শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন

এআই কি একদিন মানুষকেও ছাড়িয়ে যাবে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি মানুষের জন্যে বিপদজনক হয়ে উঠছে?

এই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে মূলত চ্যাটজিপিটি নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাজারে আসার পর। ভাষাভিত্তিক এই চ্যাটবট তার তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে প্রায় সব প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারে।

চ্যাটজিপিটি রচনা লিখতে পারে, চাকরির বা ছুটির আবেদন, যেকোনো রিপোর্ট তৈরি করতে পারে, এমনকি গান ও কবিতাও লিখতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ক্ষমতা দেখে সারা বিশ্বের প্রযুক্তি বিষয়ক নীতি-নির্ধারক, বিনিয়োগকারী এবং নির্বাহীরা নড়ে চড়ে বসেন। এক হাজারের মতো ব্যক্তি এক খোলা চিঠিতে এই প্রযুক্তির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, গবেষণায় এখনই রাশ টেনে না ধরলে সমাজ ও মানবজাতি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে।

কেন এই ভীতি?

আয়ারল্যান্ডের একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ নাসিম মাহমুদ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হেলথ-গ্রুপের একজন প্রকৌশলী এবং এই প্রতিষ্ঠানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন, তিনি বলছেন এই ভয় অনেকটাই মানসিক।

“এটা হচ্ছে অজানাকে ভয় পাওয়ার মতো ভয়,” বলেন তিনি।

নাসিম মাহমুদ বলছেন, “ধরা যাক আমরা একটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দায়িত্ব দিলাম প্রেসক্রিপশন লিখে দেওয়ার জন্য। সে লিখেও দিল। তার এই লেখা পর্যন্ত আমরা অনেকভাবে পরীক্ষা করে নিলাম। এর ভালো দিকটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় যা আমাদের বর্তমান সময়ের এথিকসের সাথে সংঘাতপূর্ণ, তখন কী হবে!”

“এই ভুল তো মানুষও করেছে। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমরা এই জায়গাতে দেখতে চাই না,” বলেন তিনি।

চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই নিয়ে উদ্বেগ ঠিক এই কারণেই। এই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সুলিখিত উত্তর তৈরি করা সম্ভব। এর ফলে একজন ছাত্রকে সুশিক্ষিত করে তোলার যে মূল লক্ষ্য সেটা ব্যাহত হতে পারে।

রোবট

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারাবে বলে আশঙ্কা

হঠাৎ কেন আলোচনা?

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। এর গাণিতিক তত্ত্ব অনেক আগে আবিষ্কার হলেও, এই বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের জন্য ম্যাথম্যাটিক্যাল মডেলের অভাব ছিল।

কিন্তু গত কয়েক বছরে কম্পিউটিং পাওয়ার বৃদ্ধির পাশাপাশি, এই প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে ওঠার কারণে এই খাতের নেতারা এর নেতিবাচক দিক নিয়েও সতর্ক থাকতে চাইছেন।

ঢাকায় একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলছেন, প্রত্যেক দশ বছরে কম্পিউটিং-এর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাচ্ছে। যেহেতু এই প্রযুক্তি মানুষ সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করে ফেলেছে, এবং সেসব তথ্য মানুষের চেয়েও দ্রুত গতিতে প্রসেস করতে পারছে, তার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনের ওপরে এর প্রভাব পড়ছে।

প্রযুক্তির এই অগ্রগতি তো মানুষের জন্য সুখবর। তাহলে এ নিয়ে এতো উদ্বেগ কেন?

“একটা কারণ হচ্ছে মানুষের যেসব কাজ তার একটা বড় অংশ আগামীতে মেশিনের হাতে চলে যাবে। অনেক জায়গাতে সেটা হয়েও গেছে। ফলে একটা হচ্ছে কাজ হারানোর ভয়। আরেকটা ভয় হচ্ছে এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের আশঙ্কা,” বলেন মি. স্বপন।

তিনি বলছেন এধরনের ভয়ের মধ্যে রয়েছে: ফেক নিউজ, ফেক ইভেন্ট, এমনকি ফেক রিলেশনশিপ।

“আরো যে বিষয়টি প্রকট হয়ে উঠতে পারে সেটা হচ্ছে বৈষম্য। আমরা একসময় বলতাম ডিজিটাল ডিভাইড। যার কাছে প্রযুক্তি আছে এবং যার কাছে প্রযুক্তি নেই তাদের মধ্যকার এই গ্যাপ নিয়ে আমরা কয়েক দশক ধরেই সোচ্চার ছিলাম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে মানুষে মানুষে, সমাজে সমাজে এবং দেশে দেশে এই বিভাজন এখন আরো বেড়ে যাবে,” বলেন তিনি।

এআই বিপ্লব

সাম্প্রতিককালে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জগতে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে। অনেক কাজই এখন একটি যন্ত্র মানুষে চেয়েও দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে করে দিতে পারে।

হঠাৎ করেই এই অগ্রগতির কারণ কী? কিভাবে এটি সম্ভব হলো?

যুক্তরাষ্ট্রে গুগলের একজন টেকনিক্যাল ম্যানেজার তানজিম আহসান বলছেন সুপার কম্পিউটিং পাওয়ারের কারণে এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।

জেফ্রি হিন্টন

ছবির উৎস,UNIVERSITY OF TORONTO

ছবির ক্যাপশান,
এআই জগতে গডফাদারদের একজন জেফ্রি হিন্টন কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে যেসব উন্নতি হচ্ছে – তার বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন

“গত কয়েক বছরে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আগে কোনো কোম্পানি যদি ইন্টেল সিপিও বানাতো ওরাই শুধু জানতো এটা কিভাবে বানাতে হয়। এটা ছিল বিশেষ একটা জ্ঞান। কিন্তু এখন এই সেমিকন্ডাক্টর একটা পণ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা যেমন যে কোনো জায়গা থেকে একটা পেরেক কিনতে পারি, এখন সেমিকন্ডাক্টরের বিষয়টাও সেরকম হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।

“এই শিল্পের এধরনের বিস্ফোরণের ফলে যে কেউ যে কোনো জায়গা থেকে এটা কিনে একটা প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে সেটার ওপর যেকোনো ধরনের মডেলিং ও টেস্টিং করতে পারে। অ্যামাজন, গুগল এবং মাইক্রোসফট এই তিনটি বড় কোম্পানি ক্লাউড সার্ভিস তৈরি করার কারণে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে একটা মুদির দোকানও সেটা ব্যবহার করতে পারে যা তার জন্য আগে অনেক ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু এখন এই সুপার কম্পিউটিং পাওয়ারের কারণে যে কেউই এসব কাজ করতে পারছে। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গণতন্ত্রায়নও হয়েছে,” বলেন মি. আহসান।

এক সময় ধারণা করা হতো- একই ধরনের যেসব কাজ বারবার করতে হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পক্ষে শুধু সেসব কাজই করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি মানুষের করে দেওয়া প্রোগ্রামের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এখন অনেক কিছুই করা সম্ভব যা মানুষ ভাবতেও পারেনি।

চ্যাটজিপিটির সাথে রসিকতা করলে সে বুঝতে পারে। শুধু তাই নয়, ব্যবহারের সাথে সাথে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন নতুন জিনিস শিখতেও পারে এবং এর মধ্য দিয়ে সে নিজেকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে থাকে।

রবীন্দ্রনাথের চেয়েও সৃজনশীল?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে যাকে ‘গডফাদার’দের একজন বলে মনে করা হয় সেই জেফ্রি হিন্টন সম্প্রতি গুগল থেকে ইস্তফা দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে আর কিছুকাল পরই চ্যাটবটরা মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হয়ে যেতে পারে। তাহলে কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স একসময় মানুষের মতো সৃষ্টিশীল হয়ে উঠবে?

গুগলেরই টেকনিক্যাল ম্যানেজার তানজিম আহসান বলছেন, কম্পিউটার তো অনেকের মানুষের চেয়ে আজকের দিনেই বেশি বুদ্ধিমান।

“সৃষ্টিশীলতার তো বিভিন্ন ধরনের মাত্রা আছে। আপনি আমি আমরা সবাই কিছুটা হলেও সৃষ্টিশীল। আমাকে বললে চার লাইনের একটা কবিতা হয়তো লিখে ফেলতে পারবো। কিন্তু সেটা কি খুব ভালো হবে? নিশ্চয়ই হবে না।”

কিন্তু চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা এখন কবিতাও লিখতে পারছে। কিভাবে সেটা করছে?

মি. আহসান বলেন, “ওকে যদি বলেন রবীন্দ্রনাথের মতো করে একটা কবিতা লিখে দাও, সে কী করবে? সে রবীন্দ্রনাথের সব কবিতা পড়েছে, কবিগুরুর শব্দচয়নের যে প্রক্রিয়া তার একটা গাণিতিক মডেলও সে তৈরি করেছে। ও জানে যে যদি ‘রবি’ শব্দটা আসে তাহলে এর পরের শব্দটা হতে পারে ‘কর’ অর্থাৎ ‘রবির কর’। এভাবেই সে সৃজনশীলতার কাজ করে। এবং এই কাজটা কতোটা সৃষ্টিশীল হলো তার বিচার তো এখন আমাদের কাছে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

কিন্তু কথা হচ্ছে এই প্রযুক্তি কি আগামীতে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও সৃজনশীল হয়ে উঠতে পারবে?

“আমি মনে করি হয়ে উঠতে পারে। কারণ মানুষও তো ধীরে ধীরে বুদ্ধিমান হয়েছে। মানুষ যখন গুহায় বসে বসে ছবি আঁকতো তখন কিন্তু সে দ্বিমাত্রিক ছবি আঁকতো। তার আঁকার ক্ষমতা অনেক সীমিত ছিল। মিশরীয় ছবিগুলোতে দেখবেন সবগুলো মানুষ একদিকে কাত হয়ে তাকিয়ে আছে, চোখের দিকে তাকিয়ে নেই। থ্রি ডাইমেনশন বুঝতে মানুষের হাজার হাজার বছর লেগেছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সও এভাবে ধীরে ধীরে এগুতে থাকবে,” বলেন মি. আহসান।

তিনি বলছেন এই শেখার ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে যন্ত্র অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে। কোনো একটি কাজ মূল্যায়নের পরে সেটি শিখতে মানুষের যেখানে হাজার হাজার বছর লেগেছে, কম্পিউটার ঠিক সেই কাজটাই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শিখে ফেলতে পারে।

আয়ারল্যান্ডের তথ্যপ্রযুক্তিবিদ নাসিম মাহমুদও মনে করেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স একসময় মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান না হলেও, সে যে ক্ষমতাশীল হয়ে উঠবে এনিয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।

“একজন চিকিৎসক অভিজ্ঞতার আলোকে তার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা যদি এমন একটা বুদ্ধিমত্তা তৈরি করি যা ওই চিকিৎসকের মতোই বুঝতে পারে, এবং রোগীর জন্য একটা ওষুধ লিখে দিতে পারে তাহলে কী হবে?”

“একজন চিকিৎসকের পক্ষে আপনার জীবনের তাবৎ ইতিহাস এক বসায় ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে দেখে, আপনার সেই ইতিহাস আরো হাজার হাজার মানুষের ইতিহাসের সাথে তুলনা করে সমস্যার সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে লাখ লাখ মানুষের তথ্য দেখে রোগীর ব্যাপারে কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব,” বলেন মি. মাহমুদ।

এআই-এর বিপদ

জেফ্রি হিন্টন কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে যেসব উন্নতি হচ্ছে – তার বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এআইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যেসব কাজ করেছেন তার জন্য তিনি অনুতাপও প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন এআই চ্যাটবট থেকে এমন কিছু বিপদ হতে পারে যা রীতিমত ভয়ংকর। তাহলে মানুষের সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই প্রতিযোগিতা কি কখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে?

জাকারিয়া স্বপন বলছেন, এটা কখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলেই তিনি মনে করেন।

“হিউম্যান মাইন্ড, আমি ব্রেইন বলছি না, বলছি হিউম্যান মাইন্ড, সেটা অনেক বেশি ক্ষমতাবান। এই মাইন্ডের যে কল্পনা ও চিন্তা শক্তি, মেশিন এখনও সেটা পারে না। আমি বিশ্বাস করি যন্ত্রের এই ক্ষমতা তৈরি হতে হতেই মানুষ এর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেবে।”

“মানুষ যেহেতু এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বানাচ্ছে, মেশিন যদি কিছু কিছু জায়গায় মানুষকে ছাড়িয়েও যায়, মানুষ এটাকে তার গণ্ডির মধ্যেই রেখে দিবে। মানুষই নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করবে যা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাকে সামাল দেওয়ার রাস্তা বের করে ফেলবে,” বলেন মি. স্বপন।

কিন্তু নাসিম মাহমুদ ফেক নিউজ বা ভুয়া খবরের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দায়ী করতে রাজি নন। তিনি বলছেন বরং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ব্যবহার করেই ভুয়া খবর চিহ্নিত করা হচ্ছে।

“ফেক নিউজ ছড়ানোর পেছনে কিন্তু সরাসরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নেই। কিছু মানুষ রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ভুয়া খবর তৈরি করছে। তার পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে তারা সেই খবরটা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আপনি দেখবেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিন্তু মানুষকে সাহায্য করছে খবরটা ভুয়া কি না সেটা পরীক্ষা করে দেখতে,” বলেন মি. মাহমুদ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

চাকরি খেয়ে ফেলবে?

আরো একটি শঙ্কার কারণ হচ্ছে যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে অনেক মানুষের চাকরি হুমকির মুখে পড়বে। গোল্ডম্যান স্যাকসের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সারা বিশ্বে ৩০ কোটি মানুষের চাকরি খেয়ে ফেলবে এআই। আরেকটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ আশঙ্কা করছে যে আগামী তিন বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে তারা চাকরি হারাবেন।

তাহলে কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের জন্যে ভয়ের কারণ হতে পারে? গুগলের একজন টেকনিক্যাল ম্যানেজার তানজিম আহসান বলছেন, এটা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।

“ভয়ের কারণ কিছুটা থাকতেই পারে। কারণ এর ফলে মানুষের প্রয়োজনীয়তা অনেক জায়গাতেই কমে যাবে,” বলেন তিনি।

“আপনি যদি ১০০ বছর আগে ঘোড়ার গাড়ির চালক হতেন, দেখতেন যে হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসেছে যাকে প্রতিদিন খাওয়াতে হয় না, পরিষ্কার করতে হয় না, তার ক্লান্তি নেই ঘুম নেই, সারা দিন চলতে পারে, সেই ঘোড়ার চালক তো তখন ভয় পেতেন, তার কাজ আজকের দিনে চলেও গেছে। কিন্তু এর ফলে কি প্রচুর লোকের অন্ন বাসস্থান চলে গেছে? যারা একাজ করতো তাদেরটা চলে গেছে, কিন্তু গাড়ি আসার ফলে নতুন নতুন বাজার তৈরি হয়েছে।”

মি. আহসান মনে করেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যতোই অগ্রগতি হোক না কেন মানুষের প্রয়োজন কখনোই ফুরাবে না। কারণ এসব কিছুই করা হচ্ছে মানুষের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপের নাসিম মাহমুদ মনে করেন এই প্রযুক্তি ভুল মানুষের হাতে গিয়ে পড়লেই এনিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। তাছাড়া এই প্রযুক্তি আগামীতে মানুষের সহায়ক শক্তি হিসেবেই কাজ করবে।

“রোবট বোতলের ভেতরে ওষুধ ভরে। তার পর সেই ওষুধ নানা জায়গা ঘুরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগীর কাছে গিয়ে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে মাত্র দুই ভাগ ওষুধ বোতলে ভরার পরে মানুষ পরীক্ষা দেখেন। এই মানুষটা অনেক পড়ালেখা করে এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়েছেন। কিন্তু তিনি যে কাজটা করেন সেটা অত্যন্ত সাধারণ একটি কাজ যা একটি যন্ত্রের পক্ষে খুব সহজেই করা সম্ভব।”

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন বর্তমানে আমরা যেভাবে জীবন-যাপন করি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে তা নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে পারে – ভালো বা মন্দ উভয় অর্থেই। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স জগত ও পৃথিবীর নেতৃত্ব যাদের হাতে তারা এর জন্য কতোটা প্রস্তুত?

ঢাকায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলছেন, “সারা বিশ্বেই এআই প্রযুক্তি এখন স্পর্শকাতর বিষয়। কিন্তু সেই বিচারে এর সঙ্গে যেসব নেতারা যুক্ত তারা এর জন্যে প্রস্তুত নন। তারা রিয়্যাক্ট করছে কিন্তু এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিতে হবে তার জন্য তারা তৈরি নয়। অনেক দেশ তো বুঝতেই পারছে না এই পরিস্থিতির সঙ্গে তারা কিভাবে নিজেদের মানিয়ে নেবে।”

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আগামীতে পৃথিবীকে কোন দিকে নিয়ে যাবে, তা নির্ভর করবে কোম্পানিগুলো এই প্রযুক্তি তৈরিতে কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়, তার ওপর।

তারা বলছেন এ ধরনের প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ এবং অপব্যবহার বন্ধে কর্তৃপক্ষকে আইনগত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com