যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী শহরের পর এবার ফিলাডেলফিয়ায় একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ওই প্লেনে থাকা ছয় আরোহীর সবাই হতাহত হয়েছেন।
এনবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেট রেসকিউ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নামের ওই সংস্থা নিশ্চিত করে বলেছে, বিমানটিতে এক শিশু রোগী ও তার অভিভাবক ছিলেন। এছাড়াও এতে পাইলট, কো-পাইলট, একজন চিকিৎসক ও একজন প্যারামেডিক উপস্থিত ছিলেন।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, রোগীর পরিবার, আমাদের কর্মী, তাদের পরিবার এবং দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের প্রতি আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
এদিকে মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে বলেছে, ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ছয়জনই মেক্সিকোর নাগরিক ছিলেন।
জেট রেসকিউ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মুখপাত্র শাই গোল্ড জানিয়েছেন, বিমানে থাকা শিশুটি যুক্তরাষ্ট্রে জীবযুক্তরাষ্ট্রেন রক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য এসেছিল এবং সুস্থ হয়ে মেক্সিকো ফেরার পথে ছিল।
গোল্ড বলেন, সফল চিকিৎসা শেষে শিশুটি বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুত ছিল এবং আমাদের দায়িত্ব ছিল তাকে মেক্সিকো পৌঁছে দেওয়া।
জানা গেছে, বিমানটির গন্তব্য ছিল মেক্সিকোর টিজুয়ানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যেখান থেকে শিশুটিকে স্থল অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা ছিল।
এদিকে ফিলাডেলফিয়ার শ্রাইনারস চিলড্রেনস হাসপাতাল নিশ্চিত করে বলেছে, দুর্ঘটনার সময় শিশুটি তার মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ করছিল এবং হাসপাতালে তার চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিয়ারজেট ৫৫ মডেলের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ফিলাডেলফিয়ার নর্থইস্ট বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছিল এবং মিসৌরির স্প্রিংফিল্ড-ব্রানসন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে ছিল। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এটি বিধ্বস্ত হয়।
এদিকে মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন প্রশাসন (এফএএ) ও ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) ইতোমধ্যেই এ দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এনটিএসবি প্রধান নিজেই এই তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছেন।
দুর্ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজে আগুনের শিখা ও কালো ধোঁয়া দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিধ্বস্ত হওয়ার পর একটি বিশাল আগুনের গোলা তৈরি হয়েছিল।
গৃহ সুরক্ষা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বিমানটি একটি কোণে দ্রুত নামতে নামতে মাটিতে আছড়ে পড়ে।
এফএএ-র সাবেক বিমান ট্রাফিক কন্ট্রোলার টড শেরিডান ইয়ারি বলেন, বিমানটি উড্ডয়নের পরপরই কোনো বড় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
এনবিসি নিউজকে তিনি বলেন, লিয়ারজেট ৫৫ একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বিমান। এটি উড্ডয়নের পরপরই কিছু মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে এমন ঘটনা খুবই বিরল।
ফিলাডেলফিয়ার মেয়র শেরেল পার্কার জানান, দুর্ঘটনার ফলে কয়েকটি বাড়ি ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মোট প্রাণহানির সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয়।
এদিকে দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় টেম্পল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা স্থিতিশীল এবং বাকিদের চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো জানান, তিনি ফিলাডেলফিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং রাজ্যের সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছেন।
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় আবহাওয়া ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন, হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল এবং বাতাসের গতিবেগ ছিল ৩০ মাইল প্রতি ঘণ্টা।
ফিলাডেলফিয়ার এই দুর্ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটল, যার মাত্র দুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ওয়াশিংটনের পোটোম্যাক নদীর ওপরে একটি যাত্রীবাহী জেট ও মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ৬৭ জন নিহত হন।
সূত্র: আনাদোলু