আমার পরিচিত এক বাঙালি আপার সঙ্গে দেখা হলো আজকে সকালে। আপার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক! অনেকটাই আবেগ মিশ্রিত। আমাকে জানালেন খুশি কারণটাও। ওনার মেয়ে অনেক ভালো চাকরি পেয়েছে। বেতন অনেক উঁচুতে। সে কেবলই ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করেছে। আর জুত মতো চেষ্টা করার ফলে পেয়েছেও তার রেজাল্ট। মানে ভালো চাকরি পেয়ে গেছে। সে পড়াশোনা চলাকালীন সব সময়ই অনলাইনে চাকরি করেছে। কখনো পার্ট টাইম, আবার কখনো ফুল টাইম। পড়াশোনার শেষে ঐ কোম্পানি তাকে ফুলটাইম পার্মানেন্ট কাজের জন্য আফারও করেছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কপালে জুটেছে আরো ভালো অপশন। বাহ্ লেগে গেল ব্যাটে-বলে। এখন ঐ আপার দারুণ খুশি। আর হবেই বা না কেন। ওনার সন্তানগুলোও মাশাআল্লাহ অনেক মা দরদি। ভদ্র। শালীন। যদি কারোর সন্তান ইউনিভার্সিটিতে না যেতে পারে তাতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। যদি বড়ো চাকরিও না করতে পারে কিছুই আসে-যায় না। কিন্তু যদি অভদ্র হয়, বাবা-মাকে শ্রদ্ধা-রেসপেক্ট কিছুই না করে, ডিসিপ্লিনের ধারেও না যায়, তাহলে সবচেয়ে বড়ো ট্রাজেডি। এক ভয়ংকর অভিশাপ জীবনের প্রতিটা ভাঁজে ভাঁজে লেগে থাকে এবং থাকবে অনন্তকাল।
আপার মেয়ে একটা উদাহরণ। কানাডায় শুধু আপার মেয়ে একা নয়। এমন ইউনিভার্সিটি পাশ করা স্টুডেন্ট অসংখ্য রয়েছে। যাদের পড়ালেখার কোয়ালিটি, চাকরি পাওয়ার সহজ সমীকরণ বলতে পারেন একই রকম। একে-অপরের থেকে উনিশ-বিশ হতে পারে তবে সবাই ভালো কিছু করে।
এখন আসা যাক আপার মেয়ে কেন চাকরি পেল তার কিছুটা পোস্টমর্টেম করি।
* মেয়েটা যেহেতু কানাডায় বেড়ে ওঠা ও ছোট ক্লাস থেকেই কানাডার স্কুলে পড়লেখা করেছে সে পরিবেশের সঙ্গে অত্যন্ত মানানসই। সে স্মার্ট। স্মার্ট হলো মাথায় কতোটা ব্রেণ আছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার করার কৌশল। অবশ্যই কথা বলার টেকনিক আরো অনেক কিছু।
* ইউনিভার্সিটি থেকে ভালো বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করেছে। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। যা ভালো চাকরি পেতেও সাহায্য করে।
* মেয়েটা এখানে বেড়ে ওঠা। ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া। তাই তার ইংরেজি ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল যথেষ্ট শক্ত। যা তার চাকরি পেতে সাহায্য করেছে।
*মেয়েটা যে ফিল্ডে চাকরিটা পেয়েছে, সেই ফিল্ড সম্পর্কে তার একটা ধারণা আছে। সেটা পড়াশোনার মাধ্যমেও হতে পারে।
*সর্বোপরি মেয়েটা চাকরির জন্য চেষ্টা করেছে।
এখন তো আপনারা রেডি টু রাইট এ কমেন্ট। বলবেন যে, “ঐ একটা মেয়ে দিয়েই আপনি বিচার করতেছেন? আমি চাকরি পাচ্ছি নে এই ধরেন সাত/আট বছর হবানে। আমি কেন চাকরি পাচ্ছি নে? বলেন কেন? কারণ কানাডায় চাকরি নেই।” এসব কমেন্ট আপানাদের মনে উঁকি মারতেই পারে।
আর আমি বলতেছি হ্যাঁ, আপনার ভাবনাও সত্যি। তবে কী জানেন, ঐ যে মেয়েটার অনেক কিছু তুলে ধরেছি এর সবকিছুই আবশ্যক কানাডায় ভালো পদে একখানা চাকরি পেতে। তা না হলে অভিযোগ আপনি করেই যাবেন সারা জীবন। চাকরি পাচ্ছি না, চাকরি নেই। তবে চাকরি পাওয়া সহজ না বা চেষ্টা করে পেতে হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরেকটা কথা আছে। যার যেমন যোগ্যতা সে তেমন চাকরি বা কাজ পাবে বা করতে পারবে।
আরো একটা কথা, কপাল বলে একটা জিনিস আছে। নিয়তি যাকে বলে। এর প্রতিফলন চরমভাবে ঘটে মানব ভাগ্যে। যা আমি অত্যন্ত কঠোরভাবে বিশ্বাস করি। নিয়তির সঙ্গে যৌথভাবে বসবাস হলো চেষ্টার। অধ্যবসায়। একটুখানি চেষ্টা করবেন, আর বিশাল কিছু পেয়ে যাবেন এমন ম্যাজিক এখনো দৃশ্যমান নেই।
আমি যখন সতের বছর আগে এসেছিলাম কানাডায়, তখন কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা, লেখাপড়া কোনো কিছুই ছিল না। আপনারা অনেকেই আমার থেকে অনেক স্মার্ট, ল্যাঙ্গুয়েজে পারদর্শী। কিন্তু আমি আমার চেষ্টায় এখন পর্যন্ত যেখানে আছি, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে সবকিছুর জন্য শুকরিয়া। অনেক ভালো রেখেছেন আল্লাহ। আর এগুলো সম্ভব হয়েছে একমাত্র আল্লাহর রহমত, নিয়তির সৌভাগ্য, আর হার না মানা চেষ্টা।
হয়তো অন্য কিছুর জন্য রয়েছে আক্ষেপ বা নিয়তিকে দোষারোপ করার কারণ। সেটাই স্বাভাবিক যে, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যার শুধুই সুখ রয়েছে, নেই কোনো দুঃখ। আবার দুঃখ বা না পাওয়ার পাশেও থাকে অন্য কিছু পাওয়ার আনন্দ।
জীবনটার মানে অন্য রকম। মেনে নিতে হয় সবকিছু ।