ইসরায়েল একটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ যা তার ঐতিহাসিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এটি একটি আধুনিক রাষ্ট্র যা ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবে এর ইতিহাস হাজার বছর ধরে বিস্তৃত। ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের জন্য পবিত্র স্থান হওয়ায় এটি ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েলের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
---|---|
সরকারী নাম | ইসরায়েল রাষ্ট্র |
রাজধানী | জেরুজালেম (আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নয়, অধিকাংশ দেশ তেল আবিবকে মানে) |
সরকার ব্যবস্থা | সংসদীয় গণতন্ত্র |
রাষ্ট্রপতি | আইজ্যাক হারজগ (২০২৫ পর্যন্ত) |
প্রধানমন্ত্রী | বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু |
ভাষা | হিব্রু (প্রধান), আরবি (সরকারি স্বীকৃত) |
মুদ্রা | ইসরায়েলি শেকেল (ILS) |
জনসংখ্যা | প্রায় ৯.৭ মিলিয়ন (২০২৪ অনুমান) |
প্রধান ধর্ম | ইহুদি (৭৪.৩%), মুসলিম (১৭.৮%), খ্রিস্টান (২%), অন্যান্য (৬%) |
মোট আয়তন | ২২,১৪৫ বর্গকিমি |
ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা
ইসরায়েলের ইতিহাস অত্যন্ত পুরোনো এবং এটি বহু ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লিখিত। প্রাচীন যুগে এটি ইহুদি রাজ্যের অংশ ছিল। তবে রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে পড়ার পর বহু ইহুদি বিতাড়িত হয়।
আধুনিক ইসরায়েলের সৃষ্টি
১৮৯৭ সালে থিওডোর হার্জল নেতৃত্বে জায়নিস্ট আন্দোলন শুরু হয়, যার লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ১৯১৭ সালে ব্যালফোর ঘোষণা-তে ব্রিটিশ সরকার ইহুদি জনগণের জন্য একটি জাতীয় নিবাস তৈরির সমর্থন দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদিদের ওপর নাজি জার্মানির অত্যাচার বিশ্ববাসীকে নাড়িয়ে দেয়। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের পরিকল্পনায় ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত প্যালেস্টাইনকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করা হয়—একটি ইহুদি রাষ্ট্র (ইসরায়েল) এবং অপরটি আরব রাষ্ট্র (প্যালেস্টাইন)। ১৪ মে ১৯৪৮ সালে ডেভিড বেন-গুরিয়ন ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
ভূগোল ও জলবায়ু
ইসরায়েল ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এবং এটি মূলত মরুভূমি ও পর্বতশ্রেণীর দেশ।
গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল
- গ্যালিলি (উত্তর): পর্বতশ্রেণী ও সবুজ অঞ্চল।
- নেগেভ মরুভূমি (দক্ষিণ): শুষ্ক ও উষ্ণ অঞ্চল।
- যর্দান উপত্যকা (পূর্ব): নীচু ভূমি ও কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- তেল আবিব ও উপকূলীয় অঞ্চল: আধুনিক শহর এবং প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
জলবায়ু
ইসরায়েলের জলবায়ু ভূমধ্যসাগরীয়, যা গ্রীষ্মে শুষ্ক ও উষ্ণ এবং শীতে কিছুটা ঠান্ডা ও বৃষ্টিপাতযুক্ত।
রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থা
ইসরায়েল একটি সংসদীয় গণতন্ত্র। রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান, তবে প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলসমূহ
- লিকুদ পার্টি (ডানপন্থী, বর্তমান সরকারে)।
- ইশ্রায়েলি লেবার পার্টি (বামপন্থী)।
- ইয়েশ আতিদ (মধ্যপন্থী)।
- শাস পার (ধর্মীয় দল)।
অর্থনীতি ও প্রযুক্তি
ইসরায়েল উচ্চ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। এটি “স্টার্টআপ নেশন” নামে পরিচিত।
অর্থনীতির প্রধান খাত
- প্রযুক্তি: সফটওয়্যার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার সিকিউরিটি।
- কৃষি: মরুভূমিতে চাষাবাদ ও জল সংরক্ষণ প্রযুক্তি।
- অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা: উন্নত ড্রোন, মিসাইল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
- পর্যটন: জেরুজালেম, তেল আবিব, মৃত সাগর।
ধর্ম ও সংস্কৃতি
ইসরায়েলে ধর্ম ও সংস্কৃতির মিশ্রণ রয়েছে। এটি ইহুদি ধর্মের মূল কেন্দ্র হলেও মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান
- পশ্চিম দেয়াল (Western Wall) – ইহুদিদের পবিত্র স্থান।
- আল-আকসা মসজিদ – ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান।
- গোলগোথা পাহাড় – খ্রিস্টানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ভূরাজনৈতিক সমস্যাগুলোর একটি।
- ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ-এ ইসরায়েল পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে।
- ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তি চুক্তি হয়, কিন্তু এখনো শান্তি স্থাপিত হয়নি।
- ২০২৩-২৪ সালে গাজার সাথে সংঘর্ষ আবার তীব্র হয়।
সম্পর্ক ও বৈশ্বিক অবস্থান
ইসরায়েলের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক মিশ্র।
- সাম্প্রতিক সময়ে আব্রাহাম চুক্তি-এর মাধ্যমে কিছু আরব দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে (যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন)।
- তবে সৌদি আরব এবং ইরানের সাথে দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েল একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত প্রভাবশালী দেশ। এটি ধর্ম, প্রযুক্তি, রাজনীতি ও সামরিক শক্তির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এটি একটি বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে।
আপনি ইসরায়েল সম্পর্কে কী ভাবেন? এর রাজনীতি ও প্রযুক্তিগত উন্নতি নিয়ে আপনার মতামত কী? মন্তব্যে জানান!