রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

আমের মৌসুমে ঘুরে আসুন রাজশাহীর এই আমবাগানে ঘেরা রিসোর্ট থেকে

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪

রাজশাহীকে বলা হয় আমের রাজধানী। এ ছাড়াও সম্প্রতি রাজশাহীর আরেকটা পরিচয় উঠে এসেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন আর সুন্দর শহর বলা হয় একে। আমের রাজধানী রাজশাহীর নান্দনিকতা আর পরিচ্ছন্ন আবহ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ভাইরাল বলা চলে। এ ছাড়াও জনপ্রিয় নাটক-সিনেমার লোকেশন হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে রাজশাহীকে। এমন একটা শহরে আমের মৌসুমে আমবাগানে দুটি দিন কাটানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রাতের বাসে পরিবার নিয়ে রওনা হয়ে পড়লাম আমরা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন আর সুন্দর শহর বলা হয় আমের রাজধানী রাজশাহীকে
বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন আর সুন্দর শহর বলা হয় আমের রাজধানী রাজশাহীকে
সব মিলিয়ে বহু দিন পর এত সুন্দর একটা সকাল উপভোগ করলাম
সব মিলিয়ে বহু দিন পর এত সুন্দর একটা সকাল উপভোগ করলাম

বাস যখন আমাদের রাজশাহী শহরে নামিয়ে দিল, তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। যে রিসোর্টে বুকিং দিয়েছি, সেখানে ১০টার আগে রুম পাওয়া যাবে না। তাই একটা রেস্টুরেন্টে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা সেরে ব্যাগ রেখে একটা অটো নিয়ে চলে গেলাম টি-বাঁধে।পদ্মা নদীর তীরবর্তী টি–বাঁধ এমনিতেই সুন্দর। কিন্তু ভোরের আলোয় বাঁধটাকে যেন আরও বেশি সুন্দর লাগছিল। সোনালি সূর্যের নরম আলো, স্নিগ্ধ বাতাস আর পদ্মার সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে বহু দিন পর এত সুন্দর একটা সকাল উপভোগ করলাম। বাচ্চারা এদিক–ওদিক ছোটাছুটি করছিল। টি-বাঁধ থেকে বের হয়ে একটা গাছগাছালিতে ঘেরা হাঁটাপথ ধরে অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটলাম। ট্রিপের শুরুতেই দারুণ উপভোগ্য একটা সকাল কাটল আমাদের।

এরপর একটা অটো নিয়ে আমরা রওনা হলাম আমাদের রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে শীতলাইয়ে অবস্থিত রিসোর্টটার নাম বরেন্দ্র রিসোর্ট। প্রায় ১০০ বিঘা আমবাগানের মাঝখানে সুন্দর এক বাগানবাড়ি এটা।

চারপাশে যেদিকে তাকাবেন, কেবলই আমবাগান
চারপাশে যেদিকে তাকাবেন, কেবলই আমবাগান
ব্যানানা ম্যাঙ্গোরও দেখা মেলে এই বাগানে
ব্যানানা ম্যাঙ্গোরও দেখা মেলে এই বাগানে

চারপাশে যেদিকে তাকাবেন, কেবলই আমবাগান। গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ফজলি, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, কাটিমন এমনকি ব্যানানা ম্যাঙ্গোরও দেখা মেলে এই বাগানে। সামনেই একটা ঘাট বাঁধানো পুকুর।

আমগাছের ছায়ায় ঘেরা পুকুর পাড়টায় বসার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। আমবাগানের পাশেই আছে লিচুর গাছ। সব মিলিয়ে আমের মৌসুমে আম দেখতে ও খেতে এর চেয়ে সুন্দর জায়গা আসলেই হতে পারে না।

দুপুরে খেয়েদেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে আমরা একটা অটো নিয়ে রাজশাহী শহর ঘুরতে বের হলাম। পুরো শহরটা এতটাই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন যে কিছুক্ষণ ঘুরলেই আপনি এই শহরের প্রেমে পড়ে যাবেন। কী সুন্দর পিচঢালা রাস্তা ঘাট, কত সুন্দর নান্দনিক ল্যাম্পপোস্টগুলো! একেকটা ল্যাম্পপোস্ট যেন একেকটা ঝাড়বাতি। রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম লালন শাহ মুক্তমঞ্চে। পদ্মার গা ঘেষে গড়ে ওঠা এই মুক্তমঞ্চে বিকেলে বেশ ভিড় হয়। আমরা এখানে বেশ কিছু স্ট্রিট ফুড খেলাম। পাশেই নোঙর নামে একটা সুন্দর রেস্টুরেন্ট আছে। রেস্টুরেন্টের সামনের লনে বসে বেশ কিছুক্ষণ বিকালটা উপভোগ করলাম। ইউনিভার্সিটিপড়ুয়া কয়েকজন গোল হয়ে বসে গিটারে সুর তুলে গান গাইছিল। সব মিলিয়ে, চমৎকার একটা বিকেল কাটল।

কিছুক্ষণ ঘুরলেই আপনি এই শহরের প্রেমে পড়ে যাবেন
কিছুক্ষণ ঘুরলেই আপনি এই শহরের প্রেমে পড়ে যাবেন
সন্ধ্যা নামতেই ঝাড়বাতিসদৃশ ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলে উঠল
সন্ধ্যা নামতেই ঝাড়বাতিসদৃশ ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলে উঠল

সন্ধ্যা নামতেই ঝাড়বাতিসদৃশ ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলে উঠল। পুরো শহর তখন অদ্ভুত সুন্দর সোনালি আলোয় আলোকিত। রাজশাহীর এমন রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আমরা গেলাম সি অ্যান্ড বি মোড়ে। এখানে বিখ্যাত রানার ছানার মিষ্টি খেলাম গরমাগরম। এরপর মালাই চায়ের স্বাদ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি আর বাচ্চাদের সঙ্গে ছোটাছুটি করে কাটালাম।

রাতে গেলাম কালাই হাউজে রাজশাহীর বিখ্যাত কালাই রুটি খেতে
রাতে গেলাম কালাই হাউজে রাজশাহীর বিখ্যাত কালাই রুটি খেতে

রাতে গেলাম উপশহরের কালাই হাউজে রাজশাহীর বিখ্যাত কালাই রুটি খেতে। সঙ্গে ছিল বেগুন ও পেঁয়াজ-মরিচের ভর্তা, হাঁসের মাংস আর গরুর বট। চমৎকার প্রথম দিন কাটিয়ে রিসোর্টে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে সোজা ঘুম দিলাম সবাই।

পরের দিন বেশ ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে বাগান বাড়িটার চারপাশে ঘুরতে বের হলাম। সারি সারি আমগাছ। বিশাল বাগানে ঘুরে বেড়াতে দারুণ লাগছিল। রাতে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। গাছগুলোর নিচে অনেক আম পড়ে আছে। আমার বাচ্চারা আর তাদের মা ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ছানাপোনারা বেশ উৎসাহ নিয়ে আম কুড়াচ্ছে। এই অভিজ্ঞতাটা তাদের জন্য একদমই নতুন। এরপর আমরা সকালের নাশতা সেরে সেই আম খেলাম। ততক্ষণে রিসোর্টের সামনে গাড়ি হাজির। একটা গাড়ি ভাড়া করেছি আজ সারা দিনের জন্য রাজশাহীর বাকি দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখব বলে।

বিশাল বাগানে ঘুরে বেড়াতে দারুণ লাগছিল
বিশাল বাগানে ঘুরে বেড়াতে দারুণ লাগছিল
পুঠিয়া রাজবাড়ি শহর থেকে একটু দূরে
পুঠিয়া রাজবাড়ি শহর থেকে একটু দূরে
মহারানি হেমন্তকুমারী দেবীর অপরূপ কারুকার্যময় বাসভবন
মহারানি হেমন্তকুমারী দেবীর অপরূপ কারুকার্যময় বাসভবন

আমাদের গাড়ি ছুটছে পুঠিয়া রাজবাড়ির উদ্দেশে। এটা শহর থেকে একটু দূরে। রাজবাড়িতে পৌঁছাতে আমাদের ঘণ্টাখানেক সময় লাগল। এখানে মহারানি হেমন্তকুমারী দেবীর অপরূপ কারুকার্যময় বাসভবন আর সংলগ্ন মন্দিরগুলো ঘুরে দেখলাম। এরপর আমরা গেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানকার প্যারিস রোডটা চমৎকার। ঘুরতে ঘুরতেই দুপুর হয়ে গেল। আমরা দুপুরের খাবার খেতে গেলাম কাটাখালীতে অবস্থিত একতা হোটেলে। তাদের গরুর কালাভুনাটা বেশ বিখ্যাত। দুপুরে খেয়েদেয়ে কিছুক্ষণ জিরিয়ে আমরা একে একে রাজশাহী কলেজ, বরেন্দ্র জাদুঘর ঘুরে দেখে বিকালটা কাটালাম নবগঙ্গা বাঁধে।

পদ্মার তীরে ট্রিপের শেষ বিকালটা দারুণ কাটল।
পদ্মার তীরে ট্রিপের শেষ বিকালটা দারুণ কাটল।

টি–বাঁধের মতো এখানকার দৃশ্যও খুব সুন্দর। পদ্মার তীরে ট্রিপের শেষ বিকালটা তাই দারুণ কাটল। সব মিলিয়ে, আমের রাজ্যে আমের সমারোহে মনে রাখার মতো দুইটা দিন কাটিয়ে আমরা ঢাকায় ফেরার বাসে উঠে পড়লাম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com