রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন

এই সময়ে সাজেক

  • আপডেট সময় সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩

সাজেক যাওয়ার সঠিক বা সবচেয়ে সুন্দর সময় কখন, এ প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর খুঁজে পাই না। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, যেকোনো সময়ই সাজেক যাওয়ার জন্য উপযুক্ত। কারণ, যেকোনো ঋতুর যেকোনো সময় সাজেক আলাদাভাবে সুন্দর। বৃষ্টির সময় সাজেকের এক রূপ, বসন্তে বা শরতে সেই একেবারেই একদম অন্য রকম রূপ। আবার শীতে সাজেক ভিন্ন রূপে সেজে থাকে। তাই সব ঋতুতে সেটি আলাদা আলাদা রূপে।

যাঁরা মেঘের প্রেমে পড়তে ভালোবাসেন, মেঘ দেখে, মেঘ ছুঁয়ে নিজেকে অদ্ভুত সুখের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করতে চান, তাঁদের জন্য শরৎই সাজেক ভ্রমণের আদর্শ সময়।

এ সময় মেঘমুক্ত ঝকঝকে নীল আকাশ দেখার সুন্দরতম জায়গা হলো সাজেক। অবশ্য বৃষ্টিপ্রেমীদের অনুভূতিতে বৃষ্টির সময় সাজেক সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সে আলাদা বিতর্ক।

হেলিপ্যাড থেকে দেখা সাজেকের একটি অংশ।

হেলিপ্যাড থেকে দেখা সাজেকের একটি অংশ। ছবি: লেখক

আমি প্রথমবার সাজেক গিয়েছিলাম এক শরতে। তখন সেটি ছিল নিখাদ এক পাহাড়ি গ্রাম। আর অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে সেদিন আমি আর আমার এক সহকর্মী ছাড়া পুরো সাজেকে আর কেউ ছিল না! একটা লাল কটেজ আর কয়েকটা বাঁশের তৈরি মাচার ঘর ছাড়া আর কোনো স্থাপনা চোখে পড়েনি সেদিন। শরতের এক দারুণ সময়ে ঝকঝকে নীল আকাশের সাজেক দেখি প্রথমবার। বলা বাহুল্য, সেই প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যাই। সাজেকের প্রতি সেই প্রেম আমার এখনো আছে। তবে আজকাল আর খরচে কুলিয়ে উঠতে পারি না বলে যাওয়ার ভাবনা মাথায়ও আনি না। সাজেক আজকাল আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য নয়। সে এখন আরও লাস্যময়ী, সুদূরের পিয়াসি, দামি এবং দুর্লভ।

যাহোক, খরচের কথা বলে আর বেদনা না বাড়াই। শুধু প্রকৃতির রূপের কথাই না হয় আর একটু বলে শেষ করি। আমার কাছে সূর্য উদয়ের চেয়েও বিকেলের নীল রঙা সাজেক বেশি আকর্ষণীয়। শেষ বিকেলে সূর্যের আলো পশ্চিমে আকাশের গায়ে হেলে পড়লে যে শত রঙের মেলা দেখা যায়, সকালে মেঘের কারণে সেটা দুর্লভ। আর দূরের মিজোরামের পাহাড়শ্রেণি হয়ে ওঠে একটা নীল পাহাড়ের বিশাল ক্যানভাস। অমন বর্ণিল আকাশের নিচে বসে দূরের নীল ক্যানভাসের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে কাটিয়ে দেওয়া যায় বেহিসাবি সময়!

হেলিপ্যাডের সিঁড়ি।

হেলিপ্যাডের সিঁড়ি। ছবি: সংগৃহীত

আর যদি হয় শরতের পূর্ণিমাঝরা রাতের সাজেক, সে স্বর্গীয় এক সময় উপহার দেবে আপনাকে। ঝকঝকে নীল আকাশজুড়ে একটা বিশাল রুপালি চাঁদের আলোময় সাজেক যে কাউকে পাগল করে তোলার জন্য যথেষ্ট! একটা এমন নির্ঘুম সুখের রাত পেতে চাইবে যে কেউ। শুধু চাঁদনি রাত কেন, এমনকি যদি আঁধার রাতও হয়, তবু সাজেকের রাত অনন্য, অপূর্ব, অদ্ভুত আর অমলিন হয়ে ধরা দেবে আপনার কাছে। জীবনের সুখস্মৃতির পাতায় একটা শুকতারা হয়ে জ্বলবে সব সময়। আঁধার রাতের লক্ষ-কোটি তারাদের মেলা আপনাকে এমন দুর্লভ রাতের অভিজ্ঞতা দেবে, যা আপনার সব সুখের কল্পনাকেও হার মানাবে। এই সময় সাজেকের সকাল দেবে শীত আর শরতের মিশ্র এক সুখানুভূতি, নিঃসন্দেহে। তাই শরৎ সাজেক ভ্রমণের চমৎকার এবং সঠিক সময় হতে পারে যে কারও জন্য।

সাজেকে যেতে 
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে যেতে হবে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে রিজার্ভ বা শেয়ার জিপে দীঘিনালা হয়ে আর্মি স্কটের সঙ্গে সাজেক। থাকা আর খাওয়ার জন্য এখন সাজেকে অনেক জায়গা আছে। সাধ, সাধ্য আর সুযোগমতো ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। যদি হন ব্যাচেলর বা শুধুই বন্ধুদের সঙ্গে যাওয়ার মতো দল বেঁধে। কিন্তু পরিবার, শিশু বা বয়স্ক কাউকে নিয়ে গেলে অবশ্যই সবকিছু বুকড করে যাওয়ার এবং ফিরে আসার চেষ্টা করুন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com