চীনের নাম বললে সম্ভবত গ্রেট ওয়ালের ছবিটাই সবার আগে চোখে আসে। সত্যিকার অর্থে এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে বড় কীর্তি এই গ্রেট ওয়াল বা চীনের মহাপ্রাচীর। এটি মানুষের নির্মিত একমাত্র স্থাপনা যা চাঁদ থেকেও দেখা যায়। দীর্ঘ এই প্রাচীরটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার। গড় উচ্চতা ৬ থেকে ৮ মিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৬ মিটার। প্রাচীন যাযাবর বিশেষত মঙ্গোলিয়ানদের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে এই প্রাচীর নির্মান করেন চীনের রাজারা। প্রাচীন এই স্থাপনাটি জায়গা করে নিয়েছে সপ্তম আশ্চর্যের একটি হয়ে।
বেইজিং-এর নিষিদ্ধ নগরীর মত ইম্পেরিয়াল প্যালেসও মূলত চীনের সামন্তবাদী শাসনের কথা নির্দেশ করে। বলা চলে, এই ইম্পেরিয়াল প্যালেস ছিল চীনের রাজাদের শাসনকেন্দ্র। ১৪০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রাসাদের রয়েছে প্রায় ৬০০ বছরের পুরাতন ইতিহাস যা চীনের পরিচিতি বহির্বিশ্বে নতুনভাবে তুলে ধরে। মিঙ এবং কিঙ বংশের প্রায় ২৪ জন রাজা এখান থেকেই চীনের শাসনকার্য প্পরিচালনা করেছেন।
বর্তমানে এটি ‘প্রাসাদ জাদুঘর’ হিসেবে সঙ্গরক্ষিত। আর জাদুঘরের হিসেবে এতে নমুনা রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৬৯০টি। এটি বিশ্বের ফাইভ প্যালেসের একটি বলে বিবেচনা করা হয়। এতে কিঙ যুগের প্রায় ১১৪টি ভবন রয়েছে।
১৯৭৪ সালে সাংঘাই প্রদেশের সিয়ান শহরের প্রান্তিক অঞ্চলে কজন কৃষকের হাত ধরে আবিষ্কৃত হয় এক অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এর সমাধির মন্দিরে আবিষ্কৃত হয় দ্য ট্যারাকোটা আর্মি। প্রায় ২০০ বছর ধরে মাটির নিচে ছিল এই অসাধারণ শিল্পকর্ম। ধারণা করা হয়, সম্রাট কিন শি হুয়াং-এর মৃত্যুর পর স্থানীয় লিংথন জেলার কৃষকেরা সম্রাটের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে পোড়ামাটির এই সৈন্যবাহিনী তৈরি করে।
গৌতম বুদ্ধ এবং তার প্রচলন করা বৌদ্ধ ধর্মের এত বড় সংগ্রহ সারাবিশ্বের আর কোথাও নেই বলেই বিশ্বাস করেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। মিঙশা পর্বতের পূর্বপ্রান্তে, ডনহুয়াং শহরের ২৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ৩৬৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও চীনের রাজ শাসনের অবসানের পরপর এতে ব্যাপক আকারে পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে ৭৩৫টি গুহা, ৪৫ হাজার বর্গমিটার জুড়ে থাকা ম্যুরাল এবং ২ হাজার ৪১৫টি ভাষ্কর্য এই জায়গায় রয়েছে।
প্রাকৃতিক ঐতিহ্য চেংদু রিসার্চ বেজ অফ জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং চীনের পান্ডাপ্রীতি আসলে কতটুক তা বোঝা যায় তাদের সংস্কৃতির দিকে তাকালে। অবশ্য তাদের জাতীয় পশুই পান্ডা। আর চীনের এই জায়ান্ট পাণ্ডা সারাবিশ্বের পর্যটকদের কাছের দারুণ আগ্রহ জাগায় প্রতিবছর। সবচেয়ে বেশি জায়ান্ট পান্ডার দেখা মেলে সিচুয়ান প্রদেশের চেংদু শহরে। সেখানে চেংদু রিসার্চ বেজ অফ জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং সেন্টারে খুব কাছ থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশে পান্ডা দেখার সুযোগ রয়েছে।
ইউলিনগুয়াং এর সিনিক সেন্টারটি রীতিমত এক গোলকধাঁধা। বেশ কিছু স্থান নিয়ে এটি গঠিত। এর মাঝে রয়েছে ‘ঝাংজিয়াজি ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্ক’, ‘সুচিও কৃত্রিম বনাঞ্চল’, ‘টিয়ানজিশাং কৃত্রিম বনাঞ্চল’ এবং ‘ঝাংজিয়াজি কৃত্রিম বনাঞ্চল‘। সবমিলিয়ে পর্যটকদের জন্য এটি একেবারেই পরবাস্তব জগতের আবহ তৈরি করে। পুরো জায়গাটি একাধারে ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর, একটি বিশাল বন, একটি সাজানো বাগান এবং সেইসাথে প্রাণিদের জন্য অভয়ারণ্য। বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘অ্যাভাটার’-এর শ্যুটিং এই বনাঞ্চলেই হয়েছিল।
প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠে হুয়াংশান পর্বতটি। যা বর্তমানে পর্যটকদের কাছে ইয়েলো মাউন্টেন বা হলুদ পাহাড় নামে পরিচিত। এই পর্বতে পর্যটক আকৃষ্ট হয় এর চারটি গুণে। অদ্ভুত দর্শন পাইন গাছ, চমকপ্রদ পাথুরে এলাকা, মেঘের রাজ্য আর সেই সাথে এর প্রাকৃতিক উষ্ণ পানির ঝর্ণা। এই চারের সমন্বয়ে হুয়াংশান পর্বত চীনের পর্যটন শিল্পের এক বিশাল অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।