বহুকাল ধরে শিক্ষা, গবেষণা, সৃজনশীলতা ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈচিত্র্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানবিক কল্যাণে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকি।
১১৭টি দেশের ২৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকির ১৬টি একাডেমিক ও প্রফেশনাল কলেজের ১০০টি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি, ৯০টি মাস্টার্স ও ৯০টি ডক্টরাল প্রোগ্রামে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকে।
এ ছাড়া ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকিতে রয়েছে শীর্ষ ২০-এর তালিকায় থাকা ২৫টিরও বেশি প্রোগ্রাম।
ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকির বিশেষত্ব
ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকিতে ৪ শতাধিক ছাত্র সংগঠন রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের পছন্দ মতো ক্লাব, সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত থাকার সুযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রায়ই লাইভ পারফরম্যান্স এবং খেলাধুলার ইভেন্ট আয়োজন করা হয়। গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানে রয়েছে ৭০টিরও বেশি রিসার্চ সেন্টার। বিশ্বমানের শিক্ষা ছাড়াও রয়েছে বিশালাকার লাইব্রেরি, অত্যাধুনিক ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সেন্টার। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে প্যান্ট্রিতে বিনামূল্যে খাবার সুবিধা আছে।
যেসব বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে
ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকিতে কমিউনিকেশন, মার্কেটিং, বিজনেস, নার্সিং, মনোবিজ্ঞান, ফিন্যান্স, জীববিজ্ঞান, ফিজিক্যাল এডুকেশন টিচিং অ্যান্ড কোচিং, হিসাববিজ্ঞান, ইনফরমেশন সায়েন্সে মেজর প্রোগ্রামের পাশাপাশি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ৬টি বিভাগে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন-
আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ: স্থাপত্যবিদ্যা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ভাষাবিজ্ঞান, দর্শন, চারুকলা, মার্চেন্ডাইজিং, অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইলস।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি: কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটারিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং।
ন্যাচারাল সায়েন্স: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান, গাণিতিক অর্থনীতি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ বিজ্ঞান।
লাইফ সায়েন্সেস অ্যান্ড মেডিসিন: নৃবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, বায়োসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি, ফরেস্ট্রি, হিউম্যান নিউট্রিশন, ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার, নিউরোসায়েন্স, নার্সিং, ডায়েটিকস।
সোশ্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট: মেজর ইন আর্লি এলিমেন্টারি এডুকেশন, সেকেন্ডারি ইংলিশ এডুকেশন, টপিক্যাল স্টাডিজ, কিনেসিওলোজি, আর্টস এডুকেশন, অর্থনীতি, এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটি স্টাডিজ, ইংলিশ উইথ ইমেজিনেটিভ রাইটিং অপশন, জেন্ডার অ্যান্ড উইম্যান স্টাডিজ, সোশ্যাল ওয়ার্ক, সমাজবিজ্ঞান, স্পেশাল এডুকেশন- লার্নিং অ্যান্ড বিহ্যাভিয়র ডিজর্ডার, পাবলিক হেলথ, ফুড সায়েন্স, ফ্যামিলি সায়েন্স, হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টুরিজম, এগ্রিকালচারাল ইকোনমিকস, ক্যারিয়ার অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে হিসাববিজ্ঞান।
আবেদনের যোগ্যতা
স্কলারশিপের ধরন ও যোগ্যতা
ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ ধরনের স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
ব্লুগ্রাস স্পিরিট স্কলারশিপ
জিপিএ ৩.০০ থাকলে ৫ হাজার মার্কিন ডলার; জিপিএ ৩.৫০ থাকলে ৮ হাজার মার্কিন ডলার; জিপিএ ৩.৬০ থাকলে ১০ হাজার মার্কিন ডলার; জিপিএ ৩.৮০ থাকলে ১২ হাজার মার্কিন ডলার স্কলারশিপ পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে স্যাট ২৫/১২০০ থেকে ৩০/১৩৬০ (এম+সিআর) প্রয়োজন পড়বে।
আবেদনপত্র পূরণ করার ক্ষেত্রে এসব তথ্য প্রদানের সুবিধা থাকায় আলাদা আবেদনপত্রের প্রয়োজন হয় না। আবেদনকারীকে অবশ্যই ফ্রেশম্যান গ্র্যাজুয়েট হতে হবে এবং ১ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
উইলিয়াম সি পার্কার ডাইভার্সিটি
আবেদনকারীর যোগ্যতা অনুযায়ী এই স্কলারশিপের অর্থের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে জিপিএ ২.৫০ থাকলে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রদান সাপেক্ষে আবেদনপত্রে এই স্কলারশিপের সেকশন পূরণ করতে হবে। এ জন্য ৩০০ শব্দের একটি রচনা লিখতে হয় এবং আবেদনকারীকে ফ্রেশম্যান গ্র্যাজুয়েট হতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবেদনের শেষ সময় ১ ডিসেম্বর এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি। তবে আগেই আবেদন করলে ভালো।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর
ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ থাকলে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে স্কলারশিপের অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার মার্কিন ডলার হয়। এ ক্ষেত্রে আলাদা আবেদনপত্রে পাসপোর্ট অনুযায়ী নাম ও জন্ম তারিখ; আইডি নম্বর (আবেদনপত্রে উল্লিখিত); স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কী অবদান রাখবেন সে সম্পর্কে এক পৃষ্ঠার রচনা; নেতৃত্ব ও স্বেচ্ছাসেবী কাজের অভিজ্ঞতা; রেকমেন্ডেশন লেটার প্রয়োজন পড়বে। আবেদনকারীকে অবশ্যই গ্রাজুয়েট ফ্রেশম্যান বা এফ-ওয়ান ভিসায় ট্রান্সফার স্টুডেন্ট হতে হবে এবং ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে আবেদন করতে হবে।
তবে ইন-স্টেট টিউশন যোগ্য শিক্ষার্থী এসব স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে না এবং ভর্তি সম্পন্ন হলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে এবং কোনো ডকুমেন্ট বাদ রাখা যাবে না।
এ ছাড়া ডিপার্টমেন্টভিত্তিক স্কলারশিপ, ট্রান্সফার স্কলারশিপ ও গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন স্কলারশিপের সুযোগ ছাড়াও রয়েছে ফাইন্যান্সিয়াল এইডের সুবিধা। তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফলাফল ও অন্যান্য বিষয়াদি যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয়।
আবেদন প্রক্রিয়া
ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিকোল রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীর পোর্টাল খুলে ফর্ম পূরণ করতে হবে। তারপর আইএলটিএস স্কোর, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, অভিভাবকের প্রয়োজনীয় আর্থিক কাগজপত্র, সার্টিফিকেট, মার্কশিট ইত্যাদির অনলাইন কপি পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবেদন করার সময় ৫০ মার্কিন ডলার ফি দিতে হয়। পরবর্তীতে ট্রান্সক্রিপ্টের মূল কপি ডিএইচএলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। আবেদন গৃহীত হলে দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আবেদনের সময়
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবেদনের শেষ সময়- ১৫ ফেব্রুয়ারি।
খরচ
সাধারণত আবেদন থেকে ভিসা, পাসপোর্ট, প্লেনের টিকেট, প্রথমদিকে থাকা-খাওয়ার খরচের জন্য আনুমানিক ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যক্তিভেদে পরবর্তীতে খরচ বাড়তে বা কমতে পারে। এ ছাড়া পার্ট-টাইম কাজ করারও সুবিধা রয়েছে সেখানে।