একদিকে দুর্ভিক্ষ, মানবাধিকার লঙ্ঘন আর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা; অন্যদিকে চোখধাঁধানো উন্নয়নের প্রদর্শনী। এই বৈপরীত্য উত্তর কোরিয়ার বর্তমান বাস্তবতা। এরই মধ্যে দেশটির নেতা কিম জং-উন উদ্বোধন করলেন ‘ওনসান-কালমা কোস্টাল ট্যুরিস্ট জোন’ নামে দেশটির প্রথম বিশাল সমুদ্র রিসোর্ট। যেখানে একসঙ্গে থাকতে পারবেন প্রায় ২০ হাজার পর্যটক।
রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে কিছু দূরে, পূর্ব উপকূলে তৈরি এই রিসোর্টে রয়েছে বহুতল হোটেল, ট্রেন, বিমান সংযোগসহ নানান সুবিধা। কিম নিজেই ফিতা কেটে উদ্বোধন করেছেন এই স্থাপনা। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে একে ‘জাতীয় ঐতিহ্য পর্যায়ের পর্যটন শহর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে, এই রিসোর্ট আসলে কাদের জন্য?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এটি মূলত পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষমতাসীন অভিজাত শ্রেণি এবং কিছু রাশিয়ান পর্যটকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। করোনা-পরবর্তী সময়ে রাশিয়ান ছাড়া আর কোনো বিদেশি পর্যটককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি উত্তর কোরিয়ায়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক গোয়েন্দা বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি কিমের তথাকথিত নীতির প্রচারকৌশলের অংশ, যার পেছনে রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বিদেশি মুদ্রা অর্জনের প্রচেষ্টা।
জানা গেছে, ভ্লাদিভস্তকে অবস্থিত একটি রাশিয়ান ট্যুর এজেন্সি ভোস্তক ইনটুর তিনটি প্যাকেজ ট্যুর চালু করেছে এই রিসোর্ট ঘিরে, যার প্রতিটির খরচ প্রায় ১ হাজার ৮৪০ মার্কিন ডলার।
এত কিছুর পরেও প্রশ্ন উঠছে, উত্তর কোরিয়ার পর্যটন নিয়ে এই প্রচেষ্টা আদৌ কি সফল হবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে যখন কিমের সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সমালোচিত, তখন রিসোর্ট তৈরি করে দেশটির ভাবমূর্তি পাল্টানো সহজ হবে না। তা ছাড়া অতীতে দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটকদের জন্য খোলা মাউন্ট কুমগাং প্রকল্প ২০০৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় এক পর্যটককে গুলি করে হত্যার ঘটনায়। সেটিও ছিল পিয়ংইয়ংয়ের বৈদেশিক আয়ের একটি বড় উৎস।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ ড. এডওয়ার্ড হাওয়েল বলেন, ‘রিসোর্ট যত বড়ই হোক, কিমের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে এর প্রভাব নিয়ে সন্দেহ কিন্তু থেকেই যায়।’
রিসোর্টটি ১ জুলাই থেকে দেশীয় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং ৭ জুলাই থেকে রাশিয়ান পর্যটকদের জন্য সীমিত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য প্রবেশের সময়সূচি এখনো জানানো হয়নি।
সূত্র: সিএনএন