প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী কানাডায় পড়তে আসেন। অনেকে আসার জন্য চিন্তা করেন। আবার অনেক খরচের কথা আগে থেকে মাথায় না রেখে কানাডায় পড়তে আসার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু মাঝপথে বেশ কিছু টাকা খরচ করে পরে টাকা জোগাড় করতে না পেরে থেমে যান। ফলে কানাডাও আসা হয় না আবার অনেক টাকা শুধু শুধু খরচ হয়ে যায়। আজকে আমরা কানাডায় পড়তে আসার প্রাথমিক খরচের একটি ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করব। তবে এ খরচ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
প্রথম দরকার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানানো। বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ (২১ কর্মদিবস) ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি (১০ কর্মদিবস) ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতীব জরুরি (২ কর্মদিবস) ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। সব ফির সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
কানাডায় আসতে হলে ভালোভাবে আইইএলটিএস-এর প্রস্তুতি নিতে হবে। যাঁরা ইংলিশে খুবই দক্ষ, তাঁদের এ খাতে খরচের দরকার নেই। অনলাইনে এই বিষয়ে হাজারো কনটেন্ট আছে। একটি ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ৬ থেকে ৭.৫ পর্যন্ত আইইএলটিএস স্কোর প্রয়োজন হয়। যাঁরা কোচিং করতে চান, তাঁদের কোচিং ও মডেল টেস্ট বাবদ কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা খরচ ধরতে হবে।
বাংলাদেশে এখন আইইএলটিএস পরীক্ষার ফি ২০ হাজার টাকার বেশি। তবে ডলারের দামের তারতম্যে এই ফি কমবেশি হয়।
আইইএলটিএসে একটি ভালো স্কোর পাওয়ার পর কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। চার থেকে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা ভালো। আপনি যে বিষয়ে পড়তে চান, সে বিষয়ে ভালো চার থেকে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করুন। তাহলে কেউ না কেউ আপনাকে অফারলেটার পাঠাবে। এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ফি ১০০ থেকে ১৫০ কানাডিয়ান ডলার। এই বাবদ আপনার খরচ হবে ৪০ হাজার টাকা। তবে ডলারের দামের তারতম্যে খরচ কমবেশি হতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে একটি পুলিশ ক্লিয়ান্সের দরকার হয়। সোনালী ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫০০ টাকার একটি চালান জমা দিতে হয়।
আপনার সার্টিফিকেটের ট্রান্সকিপ্ট তুলতে হবে এবং তা কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। এ বাবদ খরচ হবে চার হাজার টাকা।
আপনার অধিকাংশ ডকুমেন্ট নোটারি করতে হবে। এর পাশাপাশি আপনার অভিভাবকের সম্পদের মূল্য ইভল্যুশন করতে হবে। এই বাবদ আপনার খরচ হতে পারে ১৫ হাজার টাকা।
১৮ বছর হলে কানাডায় আবেদন করতে ট্যাক্স ফাইল জমা দিতে হয়। এ বাবদ খরচ হবে পাঁচ হাজার টাকা।
কানাডায় পড়তে এলে বায়োমেট্রিক প্রয়োজন হয়। তার খরচ হবে ৮৫ কানাডিয়ান ডলার (১ কানাডা ডলার সমান ৭৮ টাকা), যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ হাজার ৬৬৩ টাকা।
কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এ আবেদন ফি ১৫০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১১ হাজার ৭০০ টাকা।
কানাডায় আসার জন্য কানাডিয়ান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কয়েকটি মেডিকেল সেন্টার আছে বাংলাদেশে। সে জায়গা থেকে আপনার মেডিকেল করতে হবে। তার ফি ১৭০ কানাডিয়ান ডলার, যার খরচ দাঁড়াবে বাংলাদেশি টাকায় ১৩ হাজার ২৬০ টাকা।
কানাডার বিমান ভাড়া বাবদ প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হবে। যত আগে টিকিট কাটবেন, খরচ তত কম হবে। দেরি করে কাটলে খরচ বেশি হবে।
আপনার জন্য নতুন দেশ কানাডা। এখানে গরম কাপড় আনতে হবে। আরও অনেক কিছু কিনতে হয় নতুন একটি দেশে আসতে হলে। এই বাবদ খরচ হবে কমপক্ষে ৫৫ হাজার টাকা।
কানাডায় পড়তে এলে অগ্রিম টিউশন ফি দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ফি কমবেশি হয়। বাংলাদেশি টাকায় এক সেমিস্টারের খরচ কমপক্ষে তিন লাখ টাকা।
কানাডায় আসার আগে কয়েক মাস চলার মতো টাকা আনতে হবে। এখানে লিভিং এক্সপেন্স পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে বেশি। আন্ডার গ্রেডের শিক্ষার্থীদের কাজের অনুমতি থাকে না। তার ওপরের গ্রেডের শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারেন। এসেই যে কাজ পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই কমপক্ষে পাঁচ হাজার কানাডিয়ান ডলারের কমবেশি হাতে আনা ভালো, যা বাংলাদেশি টাকায় চার লাখ টাকা। যাঁরা সেলফ ফান্ডে পড়তে আসবেন, তাঁদের জন্য এই খরচ ১০ লাখ টাকা। ব্যক্তিভেদে কমবেশি হতে পারে খরচ। যাঁরা বৃত্তি নিয়ে আসবেন, তাঁদের জন্য খরচ বেশ কম হবে।
এখানে কোনো কনসালট্যান্সি ফি ধরা হয়নি। কানাডার ওয়েবসাইটে সব সুন্দরভাবে লেখা আছে। তা ছাড়া প্রতিটি বিষয়েও লাইন কনটেন্ট আছে। শুধু শুধু টাকা খরচ করে কারও সাহায্য নেওয়ার দরকার নেই। যাঁরা আপনার আগে কানাডায় পড়তে গিয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করুন। আশা করা যায়, তাঁরা আপনাকে বিনা মূল্যে সাহায্য করবেন।