শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন

ইতালিতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

শিল্প চর্চার সূত্রে এক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইতালীয়রা। মৌলিকতা ও সৃজনশীলতার সন্নিবেশে শিক্ষালব্ধ পারদর্শিতাকে তারা নিয়ে গেছে শিল্পের পর্যায়ে। আর এ কারণেই উচ্চশিক্ষার জন্য এই অপূর্ব দেশটিকে বেছে নেয় শিল্পানুরাগী শিক্ষার্থীরা।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ভিন্ন সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র আচার-প্রথার জনগোষ্ঠী। সেখানে সব থেকে বেশি বৈচিত্র্য দেখা যায় ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোতে। যেখানে সহপাঠী বা সহকর্মীদের মধ্যে ভাষা থেকে শুরু করে বেশভূষায় থাকে যথেষ্ট ভিন্নতা।

শিল্প চর্চার সূত্রে এক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইতালীয়রা। মৌলিকতা ও সৃজনশীলতার সন্নিবেশে শিক্ষালব্ধ পারদর্শিতাকে তারা নিয়ে গেছে শিল্পের পর্যায়ে। আর এ কারণেই উচ্চশিক্ষার জন্য এই অপূর্ব দেশটিকে বেছে নেয় শিল্পানুরাগী শিক্ষার্থীরা। চলুন, ইউরোপীয় ইতালিতে পড়াশোনার জন্য আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা এবং স্কলারশিপ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ইতালিতে কেন পড়তে যাবেন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এই সদস্য রাষ্ট্রটিতে রয়েছে বিশ্বের প্রাচীনতম সব বিশ্ববিদ্যালয়। সময়ের বিবর্তনে পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নয়নের পটভূমিতে এগুলোতে জমা হয়েছে শত বছরের ঐতিহ্য। বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষা কারিকুলাম এবং স্কলারদের অভিজাত ফোরামগুলোতে সুপরিচিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

তন্মধ্যে কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং-এ থাকা বিদ্যাপীঠগুলো হলো- পলিটেক্নিকো ডি মিলানো (১২৩), স্যাপিয়েঞ্জা ইউনিভার্সিটি অব রোম (১৩৪) ও ইউনিভার্সিটি অব বোলোগনা (১৫৪)।

গ্লোবাল পিইও (প্রফেশনাল ইম্প্লয়ার অর্গানাইজেশন) সার্ভিসেস ও ফোর্বসের মতে, বর্তমানে ইউরোপ অর্থনীতিতে তৃতীয় এবং গোটা বিশ্বে নবম বৃহত্তম দেশ ইতালি। সেই সূত্রে, ইন্টার্নশিপ, অন-দ্যা-জব ট্রেনিং এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টের মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

প্রধান ভাষা ইতালিয়ান হলেও ইংরেজি ভাষার প্রতি গুরুত্ব থাকায় প্রতি বছরই ভিড় বাড়ছে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের। বিশেষ করে মিলান, রোম ও তুরিন ইউরোপের প্রধান শিক্ষার্থী-বান্ধব শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম।

শিক্ষার পাশাপাশি শেনজেনভুক্ত দেশটির যে ক্ষেত্রটিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ থাকে, তা হলো এর পর্যটন। ইউএনডব্লিউটিও (ইউনাইটেড ন্যাশন্স ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন) অনুসারে, বিশ্ব পর্যটন র‌্যাঙ্কিংয়ে এই ইউরোপীয় দেশটির অবস্থান ৪র্থ। এখন পর্যন্ত ইতালিতেই রয়েছে সর্বাধিক সংখ্যক ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (৫৯)। এগুলোর মধ্যে ৫৩টি সাংস্কৃতিকভাবে স্বীকৃত ও ৬টিতে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিশেষত্ব।

ইতালির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনপ্রিয় কোর্সের তালিকা

ইউরোপজুড়ে বহুল সমাদৃত ইতালির শীর্ষ ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

· পলিটেক্নিকো ডি মিলানো

· স্যাপিয়েঞ্জা ইউনিভার্সিটি অব রোম

· ইউনিভার্সিটি অব বোলোগনা

· ইউনিভার্সিটি অব পাদুয়া

· পলিটেকনিকো ডি টরিনো

· ইউনিভার্সিটি অব মিলান

· ইউনিভার্সিটি অব নেপল্স ফেদেরিকো-২

· ইউনিভার্সিটি অব পিসা

· ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরেন্স

· ইউনিভার্সিটি অব তুরিন

ইতালির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নের জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি বিষয়-

চারুকলা, ফ্যাশন ডিজাইন, ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক, হস্পিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম, মেডিসিন, কম্পিউটার সায়েন্স, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি।

ইতালির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়

অন্যান্য শেনজেন দেশগুলোর মতো ইতালিও শিক্ষা ক্ষেত্রে দুই-সেমিস্টার পদ্ধতি মেনে চলে। প্রথম ভর্তি মৌসুমটি পরিচিত ফল ইন্টেক নামে, যার আবেদন কার্যক্রম শুরু হয় নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে যাবতীয় আবেদন শেষে কোর্স আরম্ভ হয় সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বা অক্টোবরের শুরুতে। এই সময়টিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বাধিক সংখ্যক কোর্সে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়।

স্প্রিং নামের আরেকটি ইন্টেকে আবেদন নেওয়া হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এগুলোর সময়সীমা থাকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। অতঃপর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই ভর্তি শেষ করে কোর্স শুরু করে দেওয়া হয়।

এখানে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পৃথকভাবে তাদের নিজস্ব ওয়েব পোর্টালে আবেদন করতে হয়। আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচসহ সুনির্দিষ্ট ডেডলাইনগুলো ওয়েবসাইটে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। এখানে খেয়াল রাখা উচিত যে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র একটি বিষয়ে আবেদন জমা দেওয়া যায়।

প্রি-ইনরোলমেন্ট

ইতালির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির একটি প্রধান বিষয় হলো প্রি-ইনরোলমেন্ট। এটি যে কোনো কোর্সের জন্য আবেদন করার পূর্বশর্ত। এর জন্য শিক্ষার্থীকে ইউনিভার্সইটালি পোর্টালে (https://universitaly-private.cineca.it/index.php/registration/firststep) নিবন্ধনের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।

এ সময় পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় তথ্য ও নির্দেশনা পেতে এর ওয়েবসাইট গবেষণা এবং অ্যাডমিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অতঃপর নির্বাচিত অধ্যয়ন প্রোগ্রামের জন্য ইউনিভার্সইটালি সাইটে প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি আপলোড দিতে হবে। এভাবে প্রি-ইনরোলমেন্টের অনলাইন আবেদন শেষ করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার প্রস্তুতির কাজ শুরু করা হবে।

এ সময় শিক্ষার্থীকে অধ্যয়ন ফি পরিশোধের জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হবে। সাধারণত শিক্ষাবর্ষ জুড়ে তিন কিস্তিতে এই ফি নেওয়া হয়। প্রথম কিস্তি নেওয়া হয় ভর্তির সময়। পরবর্তী কিস্তিগুলো সুনির্দিষ্ট তারিখ সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটি থেকে জানানো হয়।

ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

· অনলাইনে পূরণকৃত পূর্ণ আবেদনপত্র

· একটি বৈধ পাসপোর্ট

· বিগত শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি-

o স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য হাই স্কুল ডিপ্লোমা বা সমতুল্য সনদ এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট

o স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য স্নাতকের সনদ ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট

o ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য স্নাতকোত্তরের সনদ ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে

· ভাষার দক্ষতা পরীক্ষার নূন্যতম স্কোর

o আইইএলটিএস-এ ৬ বা টোফেল আইবিটিতে ৫৯

o মাস্টার্সের জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ কিংবা টোফেল আইবিটি ৭৯

o পিএইচডির জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৭ বা টোফেল আইবিটি ৯৬

· অধ্যয়ন ফি পরিশোধের রশিদ: তিন কিস্তির ন্যূনতম ১ কিস্তি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি প্রায় ১২০ এবং ১৮০ ইউরোর মধ্যে থাকে, যা ১৫ হাজার ৮৬২ থেকে ২৩ হাজার ৭৯৩ টাকার (১ ইউরো = ১৩২ দশমিক ১৮ বাংলাদেশি টাকা) সমতূল্য।

· সিভি

· স্টেটমেন্ট অব পার্পাস

· একাধিক মোটিভেশন লেটার

· মেডিকেল সার্টিফিকেট ও স্বাস্থ্য বীমা

· জিম্যাট বা জিআরই পরীক্ষার ফলাফল (মাস্টার্সের জন্য)

· পোর্টফোলিও: সৃজনশীল ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের জন্য

· গবেষণা প্রস্তাব: পিএইচডির জন্য

o যার অধীনে গবেষণা করা হচ্ছে তার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য এবং শিক্ষার্থীর গবেষণার তত্ত্বাবধান করবেন এই মর্মে একটি সম্মতিপত্র

o প্রাসঙ্গিক পাবলিকেশনের সারাংশ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

· কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ- নির্বাচিত কিছু প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্স এবং প্রোগ্রাম বিশেষে আরও কিছু দরকারি কাগজ দিতে হতে পারে।

মিলান, ইতালি। ছবি: ইউএনবি

ইতালিতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি

দীর্ঘমেয়াদী অধ্যয়নে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য ইতালির টাইপ-ডি ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। ন্যাশনাল ভিসা নামে পরিচিত এই ভিসায় ৯০ দিনের বেশি ইতালিতে বসবাসের অনুমতি লাভ করা যায়। ভিসার মেয়াদ থাকে নির্বাচিত ফুল-টাইম স্টাডি প্রোগ্রামের পুরো সময়কালব্যাপি।

বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা ইতালি অভিবাসনের গ্লোবাল পার্টনার ভিএফএস (ভিসা ফ্যাসিলিটেশন সার্ভিসেস)-এর মাধ্যমে টাইপ-ডি ভিসায় আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য ডাউনলোডের জন্য আবেদন ফর্মটি পাওয়া যাবে এই লিংকে- https://visa.vfsglobal.com/one-pager/italy/bangladesh/english/pdf/visa-d…

এটি পূরণের পর প্রিন্ট করে স্বহস্তে সই করতে হবে এবং তারপর এর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নথিপত্রের সংযুক্তিসহ ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে।
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

· সম্পূর্ণরূপে পূরণকৃত এবং স্বহস্তে সই করা জাতীয় (টাইপ-ডি) ভিসা আবেদনপত্র

· সদ্য তোলা ২ কপি রঙিন ছবি:

o ছবিগুলো অবশ্যই আইসিএও (ইন্টার্ন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন) ফর্ম্যাটের হতে হবে (আকার ৪ x ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা ও সর্বোচ্চ বিগত ৬ মাসের মধ্যে তোলা)

· প্রতিটি পৃষ্ঠার অনুলিপিসহ বৈধ পাসপোর্টের আসল কপি

o পাসপোর্টের মেয়াদ শেনজেনভুক্ত যে কোনো দেশে পৌঁছার তারিখ থেকে পরবর্তী অন্তত ৩ মাস হতে হবে। পাসপোর্টে কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে।

· ইতালীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা এএফএএম ইনস্টিটিউটে (চারুকলা, সঙ্গীত ও নৃত্যকলার প্রতিষ্ঠান) প্রি-ইনরোলমেন্টের প্রমাণ (কেবল প্রি-ইনরোলমেন্টের জন্য): ভর্তি এবং অধ্যয়ন খরচ উল্লেখ করা আবশ্যক

· ইতালীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার লেটার

· আবেদনকারীর আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: গত ৬ মাস ধরে বাংলাদেশে পরিচালিত যে কোনো ব্যাংক কর্তৃক জারি করা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট

o কেউ স্পন্সর করে থাকলে তার আর্থিক সম্পদের প্রমাণ: বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক থেকে দেওয়া স্পন্সরের গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

o স্পন্সরের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের প্রমাণ (স্পন্সর অবশ্যই রক্তের সম্পর্কের বা বৈবাহিক সূত্রে সম্পর্কিত হবেন)

· স্কলারশিপ পেয়ে থাকলেও উপরোক্ত আর্থিক সম্পদের প্রমাণ প্রদর্শন করা অপরিহার্য

· ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণ স্বরূপ আইইএলটিএস (নূন্যতম স্কোর ৬) সার্টিফিকেট: শংসাপত্রের ইস্যুর তারিখ ভিসার আবেদনের তারিখের আগে দুই বছরের বেশি হওয়া যাবে না

· ইতালিতে শিক্ষার্থীর বাসস্থানের প্রমাণ:

o অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় বা ভাড়া চুক্তি কিংবা,

o একজন ইতালীয় নাগরিক বা দেশটিতে নিয়মিত বসবাসের পার্মিটধারী বিদেশী নাগরিকের পক্ষ থেকে রেসিডেন্ট স্টেটমেন্ট। এর সঙ্গে স্টেটমেন্টে সইকারী ব্যক্তির পরিচয়পত্রের সংযুক্তির প্রয়োজন হবে।

· বিমানের অগ্রিম টিকেট বুকিং-এর নথিপত্র

· ভ্রমণ বীমা: চিকিৎসা ফি, হাসপাতালে ভর্তি ও প্রত্যাবাসন খরচসহ সর্বমোট ৩০ হাজার ইউরো (৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮৬ টাকা)

· বিবাহিত হলে বিবাহের শংসাপত্র, তালাকপ্রাপ্ত হলে বিবাহ-বিচ্ছেদের শংসাপত্র এবং বিধবা বা বিপত্নীকদের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর শংসাপত্র
ভিসা আবেদন জমা ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন

আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র একসঙ্গে করে ভিএফএস-এ যাওয়ার জন্য অনলাইনে কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রয়োজন নেই। তবে https://vfsforms.mioot.com/forms/CFNC/-এই লিংকের ফর্মটির মাধ্যমে যোগাযোগ করে আবেদনের কথা জানাতে হবে। তারপর ফর্মে উল্লেখিত প্রার্থীর ই-মেইল ঠিকানায় অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিনক্ষণ জানানো হবে। এই ইমেইলের একটা প্রিন্ট নিয়ে সেটা ভিএফএসে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশে ইতালির ভিএফএস সেন্টারের ঠিকানা:

· ঢাকা: নাফি টাওয়ার (৪র্থ ও ৫ম তলা), ৫৩, দক্ষিণ গুলশান এভিনিউ, গুলশান ১, ঢাকা ১২১২।

· চট্টগ্রাম: ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চট্টগ্রাম, (৫ম তলা) ১০২/১০৩ আগ্রাবাদ সি/এ। কমার্স কলেজ রোড, চট্টগ্রাম-৪১০০।

· সিলেট: ৪র্থ তলা, নির্ভানা ইন কমপ্লেক্স, রামের দীঘির পাড়, মির্জাজঙ্গল রোড, সিলেট- ৩১০০।

উপরের যে কোনো সেন্টারের ক্ষেত্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে উপস্থিত হওয়া জরুরি। ই-মেইলে উল্লেখিত তারিখে প্রার্থীর ছবি তোলা এবং দশ আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। এর সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার নেওয়া হতে পারে। অবশেষে যাবতীয় কার্যক্রমের পর ভিসা ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ গ্রহণ সাপেক্ষে প্রার্থীকে একটি স্বীকৃতি পত্র বা রশিদ দেওয়া হবে।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ও আনুষঙ্গিক খরচ

স্টাডি ভিসা প্রস্তুত হতে সাধারণত ন্যূনতম ২১ ক্যালেন্ডার দিন প্রয়োজন হয়। তবে কাগজপত্র যাচাইসহ নানা কারণে ভিসা হাতে পাওয়া সময়টি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

ইতালির ভিএফএসের ওয়েবসাইট অনুসারে, টাইপ-ডি ভিসা ফি ৫০ ইউরো বা ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। ভিএফএস গ্লোবাল সার্ভিস চার্জ বাবদ রাখা হয় ৩৮ ইউরো বা ৪ হাজার ৩৭০ টাকা। সঙ্গে অতিরিক্ত ব্যাংক ড্রাফ্ট ২৭০ টাকা।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় এবং ভিসা প্রাপ্তি

যাচাই-বাছাই চলার সময়টুকুতে ভিএফএস ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে। এর জন্য নিম্নোক্ত লিংকে যেতে হবে- https://www.vfsvisaonline.com/Global-Passporttracking/Track/Index?q=shSA… এখানে আবেদনকারীর শেষ নামের পাশাপাশি দিতে হবে একটি রেফারেন্স নাম্বার, যেটি ভিএফএস থেকে দেওয়া সেই রশিদে পাওয়া যাবে। এছাড়া +৮৮০৯৬০৬৭৭৭৬৬৬ নাম্বারে কল করেও ভিসার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া যাবে।

সমুদয় যাচাইয়ের পর ভিসা নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে তা ফোন কলের মাধ্যমে প্রার্থীকে জানানো হবে। অতঃপর সে অনুযায়ী, ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য ভিএফএস সেন্টারে চলে যেতে হবে। এ সময় অবশ্যই সেই রশিদ বা স্বীকৃতি পত্রের মূল কপি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র সঙ্গে আনতে হবে।

ইতালিতে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ

বিষয়, প্রোগ্রামের স্তর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভেদে ইতালির অধ্যয়ন খরচে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজেটের তারতম্য নির্ধারণ করে দেয়। যেমন লিপস্কলারের তথ্যানুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক অধ্যয়ন খরচ ৯০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৫ থেকে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৭৩২ টাকার সমান। অপরদিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোর্স মূল্য প্রতি বছর গড়ে ৬ থেকে ২০ হাজার ইউরো বা ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৯৭ থেকে ২৬ লাখ ৪৩ হাজার ৬৫৭ টাকা।

ইতালির জনাকীর্ণ শহরগুলোর ওপর ভিত্তি করে ঠিক হয় জীবনযাত্রার ব্যয়ভার। লিপস্কলার ও নাম্বিও (গ্লোবাল লিভিং কস্ট ডাটাবেজ) অনুসারে, প্রধান শহরগুলোতে মাসিক জীবনযাত্রার খরচ নিম্নরূপ-

·  রোম: ৯৫৫ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো (১ লাখ ২৬ হাজার ২৩৪ থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৯ টাকা)

·  মিলান: ১ হাজার ইউরো (১ লাখ ৩২ হাজার ১৮৩ টাকা)

·  বোলোগ্না: ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো (১ লাখ ৩২ হাজার ১৮৩ টাকা থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৯ টাকা)

·  ফ্লোরেন্স: ৮০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ইউরো (১ লাখ ৫ হাজার ৭৪৬ থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৮ টাকা)

·  তুরিন: ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ইউরো (১ লাখ ১২ হাজার ৩৫৫ থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৮ টাকা)

এই বাজেটগুলোতে জীবনযাত্রার সাধারণ নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ব্যয়ভার বহন করা যায়। যেমন- প্রতি মাসে থাকার ব্যবস্থা (শেয়ার্ড রুম) ২৫০ থেকে ৮০০ ইউরো (৩৩ হাজার ৪৬ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৪৬ টাকা)। খাবারে খরচ যায় ২৪০ থেকে ৩৬০ ইউরো (৩১ হাজার ৭২৪ থেকে ৪৭ হাজার ৫৮৬ টাকা)। পরিবহন বাবদ বাজেট ২০০ থেকে ৩৬০ ইউরো (২৬ হাজার ৪৩৭ থেকে ৪৭ হাজার ৫৮৬ টাকা)। আর ইউটিলিটির জন্য রাখতে হয় মাসে ১৩০ থেকে ৩২৩ ইউরো (১৭ হাজার ১৮৪ থেকে ৪২ হাজার ৬৯৫ টাকা)।

ইতালিতে স্কলারশিপের সুবিধা

শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য ব্যয়বহুল শহরগুলোতেই থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক খরচের চাপ সামলানোতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে স্কলারশিপ।

লিপস্কলারের মতে ইতালির সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্কলারশিপগুলো নিম্নরূপ-

ইতালীয় পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ। স্নাতক, মাস্টার্স বা পিএইচডির জন্য নিবেদিত এই প্রকল্পটির আওতায় রয়েছে প্রতি বছর ৯ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪৬ টাকার সমান।

ইউনিভার্সিটি অব বোলোগ্নার ইন্টার্ন্যাশনাল ট্যালেন্টস অ্যাট ইউনিবো স্কলারশিপ দেয় ৪ হাজার ৫০০ ইউরো (৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮২৩ টাকা) এবং সম্পূর্ণ পড়াশোনার ফি মওকুফ।

ইউনিভার্সিটির অব মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিলেন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম শুধু মাস্টার্সের জন্য। এখানে পাওয়া যায় প্রতি বছর সর্বমোট ৮ হাজার ইউরো (১০ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৩ টাকা)।

স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব পাডুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাডুয়া ইন্টার্ন্যাশনাল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ। এটিও প্রতি বছর বরাদ্দ রাখে ৮ হাজার ইউরো (১০ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৩ টাকা)।

শেনজেনের প্রসিদ্ধ স্কলারশিপ ইএমজেএমডি (ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার ডিগ্রি)। এটি ফুড ইনোভেশন অ্যান্ড প্রোডাক্ট ডিজাইন বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহন করে। এছাড়াও এর আওতায় রয়েছে সম্পূর্ণ বীমা, যাতায়াত, ইতালিতে পৌঁছার পরপরই প্রাথমিক সেটেল হওয়ার খরচ ও মাসিক ভাতা।

পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ইতালিতে খণ্ডকালীন চাকরি করার জন্য স্টুডেন্ট ভিসার পাশাপাশি প্রয়োজন হবে রেসিডেন্ট ওয়ার্ক পার্মিট। এই পার্মিট সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা বা বছরে ১ হাজার ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ দেয়। তবে এই অনুমতি দিয়ে ব্যবসা করা যাবে না।

খণ্ডকালীন চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ‘১৫০ ওরে’। ‘ওরে’ হচ্ছে ইতালীয় শব্দ, যার অর্থ ঘণ্টা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে মূলত নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাধারণত প্রশাসনিক বিভাগে) সর্বোচ্চ ১৫০ ঘণ্টা কাজ করতে পারে।

এর বাইরেও বিভিন্ন শহরে ছাত্রছাত্রীদের কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য রয়েছে বিস্তর সুযোগ। লিপস্কলারের অনুসারে ঘণ্টাপ্রতি গড় মজুরিসহ জনপ্রিয় কয়েকটি চাকরির তালিকা দেওয়া হলো:

ক্যাশিয়ার: ১১ ইউরো বা ১ হাজার ৪৫৪ টাকা

প্যাকেজ হ্যান্ডলার: ১১ ইউরো (১ হাজার ৪৫৪ টাকা)

ওয়েটার: ১০ ইউরো (১ হাজার ৩২২ টাকা)

কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট: ১৫ ইউরো (১ হাজার ৯৮৩ টাকা)

ডেলিভারি বয়: ১৭ ইউরো (২ হাজার ২৪৭ টাকা)

রিসেপশনিস্ট: ১২ ইউরো বা ১ হাজার ৫৮৬ টাকা

স্টুডেন্ট কোলাবোরেটর: ১৪ ইউরো বা ১ হাজার ৮৫১ টাকা

ইতালির সবচেয়ে ধনী শহর হিসেবে মিলানের বাজারে চাকরির মজুরি তুলনামূলকভাবে বেশি। দ্বিতীয় পর্যায়ের রয়েছে রোম, আর সবচেয়ে কম মজুরি পিসাতে।

শেষাংশ

চারুকলা, ফ্যাশন ডিজাইন ও মানবিক বিষয়ে উৎসাহী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সেরা গন্তব্য ইতালি। ভর্তি পদ্ধতিতে শেনজেনভুক্ত দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করায় এই ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ রয়েছে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ভ্রমণের। অধ্যয়ন খরচের যে বাধাটি রয়েছে তা অনায়াসেই অতিক্রম করা সম্ভব স্কলারশিপ অর্জনের মাধ্যমে। এরই সঙ্গে খণ্ডকালীন চাকরিগুলো জীবনযাত্রা সহজ করার পাশাপাশি আরও কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে ইতালীয় জনজীবনের। উপরন্তু, স্টুডেন্ট ভিসা এবং রেসিডেন্ট ওয়ার্ক পার্মিট লাভের প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই পুরো যাত্রাটিকে একটি কাঙ্ক্ষিত রূপ দেওয়া সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com