শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ অপরাহ্ন

কানাডায় অভিবাসন করতে চাইলে করণীয়

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আপনি কি কানাডার ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার কথা ভাবছেন? ভাবছেন, কীভাবে এই জটিল কাজটি সম্পন্ন করবেন? আপনার এই চিন্তার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির প্রতারক, অসাধু ইমিগ্রেশন ব্যবসায়ী, ‘যোগ্যতাহীন স্বঘোষিত প্রফেশনাল’ কনসালট্যান্ট এবং দালালরা  ইমিগ্রেশন-প্রত্যাশী মানুষের কাছ থেকে সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ইমিগ্রেশন করিয়ে দেওয়া ও সার্ভিস চার্জের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ রকম অবস্থায় কীভাবে কানাডা নামের স্বপ্নের দেশটিতে স্থায়ীভাবে যাওয়া যেতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কানাডার স্কিল্ড মাইগ্রেশনের জন্য সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় প্রশ্নগুলো হলো :

২. আপনার সেই যোগ্যতাগুলো আছে কি না?

৩. যদি না থাকে, তবে সেই আংশিক ঘাটতিগুলো কী কী এবং উত্তরণের উপায় কী?

কানাডা একটি দ্বিভাষিক (bilingual) দেশ। ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ এ দেশের অফিশিয়াল ভাষা। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর অন্যতম এই দেশটিতে রয়েছে কাজ করার অনেক সুযোগ ও বসবাস করার চমৎকার পরিবেশ। কানাডার নাগরিক হিসেবে একই সঙ্গে আপনি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করতে পারবেন। আয়করের ক্ষেত্রে শুধু কানাডায় উপার্জিত অর্থের ওপর আয়কর দিতে হয়। কানাডায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে ফেডারেল ও প্রভিন্সনাল সরকারের সরাসরি আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়। পাবলিক স্কুলে ১৮ বছর পর্যন্ত পড়াশোনা ফ্রি। নতুন অভিবাসী হিসেবে আপনার ভাষাগত দুর্বলতা থাকলে সরকারই আপনার জন্য ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেবে। যাঁরা নতুন ব্যবসা করতে চাইবেন, তাঁদের জন্য রয়েছে অন্তত দুই লাখ ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলার লোনের ব্যবস্থা। নতুন অভিবাসী হিসেবে চাকরি পেতে অসুবিধা হলে বা অসুস্থতার কারণে কাজ করতে না পারলে, সরকার প্রদত্ত নানা রকম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। সাধারণত সরকার চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে আর্থিক সুবিধা দেয়, তা দিয়ে প্রায় ৯৮ শতাংশ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা যায়। অভিবাসনের প্রোগ্রামগুলোকে মোটাদাগে নিচের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. ইকোনমিক ইমিগ্র্যান্টস

মোট সাতটি সাব-ক্যাটাগরি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো স্কিল্ড ওয়ার্কার, ফেডারেল স্কিল্ড ট্রেড, প্রভিন্সনাল নমিনি ক্লাস ও কানাডিয়ান এক্সপেরিন্স ক্লাস। এক্সপ্রেস এন্ট্রির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রাম। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখে সর্বশেষ ড্রতে তিন হাজার ৩৫০ জন আইটিএ পেয়েছেন। সর্বনিম্ন সিআরএস স্কোর ছিল মাত্র ৪৩৮। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ২১ হাজার জন আইটিএ পেয়েছেন। এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে প্রতি পনেরো দিনে ৩৫০০-৪০০০ জন স্কিল্ড ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে আসার আমন্ত্রণ পাচ্ছে। আইটিএ হচ্ছে ইনভাইটেশন টু অ্যাপ্লাই, অর্থাৎ এক্সপ্রেস এন্ট্রি পুল থেকে পিআর হিসেবে আবেদনের সুযোগ। কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েট, দুই বছরের ওপরের চাকরির অভিজ্ঞতা, আইইএলটিএসে কমপক্ষে ৬.৫ থাকলে আবেদন করা যায়। তবে কানাডা সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ১০টি পেশাজীবীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

পেশাগুলো হলো সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রজেক্ট ম্যানেজার, বিজনেস অ্যানালিস্ট, কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ, আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজার, সিনিয়র অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও ম্যানুফ্যাকচারিং। এ ছাড়া অন্যান্য দক্ষ পেশাজীবীও আবেদন করতে পারবেন। নিশ্চিত জব অফার হলে ফাইলটি কনফার্ম করা সম্ভব।

আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রামের মতো নর্দার্ন ওন্টারিওতে খুব শিগগির একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু হচ্ছে। একমাত্র সাস্কাচেওয়ান ছাড়া সব প্রভিন্সেই শুধু এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে আবেদনকারী বা যাঁদের কানাডার ভ্যালিড জব অফার আছে বা যাঁরা কানাডাতে টেম্পোরারি ফরেন ওয়ার্কার কিংবা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদেরই নমিনেশন দিচ্ছে।

ওন্টারিও, নিউব্রান্সউইক, কুইবেক, প্রিন্স অ্যাডওয়ার্ড আইল্যান্ডসহ অন্যান্য সব প্রভিন্সেই ফ্রেঞ্চ জানা লোকজন বা যাঁদের কানাডীয় প্রফেশনাল লাইসেন্স আছে বা যাঁদের আপন ভাইবোন কানাডাতে আছে, তাঁদেরই নমিনেশন দিচ্ছে।

২. ফ্যামিলি ক্লাস

নিকটাত্মীয়ের মধ্যে কেউ যদি কানাডার স্থায়ী নাগরিক থেকে থাকেন, তবে তিনি তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের স্পন্সর করে নিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৯ সালে ২০ হাজার বাবা-মা বা তাঁর আগের প্রজন্ম আসতে পারবেন। মাত্র পাঁচ হাজার কোটা দিয়ে ২০১৭ সালে লটারির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

৩. স্টুডেন্ট ভিসা

কানাডা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ভিসা অনেক সহজ করে দিয়েছে। তারা যাতে পড়াশোনা শেষ করে খুব দ্রুত চাকরি পায় এবং পিআর হতে পারে, সে জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

কানাডা ২০১৯ সালে কমপক্ষে পাঁচ হাজার ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু করবে, এ কথা আইআরসিসি থেকে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে প্রথমে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে এবং অফার লেটার গ্রহণ করতে হবে। এরপর স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা নামক কোনো ভিসা হয় না। আবেদন করতে হয় ইটিএ নামক ভিসার জন্য। তবে ছয় মাসের কম সময়ের মেয়াদের কোনো প্রোগ্রামের জন্য কোনো স্টাডি পারমিট নিতে হয় না। এ ধরনের ভিসার জন্য আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে ভালো আইইএলটিএস স্কোরও থাকতে হয়।

৫. ট্যুরিস্ট ভিসা

প্রতিবছর প্রায় ৩৫ মিলিয়ন লোক কানাডায় বেড়াতে যায়। দুই ধরনের ট্যুরিস্ট ভিসা হয় এখানে। সিঙ্গেল এন্ট্রি ও মাল্টিপোল এন্ট্রি। সর্বোচ্চ ১০ বছরের মাল্টিপোল ভিসা দেওয়া হয়। তবে ছয় মাস পর্যন্ত একসঙ্গে থাকা যায়। সাধারণত ভিসা ইস্যু করতে তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগে। অনলাইন ও অনপেপার এ দুই মাধ্যমে আবেদন করা যায়। আবেদন করতে মূলত যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয় :

দুই কপি সদ্য তোলা রঙিন ছবি (পাসপোর্ট সাইজ, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড, ম্যাট পেপার ল্যাব প্রিন্ট)।

– ছয় মাস মেয়াদের পাসপোর্ট।

– পাসপোর্টের ১ ও ২ নম্বর পাতার ফটোকপি (পুরোনো পাসপোর্ট থাকলে অবশ্যই তা সঙ্গে নিতে হবে)।

– জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি।)

– ইংরেজি অক্ষরে ছাপা দুই কপি ভিজিটিং কার্ড (ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।

– ছয় মাস ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট (ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষরসহ অরিজিনাল কপি ও এক সেট ফটোকপি)।

– ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপিসহ ইংরেজি অনুবাদ ও নোটারাইজড-এর অরিজিনাল কপি (ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।

– কোম্পানির দুই কপি ইংরেজি অনুবাদ ও নোটারাইজড-এর অরিজিনাল কপি (ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।

– সদ্য বিবাহিত ক্ষেত্রে নিকাহনামার ফটোকপিসহ ইংরেজি অবুবাদ ও নোটারাইজড-এর অরিজিনাল কপি।

– N.O.C – নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের অরিজিনাল কপি ও এক সেট ফটোকপি (বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।

– অবসরের কাগজের ফটোকপি, ইংরেজি অনুবাদ ও নোটারাইজড-এর অরিজিনাল কপি (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।

– স্টুডেন্ট আইডি কার্ড অথবা সর্বশেষ বেতন রশিদের ফটোকপি (ছাত্র/ছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।

বাংলাদেশের যে কয়েকজন অভিবাসন আইনজীবী অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com