রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ন

ইতালিতে বাংলাদেশের পর্যটকরা কীভাবে আসবেন, কোথায় ঘুরবেন

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

ইউরোপের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থভূমি ইতালি। প্রাচীনকালে এখানে ছোট্ট জনপদ গড়ে উঠেছিল, যাকে গ্রিকরা ‘ইতালিয়া’ বলে ডাকতো। প্রাচীন সভ্যতা ও আধুনিকতার পাশাপাশি মনোরম সমুদ্র সৈকত, আলপাইন লেক, আল্পস পর্বতমালার সমন্বয়ে গঠিত ইতালি এককথায় মনোমুগ্ধকর। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে এই দেশ অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য।

ইতালিতে বেড়াতে প্রতিবছর ২ কোটি পর্যটক সমাগম হয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ইতালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বাংলাদেশ থেকে আসতে পারেন যে কেউ। ইউরোপের অনন্য সুন্দর দেশটিতে কীভাবে আসবেন, কোথায় থাকবেন ও খাবেন, কী কী দেখবেন সেসব বিষয়ে কিছু ধারণা দেওয়া হলো এখানে।

কীভাবে আসবেন
সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণের জন্য প্রথম শর্ত হলো বৈধ ভিসা। ইতালি ভ্রমণের শেনজেন ভিসা পাওয়া গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত আরও ২৫টি দেশ ঘোরা যায়। এজন্য প্রথমেই ঢাকার ইতালিয়ান দূতাবাস থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর সরাসরি বিমানে চড়ে মোনালিসা চিত্রকর্মের স্রষ্টা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির দেশে বেড়াতে চলে আসুন! ইতালি দূতাবাসের ঠিকানা-প্লট নং-২/৩, রোড নং-৭৪/৭৯,গুলশান-২, ঢাকা-১২১২। ফোন: +৮৮-০২-৮৮৩২৭৮১-৩। ওয়েবসাইট: www.ambdhaka.esteri.it।

রোমে ভিক্টর ইমানুয়েল দ্বিতীয় স্মৃতিস্তম্ভ

ভিসার প্রক্রিয়া
যেকোনও পাসপোর্টধারী শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে। ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে খুব বেশি সময় লাগে না। ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা ইতালির ভ্রমণ ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। এছাড়া কেউ চাইলে অনলাইনে নিজেই ভিসার আবেদন করতে পারেন।

ভিসার জন্য যোগাযোগের ঠিকানা: ইতালি ভিসা ও লিগালাইজেশন আবেদন কেন্দ্র, এজে হাইটস (নিচতলা), চ-৭২/১/ডি, প্রগতি সরণি, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। হেল্পলাইন: (+৮৮)০৯৬০৬৭৭৭৬৬৬, (+৮৮)০৯৬৬৬৯১১৩৮৪ (মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য)। রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা। রমজান মাসে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা। ইমেল: [email protected]। ওয়েবসাইট: http://www.vfsglobal-it-bd.com।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ভিসা প্রাপ্তির মূল শর্ত হলো সঠিকভাবে আবেদনপত্র পূরণ। ঢাকার ইতালি দূতাবাসের অনলাইনে আবেদনপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। ভিসার জন্য মূল পাসপোর্টের পরিষ্কার ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের চার কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ট্রেড লাইসেন্স, বাড়ির বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের মূলকপি ও ফটোকপি, ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সদ্য দম্পতির জন্য ম্যারেজ সার্টিফিকেট, সন্তানদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন ও বাবা-মা উভয়ের স্বাক্ষরসহ পাসপোর্টের ফটোকপি থাকতে হবে।

কেউ যদি আগে শেনজেন ভিসা পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এর ফটোকপি জমা দিতে হবে। ভিসার জন্য আবেদনপত্রে উল্লেখ করা সময় থেকে পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত ১৮০ দিন বেশি থাকা চাই। পাসপোর্টে অন্তত দুটি পেজ ফাঁকা থাকতে হবে। ভিসা ফি ৭৪৬০ টাকা। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে ভিসা ফি ৫২১০ টাকা। সর্বোপরি আবেদনপত্র সঠিক ও যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। তাহলেই ভিসার আবেদন বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

ইতালির দর্শনীয় ১০

ভেনিস: ইতালির অন্যতম পর্যটন নগরী ভেনিস। উত্তর-পূর্ব ইতালির ভেনেতো অঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক জায়গা এটি। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ভেনিস হলো নান্দনিক ভাসমান শহর। দেখলে মনে হয় শিল্পীর তুলিতে আঁকা। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় আছে এর নাম। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকটি এই শহরের প্রেক্ষাপটে লেখা। ভেনিসের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মোহনীয় সৌন্দর্য। ঐতিহ্য অনুযায়ী এখানে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছোট ডিঙি নৌকা। ভেনিসে বসবাস করা সবার বাড়ির ঘাটেই বাঁধা থাকে নৌকা অথবা স্পিডবোট। সামুদ্রিক খাবারপ্রেমীদের জন্য শহরটি এক স্বর্গরাজ্য।

রোম: সৌন্দর্যের দিক দিয়ে ইতালির সেরা শহরগুলোর তালিকায় ঐতিহাসিক রোম নগরী অন্যতম। বলাবাহুল্য পৃথিবীর দর্শনীয় পর্যটন গন্তব্য রোম। ভ্যাটিকান সিটি, রোম শহরের সীমার মধ্যে একটি স্বাধীন দেশ। একটি শহরে দেশের বিদ্যমান থাকার একমাত্র উদাহরণ এটি।

রোম

ফ্লোরেন্স: মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় বাণিজ্য ও সেই যুগের ধনী শহরগুলোর মধ্যে ফ্লোরেন্স ছিল অন্যতম। এটি রেনেসাঁর জন্মভূমি হিসেবে বিবেচিত। শহরটিকে বলা হয় ‘মধ্যযুগের এথেন্স’। ফ্লোরেন্স সমগ্র ইতালির সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি কেতাদুরস্ত শহরের তালিকায় এর নাম অন্যতম।

পিসা: ইতালির প্রাচীন গৌরবময় প্রসিদ্ধ নগরী পিসা। এটি টাস্কানি অঞ্চলে অবস্থিত। এখানেই ১৫৬৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও। প্রাচীন এই নগরীতে রয়েছে একটি হেলানো টাওয়ার। ইতালীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘তোরে দি পিসা’ (পিসা টাওয়ার) অথবা ‘তোরে পেনদানতে দি পিসা’ (লিনিং টাওয়ার অব পিসা)। শহরের ক্যাথেড্রাল স্কয়ারের তৃতীয় প্রাচীনতম স্থাপনা এটি।

পম্পেই: হাজার বছরের পুরনো একটি শহর পম্পেই। ইতালির ক্যাম্পানিয়া প্রদেশে নেপলসের (নাপোলি) আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ছোট্ট এই নগরী। বর্তমানে উপকূল থেকে বেশ দূরে সরে গেছে এটি। একসময় একেবারে উপকূলের ধার ঘেঁষে ছিল এই জায়গা। পরিকল্পিত নগরীটি চাপা পড়েছিল পাশের ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট জ্বলন্ত লাভার নিচে।

মিলান: ইতালির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মিলান। লোম্বারডি অঞ্চলের রাজধানী ও প্রধান শহর এটি। দেশটির শিল্প, বাণিজ্য, ডিজাইন ও ফ্যাশনের প্রধানতম জায়গা মিলান। সান্তা মারিয়া দেল্লে গ্রাৎজি গির্জায় লিওনার্দো দা ভিঞ্চির দেয়ালচিত্র ‘দ্য লাস্ট সাপার’ এবং ইতালির বিখ্যাত অপেরা ভবন লা স্কালা এখানেই অবস্থিত।

পোর্টোফিনো: ছবির মতো বন্দর ও সমুদ্র সৈকতের জন্য সুপরিচিত পোর্টোফিনো। এটি সাগরপাড়ে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের একটি গ্রাম। রোজ সন্ধ্যায় এখান থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দারুণ আকর্ষণীয় দেখায়।

আমালফি: সোরেন্টো ও সালেরনো শহরের মাঝে ন্যাপল উপসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত আমালফি উপকূল। ইতালির পশ্চিমে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ এটি। এখানে হেঁটে বেড়ালে উপকূলের নয়নাভিরাম দৃশ্য ও লেবু গাছের সুবাস মুগ্ধ করে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এখানে প্রচুর লেবু উৎপাদন হয়। আমালফির বিভিন্ন দোকানে লেবুর বৈশিষ্ট্যযুক্ত পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয় দেদার।

ইউফিজি গ্যালারি: বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম শিল্প জাদুঘর ইউফিজি গ্যালারি্ মূলত পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইতালিয়ান চিত্রকর ও স্থপতি জর্জিও ভাজারি এর পরিকল্পনা করেন। এটি ফ্লোরেন্সের অন্যতম একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এখানে প্রাচীন গথিক থেকে রেনেসাঁ ও ষোড়শ শতকের চিত্রকলার বিস্তৃত সংগ্রহশালা রয়েছে। গ্যালারিটি সত্যিকার অর্থেই ইতালির বিবর্তনকে তুলে ধরে।

দ্য কলোসিয়াম: ইতালির প্রাচীন রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত নির্দশন হলো কলোসিয়াম। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা স্তম্ভগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এতে রয়েছে রোমান প্রকৌশলের চোখধাঁধানো নৈপুণ্য। নিষ্ঠুর সম্রাট টাইটাসের তত্ত্বাবধানে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এটি একটি আ্যম্ফিথিয়েটার। ইমারতটি মঞ্চনাটক, গ্লাডিয়েটরদের লড়াই, জীবজন্তুর লড়াই ও বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য ব্যবহার করা হতো।

থাকা-খাওয়া
ইতালিতে প্রায় সারাবছরই পর্যটকদের ভিড়ভাট্টা দেখা যায়। সেজন্যই সাংস্কৃতিক প্রাচুর্যের দেশটিতে বিলাসবহুল হোটেল ও ভালো মানের রেস্তোরাঁর অভাব নেই! ইতালির বড় ও পর্যটন শহরগুলোতে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে থাকা-খাওয়ার খরচ একটু বেশি। নজরকাড়া এসব বিলাসবহুল হোটেলে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্যুট, বার, রেস্তোরাঁসহ অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।

কেনাকাটা
কোথাও ঘুরতে গেলে কেনাকাটার প্রসঙ্গ চলে আসে আপনাআপনি। ইতালির প্রতিটি শহরে বিপণি বিতান কেন্দ্র তথা শপিং মল রয়েছে। এসব জায়গা ঘুরে দর্শনার্থীরা নিত্যনতুন পণ্যসামগ্রী কেনেন। অবশ্য এখানে শপিং করাটা একটু বেশিই খরুচে ব্যাপার। এছাড়া শিল্পবৈচিত্র্যময় ইতালিতে শৌখিন অনেকেই পছন্দের বাঁধাই করা চিত্রকর্ম নিতে আসেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com