শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

কক্সবাজারের সৌন্দর্যে ৪ দেশের পর্যটকরা মুগ্ধ

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩

পূর্বদিকে পাহাড় আর পশ্চিমে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। কক্সবাজারে নরম বালু মাড়িয়ে এগিয়ে গেলে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন, সঙ্গে হিমেল হাওয়া। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখে উচ্ছ্বসিত ভুটানের ট্যুরিজম বিভাগের কর্মকর্তা কেজাং চোদেন। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সমুদ্রসৈকত দেখে তার মতো অভিভূত নেপালের ট্যুর অপারেটর তিলক ছত্রিও। চার দেশের পর্যটন খাতের প্রায় ৯৭ জন প্রাণবন্ত হয়ে উপভোগ করেছেন সূর্যাস্তের মুহূর্ত। তবে সূর্য ঢোবার পর কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য আর কোনও বিনোদনের ব্যবস্থা নেই দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তারা।

আঞ্চলিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণের প্রচারে জন্য মুজিব’স বাংলাদেশ ট্যুরিজম প্রোমোশন অ্যান্ড বিটুবি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিল বাংলাদশে ট্যুরিজম বোর্ড। এই আয়োজনে অংশ নিতে নেপাল থেকে ১২ জন, ভুটান থেকে ১৪ জন, শ্রীলঙ্কা থেকে ১৯ জন এবং ভারত থেকে ৫২ জন ট্যুর অপারেটর আসেন।

আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে ২৭ মে চারটি দেশ থেকে আসা ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে বাংলাদেশের ১২৫ জন স্টেক হোল্ডারের বিজনেজ টু বিজনেজ (বিটুবি) মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ মে ৪ দেশের ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন খাত-সংশ্লিষ্টতের পর্যটন রাজধানীখ্যাত কক্সবাজারে ভ্রমণে নেওয়া হয়।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পর্যটনের প্যাকেজ করতে আগ্রহী হয়েছেন তারাভবিষ্যতে বাংলাদেশে পর্যটনের প্যাকেজ করতে আগ্রহী হয়েছেন তারা

বাংলাদশে ট্যুরিজম বোর্ডের এ আয়োজন আঞ্চলিক পর্যায়ে পর্যটন সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে মত দিয়েছেন চার দেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ পর্যটনের সম্ভাবনা কাজে লাগতে ব্যাপক হারে প্রচারের পরামর্শ দেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পর্যটনের প্যাকেজ করতে আগ্রহী হয়েছেন তারা। তবে পর্যটকদের জন্য কার্যকলাপ আরও বেশি করার পরামর্শ দিয়ছেন চারটি দেশের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

২৮ মে সকালে ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আসেন চার দেশের ৯৭ জন ট্যুর অপারেটর ও এ খাতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রথমেই তাদের নেওয়া হয় ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ রামুতে। পাহাড়চূড়ার ১০০ ফুট লম্বা গৌতম বুদ্ধের সিংহশয্যা মূর্তি পরিদর্শন করেন তারা। ভুটান ও শ্রীলঙ্কার অনেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাদের আগ্রহ ছিল ভিন্ন রকমের।

বাংলাদেশের বৌদ্ধ পূরাকীর্তি, স্থাপত্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য দর্শনীয় স্থান। বুদ্ধিস্ট হেরিটেজগুলো বিদেশে প্রচার হলে শ্রীলঙ্কা, ভুটান, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার থেকে পর্যটক বাংলাদেশ আসবে বলে মত দিয়েছেন বিদেশি ট্যুর অপারেটররা।

শ্রীলঙ্কা ট্যুরজিম প্রমোশন ব্যুরোর পরিচালক (জনসংযোগ) মাধুভানি পেরেরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশের বুদ্ধিস্ট হেরিটেজ পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সমুদ্র কিংবা পাহাড় অনেক দেশেই আছে। তবে বুদ্ধিস্ট হেরিটেজ সব জায়গায় নেই। ফলে এটি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে পর্যটক আর্কষণ করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে বুদ্ধিস্ট জনগোষ্ঠী ধর্মীয় আগ্রহের কারণেই বাংলাদেশে বেড়াতে আসবেন।

বাংলাদেশের সমুদ্র ভুটানের নাগরিকদের জন্য আর্কষণীয় স্থান হতে পারে

বাংলাদেশের সমুদ্র ভুটানের নাগরিকদের জন্য আর্কষণীয় স্থান হতে পারে

পরে রামু থেকে তাদের কক্সবাজারের পাটুয়ারটেক বিচে নেওয়া হয়। মেরিন ড্রাইভে চলার পথে পূর্ব পাশের পাহাড় আর পশ্চিমের সমুদ্রে মুগ্ধ হন তারা। বিচে নেমেই অনেককেই পানিতে পা ভিজিয়ে উপভোগ করেন।

ভুটানের ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের সহকারী ট্যুরিজম অফিসার কেজাং চোদেন বলেন, এবারই প্রথম আমি বাংলাদেশে এসেছি। কক্সবাজারের সৌন্দর্য দেখে আমার বেশ ভালো লেগেছে। এত দীর্ঘ বিচ, সত্যি অসাধারণ। বাংলাদেশের সমুদ্র ভুটানের নাগরিকদের জন্য আর্কষণীয় স্থান হতে পারে।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের আটটি প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও অরুনাচল। এসব রাজ্য থেকে ৫২ জন ট্যুর অপারেটর যুক্ত ছিলেন এই আয়োজনে।

আসামের ট্যুর অপারেটর নওশাদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। আসাম থেকে সহজে বাংলাদেশ ভ্রমণ সম্ভব হবে। আসামে কক্সবাজার নিয়ে ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে আশা করছি ইতিবাচক সাড়া পাবো।

তবে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও কিছু বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বিদেশি ট্যুর অপারেটররা। কক্সবাজারে সন্ধ্যার পর পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা নেই দেখে হতাশা হন তারা।

পর্যটকরা বিনোদনের মাধ্যমে টাকা খরচ করতে আসে, তাদের খরচের জায়গা সৃষ্টি করতে হবে

পর্যটকরা বিনোদনের মাধ্যমে টাকা খরচ করতে আসে, তাদের খরচের জায়গা সৃষ্টি করতে হবে

এ নিয়ে ভুটান গুরো অ্যাডভেঞ্চার্সের সিইও শ্রী প্যাল্ডেন বলেন, পর্যটকরা অল্প সময়ের জন্য বেড়াতে আসেন। তাদের কাছে প্রতিটি সময় মূল্যবান। সন্ধ্যার পর যদি পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে কেউ আগ্রহী হতে চাইবেন না। কক্সবাজারকে জনপ্রিয় করতে চাইলে সন্ধ্যার পর বিনোদনের আয়োজন করতে হবে বাংলাদেশকে।

নেপালের ট্যুর অপারেটর সিয়াম পান্ডে বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে এসে পর্যটকরা কি রাতের বেলায় তাদের হোটেল রুমে প্রার্থনা করে সময় কাটাবে? আমি কক্সবাজরে এসে খুবই অবাক হলাম এখানে নাইট লাইফ বলে কিছু নেই। ড্যান্সবার, নাইট ক্লাব কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, পর্যটন নিয়ে কেন আমরা কাজ করছি? অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য। পর্যটকরা এসে কোথায় টাকা খরচ করবে, সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে। কক্সবাজারের সমুদ্র দেখা ও খাওয়া ছাড়া আর কোথায় পর্যটকরা অর্থ ব্যয় করবে, সেই ব্যব্স্থা তো দেখছি না। পর্যটকরা বিনোদনের মাধ্যমে টাকা খরচ করতে আসে, তাদের খরচের জায়গা সৃষ্টি করতে হবে।

চার দেশের ট্যুর অপারেটরদের নিয়ে ট্যুরজম বোর্ডের এ আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক (মিডিয়া) মো. ইউনুস। তিনি বলেন, এ উদ্যোগের ফলে আমরা আমাদের দেশকে তাদের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পেলাম। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বাড়বে। পাশপাশি চার দেশের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তাদের মতামত গ্রহণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে আমরা দ্রুত সময়ে বিদেশি পর্যটক আর্কষণে সক্ষম হতে পারবো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com