টুকটুক থাইল্যান্ডের বেসরকারি প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ তবে এমন প্রতীকী গুরুত্ব সত্ত্বেও এই যান ব্যাংককে বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস ৷
গোটা বুকিং প্রক্রিয়া এখন অ্যাপের মাধ্যমে চালিত হয়৷ তাছাড়া নতুন এই বৈদ্যুতিক যানে তিনের বদলে ছয় জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারেন৷ ‘মুভমি’-র সহ প্রতিষ্ঠাতা সুপাপং কিটিওয়াটানাসাক বলেন, ‘‘ভাগ করে নেওয়াই আমাদের পরিষেবার মূলমন্ত্র৷ যারা একই পথে যাচ্ছে, তারা একটি যানেই একসঙ্গে যাক, সেটাই আমরা চাই৷ সেটা করলে পরিবহণের ব্যয় ভাগ করে মানুষেরই আর্থিক সাশ্রয় হবে ৷”
যাত্রীরা একটি রাইডের জন্য মাত্র ৩০ সেন্ট দিতে পারেন৷ দূরত্ব ও সময় অনুযায়ী মাসুল বাড়ে৷ ছাত্রী হিসেবে লিজ রোল বলেন, ‘‘আমি পরিবেশের ক্ষতি কমাতে চাই বলে এটা পছন্দ করছি৷ পৃথিবীটাকে আরও ভালো করে তোলার এটা একটা পদক্ষেপ৷ তাছাড়া টক্সিক ধোঁয়া ছাড়া ভ্রমণ সত্যি মনোরম ৷”
মুভমি নামের অন-ডিমান্ড রাইড-শেয়ারিং পরিষেবা ২০২৪ সালের মধ্যে ১,০০০ বিদ্যুৎচালিত টুকটুক পথে নামাতে চায়৷ ব্যাংকক ছাড়া থাইল্যান্ডের অন্যান্য প্রধান শহরেও পরিষেবার পরিকল্পনা রয়েছে৷ সুপাপং কিটিওয়াটানাসাক মনে করিয়ে দেন, ‘‘আমরা ইতোমধ্যেই ৩০ লাখ প্যাসেঞ্জার ট্রিপ করে প্রায় ৮০০ টন কার্বন নির্গমন এড়াতে পেরেছি৷ সেটা প্রায় ছয় একর জঙ্গলের সমান৷”
দেখলে মনে হয়, টুকটুক যেন বৈদ্যুতিক শক্তিতে চালানোর জন্যই ডিজাইন করা হয়েছিল৷ যান হালকা হওয়ায় ইলেকট্রিক গাড়ির তুলনায় ব্যাটারি অনেক বেশি সময় ধরে চার্জড থাকে৷ কিন্তু শব্দের অভাব সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে৷ টুকটুক চালক হিসেবে উডন লোখাম নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘‘যান যত নীরব হবে, ততই বিপজ্জনক হবে৷ একবার এক পথচারীর পেছনে ছিলাম৷ তিনি আমার আসার শব্দই শোনেন নি৷ তাই আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হয় ৷”
অনেক চালকের মতে, প্রচলিত জ্বালানির কিছু টুকটুক হয়তো পর্যটকদের আকর্ষণ হিসেবে থেকে যাবে৷ তবে ইলেকট্রিক যানের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে ৷
মুভমি-র সহ প্রতিষ্ঠাতার মতে, ইঞ্জিন যেমনই হোক না কেন, টুকটুকের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি৷ গোটা শিল্পখাতের উপর এর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে৷ সুপাপং কিটিওয়াটানাসাক মনে করেন, ‘‘মোবিলিটির ধারণা বদলে গেছে৷ আগে মানুষ ভাবতো, এয়ার কন্ডিশন ছাড়া যে কোনো যানেই খুব গরম লাগবে৷ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ছিল বিলাস৷ কোভিডের পর সবাই আরও স্বাস্থ্যকর তাজা বাতাস চাইছে ৷”
পর্যটক হিসেবে ব্যাংককের প্রাসাদ ও মন্দির ঘুরতে চাইলে এবং যান হিসেবে টুকটুক বেছে নিলে মুভমি অ্যাপ কাজে লাগতে পারে৷ ইংরিজি ভাষায়ও সেটি ব্যবহার করা যায় বলে বাড়তি সুবিধা রয়েছে৷ সুপাপং কিটিওয়াটানাসাক বলেন, ‘‘ভাষা আর কোনো বাধা হবে না৷ একই সঙ্গে আমরা আপনাকে সরাসরি মাসুলের অংক জানিয়ে দেবো৷ সবটাই নগদবিহীন লেনদেন৷ অর্থাৎ কোনো ঝামেলা নেই ৷”
এমন সুবিধার ফলে দরাদরি করার কোনো প্রয়োজন নেই৷ তবে ভুললে চলবে না, যে মুভমি টুকটুকের চালককে অ্যাপের মাধ্যমেই বখশিস দেওয়া যায় ৷
দিন হোক বা রাত, ব্যস্ত সড়ক বা পছন্দের স্ট্রিট ফুড স্টল – থাইল্যান্ডে টুকটুকে চেপে সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ সত্যি অনবদ্য৷ ইলেকট্রিক যান হলেই বা কী এসে যায় ৷