এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে আরও কিছু অনন্য ও ঐতিহাসিক জায়গাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হলো, যেগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ প্রয়োজন।
তালিকায় যেসব নাম
নতুন তালিকাভুক্ত স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার মালাউইর মাউন্ট মুলাঞ্জে কালচারাল ল্যান্ডস্কেপ। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ। এখানকার ইয়াও, লোমওয়ে ও মাংগাঞ্জা আদিবাসীরা প্রাচীনকাল থেকে পাহাড়টিকে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচনা করে। একে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে নানান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অন্যদিকে, জার্মানির দ্বিতীয় কিং লুডউইগের প্রাসাদগুলোও এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এই প্রাসাদগুলো রোমান্টিক যুগের স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন, যা আজও দেশটির পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ।
পূর্ণাঙ্গ তালিকা
⦁ স্মৃতিস্তম্ভ, কম্বোডিয়া
⦁ পেরুয়াকু ন্যাশনাল পার্ক, ব্রাজিল
⦁ বিজাগোস দ্বীপপুঞ্জ, গিনি-বিসাউ
⦁ প্রাচীন খুত্তালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তাজিকিস্তান
⦁ মান্দারা পর্বতমালার সংস্কৃতি, ক্যামেরুন
⦁ ফায়া পালেওল্যান্ডস্কেপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত
⦁ ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মালয়েশিয়া
⦁ ডোমুস দে জানাস, ইতালি
⦁ গোলা-টিওয়াই কমপ্লেক্স, সিয়েরা লিওন
⦁ মারাঠা সামরিক এলাকা, ভারত
⦁ কারনাক ও মর্বিহানের প্রাচীন পাথরের স্তম্ভ, ফ্রান্স
⦁ মিনোয়ান প্রাসাদ, গ্রিস
⦁ কুমগাং পর্বত, উত্তর কোরিয়া
⦁ মাউন্ট মুলাঞ্জে, মালাউই
⦁ মনস ক্লিন্ট, ডেনমার্ক
⦁ মুরুজুগা, অস্ট্রেলিয়া
⦁ বাঙ্গুচিওন স্রোতের পেট্রোগ্লিফ, দক্ষিণ কোরিয়া
⦁ শুলগান-তাশ গুহা, রাশিয়া
⦁ সারডিস ও বিন তেপের সমাধি, তুর্কি
⦁ পোর্ট রয়্যাল, জ্যামাইকা
⦁ ঔপনিবেশিক পথ, পানামা
⦁ কিং লুডউইগের প্রাসাদসমূহ, জার্মানি
⦁ খোররামাবাদ উপত্যকার প্রাগৈতিহাসিক স্থান, ইরান
⦁ উইক্সারিকা রুট, মেক্সিকো
⦁ শি শিয়া সাম্রাজ্যের সমাধি, চীন
⦁ ভিয়েতনামের ইয়েন তু ও কিয়েপ বাক এলাকা
তালিকায় স্থান পেতে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয়
বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় জায়গা পেতে হলে একটি স্থানকে ইউনেসকো নির্ধারিত দশটি মানদণ্ডের অন্তত একটিতে উত্তীর্ণ হতে হয়। এই মানদণ্ডগুলো সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক—এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন:
⦁ স্থাপত্য, কৌশল বা প্রযুক্তির অসাধারণ নিদর্শন
⦁ কোনো সভ্যতা বা ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন
⦁ মানুষের সৃজনশীলতা বা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিফলন
⦁ ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা জীববৈচিত্র্য
⦁ গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত বা ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস বহনকারী অঞ্চল
কোনো দেশের প্রস্তাবিত স্থানকে প্রথমে সম্ভাব্য তালিকায় রাখা হয়। এরপর বিস্তারিত গবেষণা, প্রমাণ, স্থানীয় সম্প্রদায়ের মতামত এবং দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের পর ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি তা অনুমোদন করে।
বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের গুরুত্ব
বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা শুধু যে মর্যাদার বিষয়, তা নয়। এটি ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং ইউনেসকো সময়ে সময়ে মূল্যায়ন করে থাকে।
এ ছাড়া তালিকাভুক্ত স্থানগুলো পর্যটনশিল্পে নতুন গতি আনে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমন বাড়ে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে এর সঙ্গে টেকসই পর্যটনের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়, যেন ঐতিহ্য ও প্রকৃতি নষ্ট না হয়।
বৈচিত্র্যময় মানব ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি
এবারের নতুন তালিকা বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এতে আদিবাসী সংস্কৃতি থেকে শুরু করে ঔপনিবেশিক ইতিহাস ও প্রাচীন সভ্যতা থেকে আধুনিক নিদর্শন পর্যন্ত জায়গা পেয়েছে। এই তালিকায় যেমন আফ্রিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জায়গা পেয়েছে, তেমনি এশিয়ার ধর্মীয় ঐতিহ্য, ইউরোপের রাজকীয় স্থাপত্য এবং লাতিন আমেরিকার ঔপনিবেশিক পথও উঠে এসেছে।
এই ২৬টি নতুন স্থানের সংযোজন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে, যা আজ বিশ্বের মোট ১ হাজার ২০০ টির বেশি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের প্রতিনিধিত্ব করবে।
বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর স্বীকৃতি শুধু স্থাপনা বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়; এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি সম্মান জানানো এবং সংরক্ষণের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিও। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই নিদর্শনগুলো দেখে তাদের শিকড় ও ইতিহাস সম্পর্কে জানে, সেটিই ইউনেসকোর মূল লক্ষ্য।
সূত্র: টাইম আউট