বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫১ অপরাহ্ন

এই শীতকে আনন্দময় করতে ঘুরে আসুন মাওয়া

  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

শহরের ব্যস্ত জীবনে যখন হাপিয়ে উঠেছেন, তখন কর্মচঞ্চল জীবনকে একটু শান্তি দিতে শহর থেকে অল্প দূরে ঘুরে আসতে পারেন মাওয়া ফেরি ঘাট। এই ঘাটের পাড়ে আছে বেশ কিছু খাবারের হোটেল। ইলিশ খেতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত সেখানে ভিড় করেন পর্যটকরা। ইলিশ ছাড়াও অনেক বাহারি প্রজাতির তাজা মাছ পাওয়া যায়। মাওয়ার এই ফেরিঘাট সবসময় মেতে থাকে মেলার আমেজে।

মাওয়াঘাট বাংলাদেশের ঢাকা জেলার লোহজং উপজেলার পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাটের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এই ঘাট এক সময় বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ফেরিঘাট ছিল। এটি ছিল দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার সড়ক পথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ ঘাটে এখন আর ফেরি চলাচল করে না। তবে মাওয়া ফেরীঘাট পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকা। পদ্মার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে, পদ্মা সেতু দেখতে এবং ইলিশ ভাজা খেতে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক এখানে ভিড় করেন।

ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় পদ্মা পাড়ে গিয়ে একদিনেই ঘুরে আসা যায়। রুপালি জলের ঝিকিমিকি দেখতে দেখতে, এর পাড় ধরে দূরে হেঁটে যাওয়া কিংবা পদ্মা পাড়ের শান্ত সবুজ গ্রামের যান্ত্রিকতা ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশ সবাইকে মুগ্ধ করে।

যুগ যুগ ধরেই মাওয়া ঘাটের ইলিশের চাহিদা সর্বত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ইলিশ খেতে আসেন ভোজন রসিকরা। এই বিশাল চাহিদা পূরণে মাওয়া ঘাটের পাড়ে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় হোটেল। আছে মৌসুমি ফলসহ অন্যান্য পণ্যের বিশাল সমারোহের দোকান।
মাঝরাতে মাওয়া ফেরিঘাটে বিভিন্ন দোকানের সমারোহ। ছবি: সময় সংবাদ

চাইলে নৌকায় ঘুরেও দেখতে পারবেন পদ্মার বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য। তাছাড়া ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে পদ্মার ইলিশের স্বাদ কি আর অন্য কিছুতে মেটানো সম্ভব! আরও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে পদ্মার বুকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় স্পিডবোটে এপার থেকে ওপারে যেতে পারেন।

শুধু ইলিশ খেয়ে চলে না এসে নদীর পাড়ে বসে পদ্মার বিশাল জলরাশির একটু উন্মাদনা দেখে আসতে পারেন। তার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় মাওয়াঘাট থেকে জনপ্রতি ২৫ টাকা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় লোহজং ঘুরে আসা। সম্পূর্ণ অটো রিকশা রিজার্ভ নিলে ১৫০ টাকা নেবে।

সেখান থেকে নৌকায় যাবেন পদ্মা রিসোর্ট। এতে রিসোর্টও দেখা হবে নৌকা ভ্রমণ ও হয়ে যাবে। ইচ্ছা করলে সারাদিন অথবা রাত দিন থাকার ব্যবস্থা আছে রিসোর্ট এ। না থাকতে চাইলেও অসুবিধা নেই শুধু ৫০ টাকা দিলেই ঘুরে দেখা যাবে সম্পূর্ণ রিসোর্ট।

মাওয়া ঘাট কীভাবে যাবেন

ঢাকার গুলিস্থান, যাত্রাবাড়ী হতে বিআরটিসি, ইলিশ, স্বাধীন, গাংচিল, প্রচেষ্টা পরিবহনের বাসে চড়ে সরাসরি মাওয়া যেতে পারেন। ভাড়া নিবে ৭০ টাকা। মিরপুর থেকে ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে স্বাধীন পরিবহণ এবং উত্তরা থেকে রামপুরা হয়ে প্রচেষ্টা পরিবহণ মাওয়া আসে। ভাড়া ১০০ টাকা। প্রাইভেট কার কিংবা বাইক নিয়েও মাওয়া যেতে পারেন।

কোথায় খাবেন

মাওয়া ঘাটে ছোট বড় অনেক গুলো রেস্টুরেন্ট বা খাবারের হোটেল আছে। সব হোটেলেই ইলিশ ভাজা পাওয়া যায়। দাম নিবে প্রতি পিচ ১০০ টাকা। এছাড়া নিজে ইলিশ মাছ কিনে ভেজে খেতে পারেন। আকার ভেদে ইলিশের দাম নিবে এক এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি। ভাজার জন্য ওরা আলাদা টাকা নিবে। ইলিশ মাছ আপনি অন্য জায়গা থেকে কিনে এনেও যেকোনো রেস্টুরেন্টে আলাদা টাকা পরিশোধ করে ভেজে নিতে পারবেন। পদ্মা মাছের দোকান, কিংবা ঘাট থেকে কম দামে ভালো ইলিশ মাছ কিনতে পারেন। চাইলে নিজের হাতেও মাছ ভাজতে পারবেন।

মাওয়া ফেরিঘাটে নিজেদের হাতে ইলিশ ভাজছেন দুই যুবক। ছবি: সময় সংবাদ

হোটেলে মাছের মাথা এবং লেজ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে দিবে। ইলিশের লেজের ভর্তা খেতে দারুণ। এছাড়া বেগুন ভাজা সঙ্গে নিতে পারেন। ইলিশ বাজার জন্য সরিষার তেল আপনাকে আলাদা করে কিনে দিতে হবে। মাওয়া ঘাটের রেস্টুরেন্টগুলো সারারাত খোলা থাকে। বৃহস্পতি এবং শুক্রবার রাতে এখানে প্রচুর ভিড় থাকে।

কখন যাবেন

মাওয়া ঘাট আপনি দিন-রাত যখন ইচ্ছে যেতে পারেন। তবে সব থেকে ভালো হয় বিকেলে গেলে। সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ঘুরে বেড়াবেন। পদ্মার তীরে বসে সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। এর পরে রাতে ইলিশ ভাজা খেয়ে বাসায় চলে যাবেন। গভীর রাতে মাওয়াঘাটে ইলিশ ভাজা থেকে দারুণ মজা। মাওয়া ঘাটের দর্শনীয় স্থান পদ্মা নদী, পদ্মা সেতু, পদ্মা রিসোর্ট মাওয়া ঘাটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া পদ্মা নদীতে ট্রলার ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। স্পিডবোটে পদ্মার ওপাড়ে কাওড়াকান্দি ঘাটে যেতে পারেন। বাসে উঠে পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙা পর্যন্ত যেতে পারেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com