বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্টে ঘুরে ঘুরে তিনি ১০০টি দেশে এঁকে দিয়েছেন পদচিহ্ন। খুলনার মেয়ে কাজী আসমা আজমেরী পর্যটক হিসেবে বিরল এ নজির গড়েছেন অবলীলায়। দেশ ভ্রমণের পিপাসা তাঁর মেটেনি, আরো ঘুরতে চান। দেখতে চান সারা বিশ্বের বৈচিত্র্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অডিটরিয়ামে বসে গতকাল বুধবার বিকেলে আসমা আজমেরী শোনালেন শতদেশ ভ্রমণের গল্প। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভ্রমণপিপাসুরা আসমার মুখে শুনেছেন নানা রকম প্রতিকূলতার কথা। জেনেছেন পর্যটন সম্ভাবনা ও দেশ ভ্রমণের নানা তথ্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী সামিও শীশসহ গবেষণা সংসদের সদস্যরা।
কাজী আসমা আজমেরী জানান, বয়স যখন খুবই কম তখন এক আত্মীয় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করায় জানতে চেয়েছিলেন ভ্রমণ বিষয়ে। তখন শুনতে হয়েছিল ‘তুমি তো মেয়ে, পারবে না।’ অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড ভ্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আসমার বিশ্বভ্রমণ। একপর্যায়ে ভিয়েতনাম যাওয়ার পর বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে প্রায় ২৬ ঘণ্টা আটকে রেখেছিল এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ। সেদিনের ভোগান্তির পর আসমা সিদ্ধান্ত নেন নারী হলেও সারা বিশ্ব একাই ঘুরবেন, আর এ ভ্রমণ হবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েই। এভাবেই ১০০ দেশ দেখা হয়ে গেছে তাঁর।
তিনি বলেন, ‘অনেকটি দেশ দেখার পরে নিউজিল্যান্ড গিয়ে ভালো লেগে যায়। তখন সেখানেই থেকে যাই। রেড ক্রিসেন্টে চাকরি হয়ে যায়। এখন বছরের পাঁচ-ছয় মাস টাকা জমাই, এরপর দেশ ভ্রমণে বের হয়ে যাই। ছয়টি মহাদেশে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে, শুধু ভিসা পাওয়ার পদ্ধতি না জানার কারণে অ্যান্টার্টিকায় যেতে পারিনি।’
তরুণ শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ভ্রমণ করতে চাও তারা মানসিক শক্তি বাড়াও। কারণ অর্থের চেয়ে এখানে মানসিক শক্তি বড় বিষয়। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। আমি দেখেছি যে দেশে মেয়েরা কোনো কাজ করে না, সেই দেশ দরিদ্র। আর যেখানে মেয়েরা কাজ করছে তারা উন্নত এবং উন্নতির পথে রয়েছে। বাংলাদেশে এখন মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে আছে বলেই দ্রুত গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’