করোনা মহামারিতে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশিরভাগ দেশে চলছে ব্যাপক কড়াকড়ি। এর মধ্যে দূতাবাস খোলা, ভিসার ধীরগতির কারণে বাংলাদেশ থেকে নতুন নতুন দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশের চেষ্টারত ইচ্ছুক অনেকে।
রোমানিয়া সহ পূর্ব ইউরোপ, বলকান অঞ্চলের অনেক দেশ এবং আলবেনিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশের ব্যাপক ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। কিন্তু এসব দেশে আসাদের কতজন সঠিক তথ্য নিয়ে আসতে পারেন এবং এসে বৈধভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আসেন তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সংশয়।
২৫ হাজার নতুন কোটা
রোমানিয়া সরকারের জেনারেল ইন্সপেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (জিআইআই) জানায়, জরুরি অধ্যাদেশ ৯৪ এর আওতায় ১২ ডিসেম্বর ২০০২ তারিখ থেকে ইইউ বাইরে থেকে আগত অভিবাসীদের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এবং ‘টিআর’ বা টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট প্রদান করা শুরু হয়। শ্রমবাজারে প্রতি বছর কত সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক নেয়া হবে সেটি শ্রম ও সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে অনুমোদিত হয়। এটি শ্রম বাজারের গতিশীলতা এবং রোমানিয়ায় শ্রম অভিবাসনের নীতি অনুসারে প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট কোটা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের জন্য সর্বমোট ২৫,০০০ শ্রমিকের প্রাথমিক কোটা নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে রোমানিয়ান অর্থনীতি সচলের লক্ষ্যে আগস্ট মাসে আবার নতুন করে ২৫ হাজার বিদেশি কর্মী আসার অনুমোদন দেয়া হয়।
রোমানিয়ায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা
জিআইআই ইনফোমাইগ্রেন্টস কে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান উল্লেখ করতে গিয়ে জানায়, ৩১ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত সর্বমোট তিন হাজার ৩০৩টি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ইস্যু করা হয়েছে যেটি ২০২০ সালে ছিল এক হাজার ৭৮৯টি। এর মধ্যে ২০২১ সালে ৪৭১জন বাংলাদেশি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছেন।
জিআইআই আরও জানায়, ৩১ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত সর্বমোট ৭৪৭ জন বাংলাদেশি বৈধভাবে রোমানিয়াতে বসবাস করছেন, যাদের মধ্যে ৬৮৪ জন নাগরিক ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় বসবাস করছেন। বাকিদের মধ্যে ২১জন পারিবারিক ভিসায়, ১৭জন ছাত্র হিসেবে এবং ১১জন দেশটিতে স্থায়ী নাগরিক হিসেবে বসবাস করছেন।
বিপুল সংখ্যক লোক আসা যেমন একদিকে অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, অপর দিকে ভুল তথ্যের জন্য তারা ইউরোপের অন্য দেশে প্রবেশ করে অবৈধ হয়ে পড়াটাও বেশ শঙ্কার।
দরকার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যৌথ সরকারি চুক্তির আওতায় কৃষি, নির্মাণ খাত সহ বিভিন্ন সেক্টরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী ও অস্থায়ী দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক প্রেরণ করে থাকে। যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের তেমন কোন বড় অংকের টাকা পরিশোধ করতে হয় না। অনিয়মিত অভিবাসন রোধে এটি হতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশল।
বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল শ্রমবাজারের পরে সরকারি উদ্যোগে ইউরোপের কোথাও এরকম উদ্যোগ নিতে দেখা যায় নি।
বর্তমানে বিভিন্ন এজেন্সির সাহায্যে একটি কোম্পানি থেকে ওয়ার্ক পারমিট আনতে একেক জন ব্যক্তিকে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। অনেক সময় আবেদনকারীদের না জানার সুযোগে বিপুল অংকের টাকা, সময় এবং ভুয়া তথ্যের কারণে অবৈধ অভিবাসনের পথে পা বাড়ান অভিবাসীরা।
সঠিক ভিসা ও কাজের অনুমতি যেভাবে বুঝবেন
জিআইআই জানিয়েছে, জরুরি অধ্যাদেশ ৯৪ এর আওতায় একজন বিদেশিকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আসতে অবশ্যই প্রথমে কোনো একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি কাজের অনুমতি বা পারমিট নিতে হবে।
তারপরে তাকে ভিসার আবেদনের জন্য সশরীরে নিকটস্থ রোমানিয়া দূতাবাসে আবেদন জমা এবং বায়োমেট্রিকের ছাপ দিতে হবে। আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে আবেদনকারী নিজে তার ভিসাসহ পাসপোর্ট সংগ্রহ করবেন দূতাবাস থেকে। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ একজন আবেদনকারীর হয়ে দূতাবাসে কোনো কাজ করা সম্ভব নয়।
সুতরাং ভুয়া ভিসা থেকে দূরে থাকার উপায় হলো যাবতীয় কার্যক্রম দূতাবাসের মাধ্যমে হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা।