সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ অপরাহ্ন

কক্সবাজারে বৃষ্টির পানি সরেছে, হোটেলবন্দী পর্যটকেরা ছুটছেন সৈকতে

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্লাবিত হয় কক্সবাজার শহর। আজ শনিবার ভোর থেকে জমে থাকা পানি সাগর ও নদীতে নামতে শুরু করে। সকাল ১০টার দিকে শহরের প্রধান সড়ক, কলাতলী সৈকত সড়কের পানি পুরোপুরি সরে গেছে। এতে দুই দিন ধরে হোটেলকক্ষে আটকে থাকা পর্যটকের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। দল বেঁধে তাঁরা ছুটছেন সমুদ্রসৈকতে। তবে কয়েকটি উপসড়কে কাদা ও ময়লা পানি জমে থাকায় পর্যটকেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

বৈরী আবহাওয়ায় সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। সাগরে গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতের বালুচরে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পর্যটকদের সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সৈকতে উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত লাইফগার্ড স্টেশন সি-সেফের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার শহরজুড়ে জমে থাকা পানি দ্রুত সাগরে নেমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে ভাটা। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় সাগরে ভাটা শুরু হয়েছে। আবার জোয়ার শুরু হবে বেলা সোয়া ২টার দিকে। গতকালের ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছিল দুপুর ১২টার দিকে, তখন সাগরে জোয়ার ছিল। ফলে বৃষ্টির পানি নেমে যেতে না পেরে মারাত্মক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল, যা গত ৫০ বছরে দেখা যায়নি। তা ছাড়া হোটেল-মোটেল এলাকার সড়কগুলোর পাশে নির্মিত নালাগুলো ছোট, ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি, ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানি নালা উপচে সড়ক প্লাবিত হয়েছিল।

কেউ কেউ বিচ বাইকে চড়ছেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে
কেউ কেউ বিচ বাইকে চড়ছেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টেছবি: প্রথম আলো

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজারে বৃষ্টি শুরু হয়। ভারী বর্ষণে ওই দিন রাতে পাহাড়ধসে দুই পরিবারের পাঁচ শিশুসহ ছয়জন মারা যান। এ ছাড়া সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভারী বর্ষণে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের উপসড়কগুলো ডুবে যায়। তবে আজ শনিবার সকালে অধিকাংশ সড়কে পানি দেখা যায়নি। কয়েকটি সড়কে কাদামিশ্রিত ময়লা পানি জমে আছে।

আজ সকাল ১০টার দিকে কলাতলী সমুদ্রসৈকতে কয়েক হাজার পর্যটককে বালুচরে দাঁড়িয়ে উত্তাল সাগর উপভোগ করতে দেখা যায়। কেউ কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছিলেন। কেউ বা আবার ঘোড়ার পিঠে ও বিচ বাইকে চড়ে এদিক-সেদিক ছুটছিলেন। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৈকতের কয়েকটি অংশ ভেঙে গেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি চৌকি ও কয়েকটি দোকান ভাঙনের মুখে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কোনো কোনো পর্যটক সমুদ্রের পানিতে ঝাঁপ দিচ্ছেন। সি-সেফ লাইফগার্ডের কর্মীরা বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের সতর্ক করছেন। কিন্তু সেদিকে কারও খেয়াল নেই।

ঢাকার মগবাজার থেকে আসা ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরে পরিবার নিয়ে হোটেলকক্ষে আটকে ছিলেন। বৃষ্টির জন্য কোথাও যাওয়া হয়নি। আজ সকালে সবাইকে নিয়ে সৈকতে নামেন। হালকা বৃষ্টির সঙ্গে উত্তাল সমুদ্রের বিরূপ প্রকৃতি দারুণ উপভোগ্য।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়। আজ শনিবার দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়। আজ শনিবার দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টেছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, চার লেনের সৈকত সড়ক থেকে পানি সরে গেলেও শহরের ভেতরের কয়েকটি উপসড়কে কাদা মেশানো ময়লা পানি জমে আছে। এসব মাড়িয়ে পর্যটকদের হোটেল থেকে সৈকতে নামতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কলাতলী সৈকতের উত্তরে সুগন্ধা সৈকতেও অন্তত ১০ হাজার পর্যটকের সমাগম। পাশের সিগাল ও লাবণী সৈকতেও কয়েক হাজার পর্যটকের দৌড়ঝাঁপ দেখা গেল। সব মিলিয়ে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার পর্যটক সৈকতে নেমেছেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, আজ সকাল থেকে বৃষ্টি কমে গেছে। সড়কের পানিও নেমে গেছে। পর্যটকদের মনে স্বস্তি ফিরেছে। হোটেলকক্ষে আটকে পড়া পর্যটকেরা এখন সৈকতমুখী। পর্যটক টানতে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোর কক্ষ ভাড়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে।

উত্তাল সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করছেন পর্যটকেরা। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে
উত্তাল সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করছেন পর্যটকেরা। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাইক্যাপাড়া, বন্দরপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে অন্তত ৫৩০টি ঘর বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়। এতে অন্তত আড়াই হাজার শ্রমজীবী মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। এই ওয়ার্ডের ১৮টি পল্লিতে অন্তত ৭০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু ও ভাসমান শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। রান্না বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষ খাবার ও পানীয় জলের সংকটে আছেন। আজ বেলা ১১টার দিকে ওয়ার্ডটির সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, সাগরে ভাটা থাকায় শুক্রবার রাতে জমে থাকা পানি সাগরে নেমে যেতে পেরেছে। নইলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতো।

ভাঙনের মুখে টুরিস্ট পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকি। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে
ভাঙনের মুখে টুরিস্ট পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকি। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টেছবি: আব্দুল কুদ্দুস

ভারী বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী, বাঁকখালী ও রেজু নদীর পানি বেড়ে পেকুয়া, চকরিয়া, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী আছেন। পানিতে ডুবে কয়েক শ একরের বীজতলা, পানের বরজ, সবজি খেত নষ্ট হয়েছে। আশঙ্কা আছে পাহাড়ধসেরও।

আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত পানিবন্দী ৪৫ হাজার মানুষের জন্য ৪৫ মেট্রিক টন চাল ও বিপুল শুকনা খাবার বরাদ্দ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ। তিনি বলেন, বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার কাজ চলছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক চারটি দল মাঠে কাজ করছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com