সপ্তাহজুড়েই আলোচনার শীর্ষে ইউএসএআইডি (ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট)। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট আর্কাইভ এর মতে, শনিবার ভোর ৩টার কিছুক্ষণ পরে সংস্থাটির ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যায়।
কিছু ব্রাউজার ‘এই সাইটে পৌঁছানো যাবে না’ বার্তা দেখাচ্ছে। সংস্থাটির এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টটিও মুছে ফেলা হয়েছে।
গতকাল রোববার ইলন মাস্ক এক্স-এ ইউএসএআইডি’কে একটি ‘ক্রিমিনাল সংস্থা’ বলে আখ্যা দেন।
ইউএসএআইডি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পে অর্থায়ন করে থাকে। ২০২৩ সালে সংস্থাটি বিভিন্ন খাতে প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। বর্তমানে ইউএসএআইডি সম্পর্কে অনলাইনে খুব সামান্য তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে, যা স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি পৃষ্ঠায় সংরক্ষিত আছে। ইন্টারনেট আর্কাইভ অনুসারে, ২৭ জানুয়ারি এই পৃষ্ঠাটি প্রথমবার সংরক্ষিত হয়।
ওয়েবসাইটটির ইউএসএআইডি সেকশনে মাত্র সাতটি আইটেম রয়েছে। মূল ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন ও তথ্যের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে হ্রাস করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে সংস্থাটির মানবিক সহায়তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সংঘাত প্রতিরোধসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তার পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
ট্রাম্প রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই এই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিদেশি সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে, এই সহায়তা ‘বিশ্ব শান্তিকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করে।’
স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া এবং সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এই পদক্ষেপের ফলে সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। সাহায্য সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে যে ইউএসএআইডিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে একীভূত করা হতে পারে বা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হতে পারে।
রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনাল এর সভাপতি জেরেমি কোনিন্ডিক বলেন, ‘এই উদ্যোগ ইউএসএআইডিকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা।’
কোনিন্ডিক ওবামা প্রশাসনে দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম এবং বাইডেন প্রশাসনে ইউএসএআইডির কোভিড ও এমপক্স মোকাবিলা কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘সংস্থাটি বিলুপ্ত করার চেষ্টা চলছে। তারা কোনো পরিকল্পনা বা যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিয়েই সবকিছু সরিয়ে ফেলছে। তারা এটি গোপনে করছে যাতে জনগণের সামনে কোনো ব্যাখ্যা দিতে না হয়।’
ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হলে এর মারাত্মক পরিণতি হবে বলে সতর্ক করেন কোনিন্ডিক। রোগের প্রাদুর্ভাব ও মহামারীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া থেকে প্রতিরোধ করা সংস্থাটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইউএসএআইডির বিশ্ব স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক সহকারী প্রশাসক ড. অতুল গাওয়ান্দে ব্লুস্কাইতে লিখেছেন, ‘সংস্থাটি বেআইনি শাটডাউন, তথ্য মুছে ফেলা এবং কার্যক্রম স্থগিতের শিকার হয়েছে। এটি শুধু ইউএসএআইডির জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রম বন্ধ করছে না। অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও কীভাবে বিলুপ্ত করা যায় তার পথও তৈরি করছে।’
ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইউএসএআইডির শীর্ষ নেতৃত্বকে ছুটিতে পাঠায় এবং সংস্থাটির মানবিক সহায়তা ব্যুরো থেকে ৪০০-এরও বেশি ঠিকাদার কর্মীকে বরখাস্ত করে। গ্লোবাল হেলথ ব্যুরোতেও শতাধিক কর্মী ছাঁটাই করা হয়।
কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছেন। সিনেটর চাক শুমার ব্লুস্কাইতে লিখেছেন, ‘ইউএসএআইডিকে বিলুপ্ত করা বেআইনি এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী।’
ইউএসএআইডির কাঠামোগত পরিবর্তন বা বিলুপ্তির যে কোনো প্রচেষ্টা এর আইনগত ভিত্তির সাথে সংযুক্ত। সংস্থাটি ১৯৬১ সালে কংগ্রেসের অনুমোদিত বৈদেশিক সহায়তা আইনের অধীনে প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির নির্বাহী আদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস একে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
কোনিন্ডিক বলেন, ‘এই সংস্থাকে কেবল একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিলুপ্ত করা সম্ভব নয়। একে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে নিয়ে আসতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।’ অতীতে ইউএসএআইডি সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবং সিনেটর মিচ ম্যাককনেলের মতো আইনপ্রণেতাদের দ্বিদলীয় সমর্থন পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।