অনেকেই মনে করেন, আয়কর প্রদান একটি ভারী দায়িত্ব। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেখানে নাগরিকদের এক টাকাও আয়কর দিতে হয় না। এই দেশগুলির বাসিন্দারা তাঁদের উপার্জনের পুরো অর্থই নিজের কাছে রাখতে পারেন। যেখানে ভারতের মতো দেশে বিভিন্ন আয়ের স্তরে করের হার প্রয়োগ হয় এবং সর্বোচ্চ করহার পৌঁছতে পারে প্রায় ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত (যা উচ্চ আয়ের ক্ষেত্রে সারচার্জ ও সেসসহ কার্যকর করহারে রূপ নেয়), সেখানে এই করমুক্ত দেশগুলো একেবারেই আলাদা অর্থনৈতিক নীতিতে চলে।
এই শূন্য-আয়করের ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলি। সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমান এবং কুয়েত—এই দেশগুলিতে ব্যক্তিগত আয় বা বেতনের উপর কোনো সরাসরি কর আরোপ করা হয় না। এসব দেশের সরকার বিশাল তেল ও গ্যাস সম্পদ, পর্যটন শিল্প এবং মূল্য সংযোজন কর (VAT)-এর মতো পরোক্ষ করের উপর নির্ভর করে রাজস্ব সংগ্রহ করে। এই বিশেষ কাঠামোর ফলে সেখানকার নাগরিকরা করমুক্ত জীবন যাপন করতে পারেন এবং তাঁদের ব্যয়যোগ্য আয় সর্বাধিক হয়।
এই তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। তাদের অর্থনীতির ভিত্তি তেল এবং শক্তিশালী পর্যটন শিল্প, যা সরকারের রাজস্বের প্রধান উৎস। এর ফলে দেশটি শুধু করমুক্ত জীবনই দেয় না, বরং বিশ্বের পেশাদারদের জন্য একটি লাভজনক কর্মক্ষেত্র ও বসবাসের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
তবে এই করমুক্ত সুবিধা শুধু উপসাগরীয় দেশগুলোতেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্রুনেই, মোনাকো, নাউরু এবং বাহামার মতো এশিয়া ও ইউরোপের ছোট অথচ ধনী দেশগুলিও একই রকম সুবিধা দেয়। ব্রুনেইয়ের অর্থনীতি নির্ভর করে তেল ও গ্যাসের উপর, আর নাউরু ও বাহামা পর্যটন থেকে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব অর্জন করে, যা সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট। এর ফলে এই দেশগুলোতে ব্যক্তিগত আয়কর আরোপের দরকার পড়ে না।
এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক শক্তির মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য বা শক্তিশালী পর্যটন খাত। তবে সরাসরি আয়কর না থাকলেও, সরকার প্রায়শই ভ্যাট ও অন্যান্য পরোক্ষ করের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে।
এদিকে, ভারতে নতুন আয়কর কাঠামো অনুযায়ী, ০ থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কোনও কর নেই। ৪ থেকে ৮ লক্ষ টাকায় ৫%, ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকায় ১০%, ১২ থেকে ১৬ লক্ষ টাকায় ১৫%, ১৬ থেকে ২০ লক্ষ টাকায় ২০%, ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকায় ২৫% এবং ২৫ লক্ষ টাকার উপরে ৩০% কর দিতে হয়।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণে নতুন কর কাঠামোর ঘোষণা করেছেন। এই কাঠামো অনুযায়ী, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য কোনও কর দিতে হবে না, কারণ এতে ৭৫ হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ, ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছাড়ের আওতায় থাকবে।