ডেমোক্রেটিক দল রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নিয়ে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে অভিবাসন সংস্কার নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মাধ্যমে লাখো অভিবাসী সুখবর পেতে যাচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবের সঙ্গে যুক্ত করে এ খাতে ৫২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পিছিয়ে পড়া অভিবাসন আবেদন হালনাগাদ করা হবে। পারিবারিক অভিবাসনের জন্য আবেদনকারীদের ভিসা দ্রুততার সঙ্গে করা হবে। পাশাপাশি অর্থ বছরের জন্য বরাদ্দ ভিসার অব্যবহৃত ভিসা সমন্বয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ গ্রহণের ফলে কংগ্রেসে অভিবাসন সংস্কার আইন পাস না করেই লাখো অভিবাসীর জন্য মার্কিন অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে।
প্রতিনিধি পরিষদের এপ্রোপ্রিয়েশন কমিটি ১৩ জুলাই হোমল্যান্ড সিকিউরিটির জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন করেছে। এ অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অধীনে অভিবাসন ও সীমান্ত রক্ষা বিভাগকে বর্ধিত অর্থায়ন করা হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈরী অভিবাসন নীতি ও কোভিড মহামারির কারণে যেসব ভিসার কোটা অব্যবহৃত রয়েছে, তা সমন্বয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অস্থায়ী কর্মী ভিসায় এ বছরে বেশি লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সুবিধা পাবে।
নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেস মেং অর্থ প্রস্তাবের সঙ্গে সংশোধনী উপস্থাপন করেছেন। এ সংশোধনীর ফলে ২০২০ সালে এবং ২০২১ সালে অব্যবহৃত অভিবাসন ভিসার সংখ্যা ২০২২ সালে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। ডিভি লটারি, পারিবারিক অভিবাসন, অস্থায়ী কর্মী ভিসার মতো যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের আবেদন অব্যবহৃত থেকে গেছে।
গত এক বছরের বেশি সময় বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট অফিস এসব ভিসা আবেদনের কাজ করতে পারেনি। মহামারির কারণে বাইরের কনস্যুলেট অফিসের কাজ প্রায় বন্ধ ছিল। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের নানা প্রশাসনিক নির্দেশের কারণে ভিসা প্রদানে মন্থর গতি আনা হয়েছিল।
এসব নিয়ন্ত্রণমূলক অবস্থার কারণে কোটার অব্যবহৃত ভিসা নতুন করে ইস্যু করলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের প্রবাহ দ্রুত বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। পারিবারিক ভিসার কোটা অনুযায়ী অব্যবহৃত ভিসা কর্মভিত্তিক ভিসায় সমন্বয় করা হবে। ফলে কর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনে বেশি লোকজন প্রবেশ করতে পারবে।
কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং এক বিবৃতিতে বলেছেন, ট্রাম্পের সময়ে মুসলিম দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল, এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকেও এখন ভিসা প্রদানের বিষয়টি তাঁর প্রস্তাবিত সংশোধনীতে রয়েছে। তিনি বলেছেন, এখন সময় এসেছে প্রতিশ্রুতি রক্ষার।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগেই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি মানবিক অভিবাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
মেইন রাজ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য চেল্লি পিংগ্রি আরেকটি সংশোধনী প্রস্তাবের মাধ্যমে আগামী বছরের জন্য ৬৪ হাজার ৭১৬টি ভিসা বৃদ্ধির কথা বলেছেন। এ কোটা বৃদ্ধির ফলে এইচ-২ ভিসায় মৌসুমি কর্মী হিসেবেও অতিরিক্ত লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রস্তাবিত ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিকাঠামো আইনের সঙ্গে যুক্ত করে আইন পাস করার ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। রিকনসিলিয়েশন নামের কংগ্রেসিয় পদ্ধতিতে ডেমোক্রেটিক দল এ বছরে আর একটি অর্থ প্রস্তাব পাস করতে পারবে। এ পদ্ধতিতে অর্থ প্রস্তাব পাসের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজনীয়তা নেই।
বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে রিপাবলিকান দলের সঙ্গে সমঝোতা করে বিশাল অর্থ ব্যয়ের এ আইন প্রস্তাব পাস করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। সমঝোতা প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। রিপাবলিকান দল সমঝোতায় এগিয়ে না আসলে ডেমোক্র্যাটরা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এ আইন প্রস্তাব গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে পাস হয়ে আইন প্রস্তাবটি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুমোদনের জন্য যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।