বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

কক্সবাজারে দেখা গেলো ভয়ঙ্কর ‘রোবট দানব’

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সন্ধ্যার আলো–আঁধারির পরিবেশে সৈকতে দৈত্যদানব দেখে লোকজনের ভিড় জমে যায়। কৌতূহলী মানুষজনের প্রশ্ন, কী করে এলো এসব। উত্তর মিলতে দেরিও হলো না। সৈকত থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এমন ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্য, দূষণ সম্পর্কে মানুষকে জানানো। বেলাভূমিতে নির্মিত দানব প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে এই দানবগুলো।

সমুদ্রসৈকতে নামতেই চোখে পড়ে মানুষ আকৃতির ৫০ ফুট উঁচু বিশাল এক দানব। দুই পাশে আরও দুটির উপস্থিতি। যে দানবটি রক্ত-মাংসহীন প্রতীকী হলেও যার হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য।

জেলা প্রশাসন কক্সবাজার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত সৈকতের সুগন্ধা সীগাল পয়েন্টে প্রদর্শন করা হচ্ছে ‘ওশান প্লাস্টিক বর্জ্যে’ তৈরি এ দানব ভাস্কর্য। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে ‘রোবট ভাস্কর্য’র উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।

জেলা প্রশাসক বলেন, প্লাস্টিক দানবের মতো সমুদ্র ও জনজীবন ধ্বংস করছে এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকা এই ভয়াবহতা দ্রুতই রুখে দিতে হবে। এই সতর্কতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই ভাস্কর্য প্রদর্শনীর এই উদ্যোগ। আশা করছি এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহারের আরও সতর্ক হবে।

বিশেষ অথিতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মুহম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় যেকোনো উদ্যোগে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক না ফেলে এক্সচেঞ্জ স্টোরে জমা করেছে- যা প্লাস্টিক দূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সরকারি পলিসির সাথে সমন্বয় করে আমরা সারাদেশে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে প্লাস্টিক বর্জ্য ম্যানেজমেন্টে সরকারি খরচ যেমন কমবে তেমনি মানুষও জানতে পারবে কীভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আঁটা (গাম) সহ আরও কয়েকটি উপকরণ। ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি ওশান প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ‘রোবট দানব’। এটির উচ্চতা ৬২ ফুট। এটি বানাতে প্রায় ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে।

এদিকে, উদ্বোধনের আগেই বিকেলে প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত এ দানবটি দেখতে ভিড় করেন সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থী। অনেকে দৈত্য-দানবের ভয়ংকর রূপের মত প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হতে হবে বলে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

পরিবেশবাদীদের মতে, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে মানুষ প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত হচ্ছেন। বিদ্যানন্দের মত অন্যান্য সংগঠন ও সংস্থাগুলোকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।

এর আগে ২০২২ সালে সর্বপ্রথম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক দানব নির্মাণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এবার সেই দানব আরও ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছে। সাথে নিয়ে এসেছে আরও দুইটি দানব। তার মানে সমস্যা কমেনি বরং আরও বেড়েছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা এই দানব মানবজাতিকে ধীরে ধিরে গ্রাস করছে। পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। মানুষ যদি সচেতন হয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে দেয় ও রিসাইকেল করে তবেই এই দানব থেকে মুক্তি মেলবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com