অফিস, বাসা, কাজের চাপ— এভাবেই চলছে জীবন। যান্ত্রিক জীবনে একটু বিশ্রামের জন্য প্রকৃতির কাছে যাওয়া খুব জরুরি। কিন্তু যাবেন কোথায়? বাড়তি ছুটিও নেওয়া যাবে না অফিস থেকে। হাতে কেবল সপ্তাহের একটি দিন। চাইলে কিন্তু এই দিনটিকেই কাজে লাগাতে পারেন। ঢাকার আশেপাশে এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানে সহজেই ডে ট্যুর দিতে পারবেন আপনি। এমন কিছু স্থান সম্পর্কেই চলুন জেনে নেওয়া যাক-
গোলাপ গ্রাম
নদী পার হয়ে ছোট্ট একটি গ্রাম। এই গ্রামের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে গোলাপের বাগান। সে সঙ্গে রয়েছে গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধাও। গ্রামের পথে হাঁটতে হাঁটতে আপনার মনে হবে পুরোটিই বিরাট গোলাপের বাগান।
কীভাবে যাবেন?
মিরপুর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা যায় গোলাপ গ্রামে। মিরপুর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে সাহদুল্লাহপুর ঘাটের উদ্দেশে ৩০ মিনিট পরপর ইঞ্জিনচালিত বোট ছাড়ে। যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা।
কোথায় খাবেন?
সাহদুল্লাহপুরের স্থানীয় হোটেলেই দুপুরের খাবার খেতে পারেন। চাইলে বাসা থেকেও খাবার তৈরি করে নিতে পারেন।
পানাম ও মেঘনার পাড়
ঢাকা শহরের পাশে থাকা অন্যরকম একটি স্থান হলো পানাম সিটি। পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের মধ্যে এটি একটি। পুরনো বাড়িগুলো দেখেই কাটিয়ে দিতে পারবেন সারাদিন। ঈসা খাঁর আমলে বাংলার রাজধানী ছিল পানাম নগর। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।
পানাম নগরের পাশেই মেঘনা নদী। নদীর পাড়ে গেলে শরতের সময় দেখা মিলবে কাশফুল ঘেরা বিস্তৃত মাঠের। চাইলে পানাম ঘুরে সেখানেও যেতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকার অদূরে ২৭ কি.মি দক্ষিণ-পূর্বে নারায়নগঞ্জের খুব কাছে সোনারগাঁতে অবস্থিত এই নগর। ঢাকার গুলিস্তান থেকে মোগরাপাড়া যায় এমন বাসে উঠে পড়ুন। সেখানে নেমে অটো বা রিক্সায় পানাম নগরীতে।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি একটি। ঢাকা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে এটি অবস্থিত। জমিদার বাড়ির চারপাশে রয়েছে মনোরম পরিবেশ।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জ রুটের সাটুরিয়াগামী যে কোনো বাসে উঠে পড়ুন। সাটুরিয়া নেমে সিএনজি বা অটোতে চড়ে চলে যেতে পারবেন জমিদার বাড়ি।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রবিবার পূর্ণদিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে। জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য টিকেটের মূল্য জন প্রতি ১০টাকা।
মহেরা জমিদার বাড়ি
ঢাকার পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলায় ঘুরে বেড়ানোর মতন অনেক জায়গা রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটি স্থান হলো মহেরা জমিদার বাড়ি। তিনটি স্থাপনা নিয়ে তৈরি এটি। বাড়ির ভেতরের দিকে বিশাল খাঁচায় পালা হয় বিভিন্ন রকম পাখি। প্রতিটি স্থাপনাতেই রয়েছে অসাধারণ কারুকাজ, যা দেখলে মুগ্ধ হবেন আপনি।
কীভাবে যাবেন?
টাঙ্গাইলের এই জমিদার বাড়ি দেখতে খুব সকালেই রওনা হতে হবে। যাত্রাপথে সময় লাগবে ৩-৪ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে যেতে হবে নাটিয়া পাড়া বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে যেতে পারবেন মহেরা জমিদার বাড়ি। প্রবেশ করতে টিকিট কিনতে হবে জনপ্রতি ২০ টাকা।
মৈনট ঘাট
আপনি যদি নদী বা সমুদ্র ভালোবাসেন তবে কম সময়ে ঘুরে আসতে পারেন মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট থেকে। দোহার উপজেলায় অবস্থিত এই চর আপনাকে সাগরের বেলাভূমির কথা মনে করিয়ে দেবে।
এখানকার সূর্যাস্তের দৃশ্য সবচেয়ে সুন্দর। চাইলে নৌকায় ঘুরতে পারেন কিংবা পদ্মার ইলিশ দিয়ে দুপুরের ভোজনও সারতে পারেন।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার ৬৯০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এই পার্কে প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্য প্রাণীদের বিচরণ দেখতে সারা বছরই দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে।
দিনব্যাপী ঘোরার জন্য দারুণ একটি জায়গা এটি। এখানে রয়েছে পাখি শালা, প্রজাপতি সাফারি, জিরাফ ফিডিং স্পট, অর্কিড হাউজ, শকুন ও পেঁচা কর্নার, এগ ওয়ার্ল্ড, বোটিং, লেইক জোন, আইল্যান্ড, প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন আরও অনেক বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর সমারোহ।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে গাজীপুরের যেকোনো বাস ধরে প্রথমে যেতে হবে গাজীপুরের বাঘের বাজার। সেখান থেকে খুব সহজেই আপনি যেতে পারবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।
শালবন বিহার
বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতির অসংখ্য এবং চমৎকার সব প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি। এই বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব।
কীভাবে যাবেন?
শালবন বিহারে যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে কুমিল্লা শহরে। কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কি. মি. দূরে কোট বাড়িতে শালবন বিহার অবস্থিত। চাইলে এখানে পারিবারিক পিকনিকও করতে পারেন।
নিকলী হাওর
খোলামেলা পরিবেশে যদি প্রকৃতির স্নিগ্ধ ছোঁয়া পেতে চান তবে ঘুরে আসতে পারেন কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর। কিশোরগঞ্জগামী বাসে চড়ে চলে যান কিশোরগঞ্জ শহরে। সেখান থেকে অটোতে নিকলী ঘাট। ঘাটে নৌকা রয়েছে। নৌকা ভাড়া করে ঘুরে দেখুন হাওর। বর্ষার শেষ সময় এই হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
বেলাই বিল
গাজীপুরে অবস্থিত মনোরম একটি স্থান বেলাই বিল। এটি চেলাই নদীর পাশেই অবস্থিত। এখানে ইঞ্জিনচালিত ও ডিঙি দুই ধরনের নৌকা পাওয়া যায়। পছন্দের বাহনটিতে উঠে পড়ুন। চাইলে সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন। বেলাই বিলের আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে বিকালে। চারপাশে দেখা যায় অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য।বেলাই বিলের চারপাশে শাপলার ছড়াছড়ি। সঙ্গে পাবেন মুক্ত বাতাস। বাসা থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে নৌকায় বসে খেতে পারেন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে চলে যান গাজীপুর বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে রিকশা বা অটোতে কানাইয়া বাজার। এখানে সারি সারি নৌকা বাঁধা রয়েছে। দরদাম করে একটি নৌকায় উঠে পড়ুন। বর্ষাকাল বেলাই বিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।