1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট : চীন
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৭:১৪ অপরাহ্ন

ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট : চীন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩

সভ্যতার এক উর্বরভূমি বলা চলে চীনকে। সেই অনাদিকাল থেকেই চীন তার নিজের ভেতর উকিয়ে রেখেছে অনন্য সব কীর্তি। বর্তমান বিশ্বে অন্যতম পরাশক্তির এই দেশ ইতিহাস-ঐতিহ্যে বেশ সমৃদ্ধ। চীনাদের ইতিহাস অনেক পুরাতন। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক উভয় দিক থেকেই অনন্য সব কীর্তির ধারক।

লেখক হুমায়ুন আহমেদ যখন একেবারেই লিখতে পারছেন না, সবাই মিলে প্রস্তাব দিলেন বায়ু পরিবর্তনের। প্রথাগত সব পছন্দ ছেড়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন চীন ভ্রমণের। সেই চীন, যেখানে মাও সে তুং, দেং জিয়াও পিং-এর মত নেতা ছিলেন। ছিলেন হিউয়েন সাঙ-এর মত পর্যটক। ছিল মিঙ বা কিঙ রাজের মত ঐতিহ্যবাহী শাসন ব্যবস্থা।

হাজার বছরের ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ দেশটিতে তাই দর্শনীয় বা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক স্থানের কোন অভাব নেই। বলতে গেলে ইতালির সাথে যৌথভাবে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ইউনেস্কো স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এই চীনেই রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৫টি হেরিটেজ সাইট আছে চীনে। এরমাঝে ৩৭টি সাংস্কৃতিক, ১৪টি প্রাকৃতিক এবং ৪টি মিশ্র। চীনের এই বিশাল ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনের চূম্বকীয় কিছু দিক দেখে নিতে পারেন এক নজরে।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা :

দ্য গ্রেট ওয়াল

চীনের নাম বললে সম্ভবত গ্রেট ওয়ালের ছবিটাই সবার আগে চোখে আসে। সত্যিকার অর্থে এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে বড় কীর্তি এই গ্রেট ওয়াল বা চীনের মহাপ্রাচীর। এটি মানুষের নির্মিত একমাত্র স্থাপনা যা চাঁদ থেকেও দেখা যায়। দীর্ঘ এই প্রাচীরটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার। গড় উচ্চতা ৬ থেকে ৮ মিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৬ মিটার। প্রাচীন যাযাবর বিশেষত মঙ্গোলিয়ানদের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে এই প্রাচীর নির্মান করেন চীনের রাজারা। প্রাচীন এই স্থাপনাটি জায়গা করে নিয়েছে সপ্তম আশ্চর্যের একটি হয়ে।

বেইজিং এর নিষিদ্ধ নগরী

বেইজিং এর নিষিদ্ধ নগরী চীনের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। এক সময় এখানে সাধারণ জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল বলে এর নাম করা হয় নিষিদ্ধ নগরী। চীনের প্রাচীন এই স্থাপনার মাঝে প্রায় চার হাজারের বেশি সু-সজ্জিত কামরা রয়েছে। রঙ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে চীনের প্রথাগত লাল এবং হলুদ রঙ। অবাক করা ব্যাপার হল, এর ছাপ সম্পূর্ণ স্বর্নের তৈরি। কিংবদন্তী বলে এই নিষিদ্ধ নগরীতে প্রকৃতপক্ষে ৯৮০টি ভবন এবং ৯৯৯৯টি আলাদা কক্ষ ছিল। মিঙ এবং কিঙ সম্রাজ্যের শুরু থেকে ১৯১২ সালে চীনের সর্বশেষ সম্রাট প্পুই পর্যন্ত সকলেই এই জায়গায় বসবাস করতেন।

ইম্পেরিয়াল প্যালেস

বেইজিং-এর নিষিদ্ধ নগরীর মত ইম্পেরিয়াল প্যালেসও মূলত চীনের সামন্তবাদী শাসনের কথা নির্দেশ করে। বলা চলে, এই ইম্পেরিয়াল প্যালেস ছিল চীনের রাজাদের শাসনকেন্দ্র। ১৪০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রাসাদের রয়েছে প্রায় ৬০০ বছরের পুরাতন ইতিহাস যা চীনের পরিচিতি বহির্বিশ্বে নতুনভাবে তুলে ধরে। মিঙ এবং কিঙ বংশের প্রায় ২৪ জন রাজা এখান থেকেই চীনের শাসনকার্য প্পরিচালনা করেছেন।

বর্তমানে এটি ‘প্রাসাদ জাদুঘর’ হিসেবে সঙ্গরক্ষিত। আর জাদুঘরের হিসেবে এতে নমুনা রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৬৯০টি। এটি বিশ্বের ফাইভ প্যালেসের একটি বলে বিবেচনা করা হয়। এতে কিঙ যুগের প্রায় ১১৪টি ভবন রয়েছে।

প্রাচীন চীনের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যশিল্প সম্পর্কে জানার জন্য ইম্পেরিয়াল প্যালেস সাধারণ পর্যটকের পাশাপাশি গবেষক এবং শিক্ষানুরাগিদের কাছেও আলাদা গুরুত্ব বহন করে।

দ্য ট্যারাকোটা আর্মি

১৯৭৪ সালে সাংঘাই প্রদেশের সিয়ান শহরের প্রান্তিক অঞ্চলে কজন কৃষকের হাত ধরে আবিষ্কৃত হয় এক অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এর সমাধির মন্দিরে আবিষ্কৃত হয় দ্য ট্যারাকোটা আর্মি। প্রায় ২০০ বছর ধরে মাটির নিচে ছিল এই অসাধারণ শিল্পকর্ম। ধারণা করা হয়, সম্রাট কিন শি হুয়াং-এর মৃত্যুর পর স্থানীয় লিংথন জেলার কৃষকেরা সম্রাটের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে পোড়ামাটির এই সৈন্যবাহিনী তৈরি করে।

অবিকল মানুষের ন্যায় দেখতে প্রায় ৮ হাজারটি সৈন্যমূর্তি এতে সংরক্ষিত আছে। বিষ্ময়কর ব্যাপার হল, এদের উচ্চতাও গড় চীনা মানুষের সমান এবং প্রতিটি মূর্তি আলাদা আলাদা চেহারার। সৈন্য মূর্তির বাইরেও এখানে ৫২০টি ঘোড়া, ১০০টির মত রথ, এবং আরও কিছু বেসামরিক নাগরিকের মূর্তি পাওয়া গিয়েছে।

হাজার বুদ্ধের গুহা

গৌতম বুদ্ধ এবং তার প্রচলন করা বৌদ্ধ ধর্মের এত বড় সংগ্রহ সারাবিশ্বের আর কোথাও নেই বলেই বিশ্বাস করেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। মিঙশা পর্বতের পূর্বপ্রান্তে, ডনহুয়াং শহরের ২৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ৩৬৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও চীনের রাজ শাসনের অবসানের পরপর এতে ব্যাপক আকারে পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে ৭৩৫টি গুহা, ৪৫ হাজার বর্গমিটার জুড়ে থাকা ম্যুরাল এবং ২ হাজার ৪১৫টি ভাষ্কর্য এই জায়গায় রয়েছে।

প্রাকৃতিক ঐতিহ্য চেংদু রিসার্চ বেজ অফ জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং চীনের পান্ডাপ্রীতি আসলে কতটুক তা বোঝা যায় তাদের সংস্কৃতির দিকে তাকালে। অবশ্য তাদের জাতীয় পশুই পান্ডা। আর চীনের এই জায়ান্ট পাণ্ডা সারাবিশ্বের পর্যটকদের কাছের দারুণ আগ্রহ জাগায় প্রতিবছর। সবচেয়ে বেশি জায়ান্ট পান্ডার দেখা মেলে সিচুয়ান প্রদেশের চেংদু শহরে। সেখানে চেংদু রিসার্চ বেজ অফ জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং সেন্টারে খুব কাছ থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশে পান্ডা দেখার সুযোগ রয়েছে।

১৯৮৭ সালে গবেষণার উদ্দেশ্যে মাত্র ৬টি পান্ডা নিয়ে এই রিসার্চ সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এতে পান্ডার সংখ্যা ৮০টি। এবং এখন পর্যন্ত এখানে ১২৪টি পান্ডার জন্ম হয়েছে।

ইউলিনগুয়াং সিনিক এন্ড হিস্টোরিক ইন্টারেস্ট এরিয়া

ইউলিনগুয়াং এর সিনিক সেন্টারটি রীতিমত এক গোলকধাঁধা। বেশ কিছু স্থান নিয়ে এটি গঠিত। এর মাঝে রয়েছে ‘ঝাংজিয়াজি ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্ক’, ‘সুচিও কৃত্রিম বনাঞ্চল’, ‘টিয়ানজিশাং কৃত্রিম বনাঞ্চল’ এবং ‘ঝাংজিয়াজি কৃত্রিম বনাঞ্চল‘। সবমিলিয়ে পর্যটকদের জন্য এটি একেবারেই পরবাস্তব জগতের আবহ তৈরি করে। পুরো জায়গাটি একাধারে ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর, একটি বিশাল বন, একটি সাজানো বাগান এবং সেইসাথে প্রাণিদের জন্য অভয়ারণ্য। বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘অ্যাভাটার’-এর শ্যুটিং এই বনাঞ্চলেই হয়েছিল।

মিশ্র ঐতিহ্যবাহী স্থান

মাউন্ট হুয়াংশান

প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠে হুয়াংশান পর্বতটি। যা বর্তমানে পর্যটকদের কাছে ইয়েলো মাউন্টেন বা হলুদ পাহাড় নামে পরিচিত। এই পর্বতে পর্যটক আকৃষ্ট হয় এর চারটি গুণে। অদ্ভুত দর্শন পাইন গাছ, চমকপ্রদ পাথুরে এলাকা, মেঘের রাজ্য আর সেই সাথে এর প্রাকৃতিক উষ্ণ পানির ঝর্ণা। এই চারের সমন্বয়ে হুয়াংশান পর্বত চীনের পর্যটন শিল্পের এক বিশাল অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া চীনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রেও হুয়াংশান পর্বতের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ইতিহাস বলে, চীনের বহু কবি, সাহিত্যিক এর সৌন্দর্যে প্রভাবিত। যারা চীনের ইতিহাসে যুক্ত করেছেন অনবদ্য সব চিত্রকলা, সাহিত্য আর কিংবদন্তী। এই পর্বত থেকেই জন্ম নিয়েছে হুয়াংশান পেইন্টিং স্টাইলের যার থেকে জন্ম নিয়েছে অনন্য সব শিল্পকর্ম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com