সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সরকার ঘোষিত ২ মাসের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু এতে ‘আশানুরূপ সাড়া দেননি’ বাংলাদেশিরা।
গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিনা জেল জরিমানায় দেশত্যাগ কিংবা আমিরাতে তাদের অবস্থান বৈধকরণের জন্য এ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়।
এ ঘোষণায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি তাদের অবস্থান বৈধ করেছেন বলে জানান আবুধাবি দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর হাজরা সাব্বির হোসেন। তবে যারা দূতাবাস, কনস্যুলেট, ইমিগ্রেশন সেন্টার, তাসহিল বা আমের সেন্টারে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে এসেছেন, তাদের ৯৫ শতাংশই বৈধ হতে আগ্রহ দেখিয়েছেন, বাকি ৫ শতাংশ দেশে ফিরতে চান।
হাজরা সাব্বির হোসেন বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ১০-১১ লাখ। এর মধ্যে বৈধ অভিবাসী যদি ধরা হয় ৮ লাখ, তাহলে বাকি আড়াই থেকে ৩ লাখ অভিবাসীর হিসাব গেল কোথায়? এর একটি বড় অংশ এদেশে অবৈধই রয়ে গেছেন।”
অথচ সরকার ও দূতাবাস ‘সক্রিয়’ ছিল বলে দাবি করেন আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাসপোর্ট ও ভিসা কাউন্সেলর সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে ইচ্ছুকদের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৮৩৩টি। সেপ্টেম্বরে এক বছর মেয়াদের জন্য নবায়নকৃত পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে ৮১৭টি।”
সাইফুল বলেন, “সাধারণ ক্ষমার মেয়াদের সময়সীমার প্রতি দৃষ্টি রেখে সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট প্রেরণের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দুবাই কনস্যুলেট অফিস ও উত্তর আমিরাত থেকে দেশে যেতে ইচ্ছুক প্রবাসীদের জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করা হয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি, অন্যদিকে আবুধাবি দূতাবাসের ইস্যুকৃত ট্রাভেল পারমিটের সংখ্যা ছিল মাত্র দেড়শ।”
করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে আমিরাতে ভিজিট ভিসায় আসা বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ অবৈধ রয়ে গেছেন। ২০১২ সালের মধ্য অগাস্ট থেকে আমিরাতে চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত বাংলাদেশির অনুপ্রবেশ, ভিসা জালিয়াতিসহ নানা অপরাধ প্রবণতায় বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশের জন্য সাধারণ কর্মী ভিসা বন্ধ করে দেয় আমিরাত সরকার।
আরবদের গৃহকর্মী, ব্যক্তিগত গাড়িচালক, ফ্রি জোনসহ সীমিত কিছু ক্যাটাগরিতে ভিসা খোলা রাখা হলেও তার সুফল বাংলাদেশিরা তেমন একটা পাননি। পরে ইনভেস্টর ভিসায় অনেকে এসেও পড়েন বিপাকে। মহামারী পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশিদের জন্য ভিজিট ভিসা খুলে দেওয়া হলে আদম ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পড়ে কিংবা ভাগ্য বদলের আশায় আড়াই থেকে তিন লাখ বাংলাদেশি আমিরাতে প্রবেশ করেন।
এসময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী ওয়ার্ক ভিসা দিয়ে বৈধতা পেলেও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে কিংবা ভিজিট ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়াসহ নানা কারণে বৈধ হতে পারেননি।
সাধারণ ক্ষমার সুযোগ সবাই নিলেন না কেন?
আমিরাত সরকারের ধারণা, অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই বেশি। কেবল আবুধাবিতেই বিভিন্ন শিল্প এলাকা ও কৃষি খামারে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ অবস্থায় আছেন।
অনেকের ধারণা, ভিজিট ভিসায় আমিরাতে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া প্রান্তিক প্রবাসীদের সবার পক্ষে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করে নতুন ভিসা লাগানো সম্ভব না হওয়া এর অন্যতম কারণ। তবে সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হলে দেশজুড়ে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ হাতে নেওয়া হতে পারে। এতে ধরপাকড় শুরু হলে আটককৃতদের ওপর কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছে দূতাবাস ও সরকারি সূত্রগুলো।
কেমন হবে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের ধরণ?
সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষে পহেলা নভেম্বর থেকে আবাসিক এলাকা, বিপণি বিতান, কোম্পানির আবাসন ও শিল্প এলাকাগুলোয় জোরদার তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হতে পারে। এতে ধৃতদের আগের সব জরিমানা ও কারাদণ্ডসহ হতে পারে আমিরাতে পুনরায় প্রবেশে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সাজা। অবৈধ অভিবাসীদেরকে যেসব কোম্পানি কাজ দেবে তাদেরকেও গুনতে হবে মোটা অংকের অর্থদণ্ড।
সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ কি বাড়ানো হতে পারে?
যদিও কর্তৃপক্ষ বারবার সতর্ক করে দিচ্ছে যে, এই সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। তবে শেষ মুহূর্তে তা বাড়ানো হলে আরো কিছুসংখ্যক অবৈধ অভিবাসী দেশে প্রত্যাবর্তন কিংবা আমিরাতে তাদের অবস্থান বৈধকরণের সুযোগ পাবেন বলে অভিবাসী বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এর আগে ২০১৮ সালের অগাস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সর্বশেষ সাধারণ ক্ষমা বলবৎ ছিল। এসময় প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশি সেই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেন। তারও আগে ২০০৭ ও ২০১৩ সালে আরো দুটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হয়েছিল।