়নকারীদের ইমেল করা হবে। ১ মে ২০১৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ অথবা ১ জানুয়ারি ২০২০ এ স্কলারশিপের টাকা দেওয়া শুরু হয়।
লিঙ্ক: www.vanier.gc.ca/en/home-accueil.html
২. ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স এবং ডক্টরাল স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ডস (International Master’s and Doctoral Student Awards at the University of Waterloo): এই বৃত্তি মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য প্রতি সেমিস্টারে $২,০৪৫ দুই বছরের জন্য এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য প্রতি সেমিস্টারে $৪,০৪৯ তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য বৃত্তির বিশাল সুযোগ হচ্ছে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স এবং ডক্টরাল স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ডস। এই বৃত্তির জন্য যোগ্য শিক্ষার্থীদের ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাভিত্তিক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রামগুলোতে পূর্ণ-সময় নথিভুক্ত থাকতে হবে এবং একটি বৈধ কানাডিয়ান স্টাডি পারমিট থাকতে হবে।
লিঙ্ক: uwaterloo.ca/graduate-studies/awardsandfunding/international-student-funding
৩. ওজিএস (The Ontario Graduate Scholarship (OGS): ওজিএস প্রোগ্রামটি স্নাতকোত্তর গবেষণায় মাস্টার্স এবং ডক্টরেট পর্যায়ে উৎসাহিত করার জন্য প্রাদেশিক সরকার অর্থায়ন করে। এই বৃত্তির মূল বিষয়গুলো হচ্ছে এটির মূল্য বছরে $১৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার। সর্বনিম্ন স্কলারশিপ হতে পারে দুই সেমিস্টার পর্যন্ত। এই বৃত্তির যোগ্যতা অর্জনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টকে স্টাডি পারমিট নিয়ে অন্টারিওতে থাকতে হবে।
নির্বাচন প্রক্রীয়া: একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, যেটার ওয়েট ৩০-৫০ শতাংশ এবং একাডেমিক মার্কস, প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি, পুরস্কার এবং অনার্সের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। রিসার্চ এবিলিটি ও পটেনশিয়াল ইন প্রোগ্রাম স্টাডি, সম্মেলন, উপস্থাপনা এবং মৌলিকত্ব দ্বারা নির্ধারিত হয়।
কমিউনিকেশান ও লিডারশিপ এবিলিটি, এটার ওয়েট কম মাত্র ০-২০ শতাংশ এবং এতে প্রাসঙ্গিক স্বেচ্ছাসেবক, নেতৃত্ব এবং একাডেমিক কাজের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হয়।
স্কলারশিপ ও ভিসা সহযোগিতায়:
কানাডায় স্কলারশিপ, স্টুডেন্ট ভিসা এবং ইমিগ্রেশন নিয়ে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড সেটেলমেন্ট’-এর স্বেচ্ছাসেবীরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন। সম্পূর্ণ অলাভজনক কার্যক্রম হিসেবে পরিচিত ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড সেটেলমেন্ট‘-এর ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক গ্রুপ থেকেও বিনামূল্যে এসব বিষয়ে সহযোগিতা লাভ করা সম্ভব।
বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকের চোখেই থাকে। কিন্তু পড়তে যাওয়ার আগে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে যাওয়াটা অনেক জরুরি। এজেন্সি এবং দালালরা কাগজ প্রসেসিং করে টাকা নিতেই আগ্রহী। কিন্তু একজন স্টুডেন্টকেই কানাডা আসার ব্যাপারে সঠিক তথ্য অনুসন্ধান এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।