সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১২ পূর্বাহ্ন

ইউরোপ পাড়ির স্বপ্ন ডুবছে ভূমধ্যসাগরে

  • আপডেট সময় সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩

নিয়মিত মৃত্যু বা নিখোঁজের ঘটনাও অনেকের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি থামাতে পারছে না। শরীয়তপুর-মাদারীপুরের পর অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়েছে নরসিংদী জেলায়ও। ভাগ্য বদলাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন তরুণেরা। দালালের প্রলোভনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা চলছে। আর নিয়মিত ব্যবধানে ঘটা দুর্ঘটনায় ইউরোপ পাড়ির স্বপ্ন ডুবছে ভূমধ্যসাগরে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে গত জুন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৫ জন।

এর মধ্যে ইউরোপ পৌঁছেছেন ১১ লাখ ৬৪ হাজার ১৮ জন। আর পাড়ি দিতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের পুলিশের কাছে ধরা পড়েছেন ৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৫৪ জন। সমুদ্রে হারিয়ে গেছেন ১৯ হাজার ৫৬৩ জন। যাঁদের অনেকের লাশটাও পাওয়া যায়নি।

নিবন্ধিত কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ উপায়ে বিদেশ যাত্রা প্রতিরোধে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে।

আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব

সর্বশেষ ৭ আগস্ট ভূমধ্যসাগরে যে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে, তাতে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার অন্তত ২০ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাসুদ রানা। তাঁর চাচা মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লোভে পড়ে মাসুদ চাকরি ছেড়ে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন। আগস্টের নৌকাডুবির দুর্ঘটনায় তাঁর লাশ উদ্ধার হয়েছে, অন্তত লাশটি দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। যত টাকা খরচ হোক, সরকার যেন তার ব্যবস্থা করে দেয়।

নিহত মাসুদ রানার বাড়ি উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভাটেরচরে। সেখানে গিয়ে স্বজন–প্রতিবেশীসহ অন্তত ৩০ নারীকে ঘরের ভেতরে বসে দোয়াদরুদ পড়তে দেখা গেছে। মাসুদের চাচাতো ভাই লুৎফর রহমান বলেন, দালাল জাকিরের মাধ্যমে মাসুদ বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়েই লিবিয়া পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তাঁরা সম্পর্কে আত্মীয়। তাই এ বিষয়ে তাঁরা কিছু বলতে চাইছেন না।

শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রবেশের তালিকায় উৎস দেশের মধ্যে কয়েক বছর ধরে শীর্ষ তিনে আছে বাংলাদেশের নাম। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে গত জুলাই পর্যন্ত অবৈধভাবে ইতালি পৌঁছানো নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ তিউনিসিয়ার। ১৮ শতাংশের বেশি আছে মিসরের। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের নাগরিক আছেন প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। এ সময়ে ইতালি গেছেন ২৯ হাজার ৭৭৮ জন বাংলাদেশি।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধিত কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ উপায়ে বিদেশ যাত্রা প্রতিরোধে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। কোনো মামলা হলে দালালদের গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

সমুদ্র পাড়ির উৎস বেলাব উপজেলা

দালালের প্রলোভনে ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন পূরণে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে দেশের শরীয়তপুর-মাদারীপুর জেলা। বেশি প্রবাসী থাকায় এখানে বিভিন্ন জায়গায় ইতালি পাড়াও গড়ে উঠেছে।

তবে এর বাইরে নরসিংদীও আলোচনায় উঠে এসেছে। এ জেলার বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের এক হাজারের বেশি মানুষ গত ১০ বছরে ইতালি পাড়ি দিয়েছেন। সর্বশেষ আগস্টের নৌ দুর্ঘটনায় এখানকার ২০ জন ছিলেন। যার মধ্যে ১২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৭ জন নিখোঁজ। জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ১ জন।

নিজেদের উন্নতির জন্য জেনেশুনেই ঝুঁকি নিয়ে ইতালির পথে রওনা করেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার মাসুদ ছাড়াও আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে আছেন নিলক্ষীয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১), কাঙ্গালিয়া গ্রামের মোখলেছুর রহমান (২০), আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল (৩৪), দুলালকান্দি গ্রামের মনির হোসেন (২২) ও রবিউল মিয়া (৩৩), দড়িকান্দি গ্রামের আবু রায়হান (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের স্বাধীন মিয়া (২০) এবং দেওয়ানের চর গ্রামের ইমন মিয়া (২০)।

নারায়ণপুর ইউনিয়নের দুলালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন লিবিয়ায় থাকেন। তাঁরই স্থানীয় প্রতিনিধি জাকিরের ফুফু শাহিনুর বেগম। এ দুজনের সঙ্গে আলোচনা করেই ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেছেন দুলালকান্দি গ্রামের ২০ জন।

জাহাজে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পর্যন্ত যাওয়ার মৌখিক চুক্তি করেছিলেন তাঁরা। গত এপ্রিলে কয়েক ধাপে ২০ তরুণ বৈধ পথে গিয়ে পৌঁছান লিবিয়ায়। এরপর শুরু হয় তাঁদের অজানা অধ্যায়ের কষ্টকর জীবন।

নিখোঁজ দুজনের পরিবারে কান্নাকাটি দেখে লিবিয়ার অবস্থান করা দালাল জাকিরের কাছে ১১ আগস্ট প্রকৃত ঘটনা জানতে ফোন করেছিলেন নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মিলন মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাকির ফোনটি আরেকজনকে দিয়ে ধরিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমেই জাকিরের ২০ জন লোক ওই নৌকায় থাকার কথা জানা গেছে।

দারিদ্র্য বা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ থেকে এসব অভিবাসন হচ্ছে না। এটি হচ্ছে মূলত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে।

তাসনিম সিদ্দিকী, গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার

মিলন মিয়া আরও বলেন, বেলাব উপজেলার অন্তত ৮০০ লোক এভাবে দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইতালি গিয়ে এখন ভালো আছেন। তাঁদের দেখেই বর্তমানের তরুণ-যুবকেরা এভাবে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন। আগে ইতালি যাওয়ার জন্য দালালকে দিতে হতো ৮ লাখ, তিন মাস আগেও দিতে হতো ১০ লাখ কিন্তু এখন লাগছে ১২ লাখ টাকা। নিরুৎসাহিত করলেও লোভে পড়া তরুণদের এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না।

এর আগে গত ২৪ জুন লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে মো. আবদুল নবী (৩০) নামের রায়পুরার এক যুবকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে থাকা নরসিংদীর আরও ১৩ তরুণ-যুবক নিখোঁজ হন। ওই ১৩ জনের মধ্যে বেলাব উপজেলারই ছিলেন ৭ জন। ২০২২ সালের ৩ মার্চ একইভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে বেলাব উপজেলার তিন যুবকের মৃত্যু হয়।

সমুদ্র পাড়ির ‘গেম’ ও গেমঘরের জীবন

লিবিয়ায় পৌঁছানোর এক দিন পরই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সমুদ্র পাড়ির প্রশিক্ষণের (গেম) নামে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট শিবিরে। এটি মূলত গেমঘর নামে পরিচিত। কারও সঙ্গে যোগাযোগের কোনো উপায় নেই এখানে। খবরের অপেক্ষায় থাকে পরিবার। গত এপ্রিলে লিবিয়া পৌঁছানো এমন কয়েকজনের পরিবারে শেষ পর্যন্ত খবর আসে ১১ আগস্ট। এর চার দিন আগের নৌকাডুবিতে বেলাব উপজেলার ২০ জনের মধ্যে ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন আরও একজনের লাশ উদ্ধার হয়। এরই মধ্যে আরও একজন সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন। এখনো নিখোঁজ বাকি ৭ জন।

নিখোঁজদের তালিকায় থাকা আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই জামাল মিয়া বলেন, ভৈরবের একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে গত এপ্রিলে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন আনোয়ার। দালাল জাকির ও শাহিনুরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী দেশ ছাড়ার ১৫ দিনের মধ্যে জাহাজে করে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। আত্মীয়স্বজন ও সমিতি থেকে ধাপে ধাপে ঋণ করে এই পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা জাকিরের বাবা লাল মিয়ার হাতে দেওয়া হয়েছে।

গত এক মাস আরও অনেকের সঙ্গে আনোয়ারকে গেমঘরে রাখা হয় উল্লেখ করে জামাল মিয়া বলেন, এখানে ঠিকমতো খাওয়া দিত না, জীবন ছিল মানবেতর। এরপর সর্বোচ্চ ৩০ জনের জন্য নির্ধারিত ছোট একটি নৌকায় ৫০ জনকে তোলা হয়েছিল। রওনা হওয়ার ৪০ মিনিট পরই এটি ডুবে যায়। তিনি বলেন, ভাইয়ের সন্ধান নেই। ঋণের টাকা শোধ করার কোনো উপায় জানা নেই।

দালালের প্রলোভনের ফাঁদ

স্থানীয় লোকজন দাবি করেন, গত ১০ বছরে বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার হাজারের বেশি তরুণ স্থানীয় দালাল জাকির হোসেনের মাধ্যমে অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে ইতালি গেছেন। তাঁরা কয়েক বছর কষ্ট করার পর এখন ভালো আছেন, বাড়িতে নিয়মিত ভালো পরিমাণ টাকা পাঠাচ্ছেন।

এসব দেখে বর্তমানের তরুণ-যুবকেরাও অবৈধভাবেই ইতালি চলে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন। আত্মীয়স্বজন ও সমিতি থেকে ঋণ করে লাখ লাখ টাকা স্থানীয় ওই দালালের হাতে তুলে দিচ্ছেন তাঁরা। মৃত্যুর হাতছানি থাকলেও পরিবারের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁদের থামাতে পারছে না।

১২ আগস্ট শাহিনুর বেগমের বাড়িতে গিয়ে দোতলা বাড়িটির প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। প্রতিবেশী এক নারী জানান, ১০ আগস্ট দুপুরের পরপরই বাড়িতে তালা দিয়ে তাঁরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা অনেকেই বাড়িটিতে এসে জাকিরের বাবা ও ফুফুর খোঁজ করছেন। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। লিবিয়ায় অবস্থান করা দালাল জাকিরের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার এই ভয়ংকর যাত্রা চিরতরে বন্ধ করা দরকার। অবৈধ পথ অবলম্বন করায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোও আইনের আশ্রয় নিতে আসে না। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দালাল জাকির ও শাহিনুরের পরিবারের পলাতক সদস্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।

নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে

লাশ পাওয়া না গেলে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে মৃত বলা যায় না। এ কারণে এঁদের নিখোঁজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আইওএম বলছে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ বা মৃত্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে সমুদ্রে ডুবে।

২৫ হাজার ৯৩০ জন ডুবে গেছেন। এ ছাড়া নৌযান দুর্ঘটনা, কঠিন পরিবেশ ও খাবারের সমস্যা, সহিংসতা, অসুস্থতাসহ নানা কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এখানে। সর্বশেষ আগস্টে সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন ১৭ জন আর হারিয়ে গেছেন অন্তত ৩০ জন। তবে এঁদের সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রতি মাসেই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো মাসে একাধিকবার দুর্ঘটনার খবর আসছে। জুলাইয়ে ৫৮ জন হারিয়ে গেছেন। এর আগে শুধু জুনেই হারিয়ে গেছেন ৭৪৯ জন।

আইওএম প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৮৪৫ জন হারিয়ে গেছেন সমুদ্রের পানিতে। ২০১৪ সালে হারিয়ে যান ৩ হাজার ২৮৯ জন। এরপর সর্বোচ্চ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে। ওই বছর হারিয়ে যান ৫ হাজার ১৩৬ জন। এরপর এটি কমে আসে। ২০২০ সালে নিখোঁজ হন ১ হাজার ৪৪৯ জন। তবে ২০২১ সাল থেকে এটি আবার বাড়তে শুরু করেছে। ওই বছর ২ হাজার ৪৮ জন ও ২০২২ সালে ২ হাজার ৪১১ জন হারিয়ে যান সমুদ্রে। আর এ বছরের ৮ মাসেই নিখোঁজ হয়েছেন ২ হাজার ৯৬ জন।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাচ্ছেন যেসব দেশের নাগরিকেরা, তাদের মধ্যে শীর্ষ দেশগুলো আফ্রিকার। এসব দেশ যুদ্ধসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সিরিয়াও আছে এ তালিকায়। এর মধ্যে বাংলাদেশের নামটাও থাকছে নিয়মিত।

বেসরকারি খাতের অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, দারিদ্র্য বা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ থেকে এসব অভিবাসন হচ্ছে না। এটি হচ্ছে মূলত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে।

দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মধ্যেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে ওপরে ওঠার স্বপ্ন আরও তীব্র হয়েছে। ইউরোপে গেলেই জীবন বদলে যাবে; তাই নির্যাতন, নিপীড়ন, মুক্তিপণ বা মৃত্যুর শঙ্কা অতটা মাথায় নেয় না। আর অবৈধ শ্রমিকদের দিয়ে কম টাকায় কাজ করাতে ইউরোপের দেশগুলোর শিথিল নীতিও এমন অভিবাসনে উৎসাহ দেয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com