সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ অপরাহ্ন

আবাসনে সংকটে আয়ারল্যান্ড, ক্ষোভ বাড়ছে অভিবাসীদের প্রতি

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩

এ বছরের শুরু থেকে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন এবং এমারল্ড আইলের ছোট শহরগুলোতে অভিবাসী বিরোধী ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে আইরিশ সরকার জানিয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রগুলো কানায় কানায় পূর্ণ। ফলে তৈরি হয়েছে গুরুতর আবাসন সংকট। নতুন করে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জায়গা দেয়া অসমম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ‘আইরিশ লাইফ ম্যাটার’ এবং ‘আয়ারল্যান্ড ইজ ফুল’-এর মতো হ্যাশট্যাগগুলো ভাইরাল হয়েছে।

২০২৩ সালের শুরু থেকে আয়ারল্যান্ডের অন্যান্য শহরের মতো রাজধানী ডাবলিনেও শরণার্থীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব বেড়ে চলেছে।

সবশেষ ২৪ মার্চ কলম্ব ব্যারাক নামক একটি অভিবাসী অভ্যর্থনা কেন্দ্রের প্রবেশপথে একটি অভিবাসীবাহী একটি বাসকে আটকে দেয় স্থানীয়রা। মূলত এই অভ্যর্থনা কেন্দ্রটি ছিল পরিত্যক্ত সেনা ব্যারাক। ২০১২ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এটি। ডাবলিন থেকে কেন্দ্রটি ৮০ কিলোমিটার দূরের শহর মুলিঙ্গায় অবস্থিত।

আইরিশ ইন্টিগ্রেশন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছিল, এই কেন্দ্রে ১২০জন আশ্রয়প্রার্থীকে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

ওইদিন আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে আসা বাস আটকে দিয়ে সেখানে সমাবেশে করেন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। এ সময় তারা, ‘আমাদের শহর থেকে বের হও’, ‘তোমরা এখানে ঢুকবে না’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।

তবে ক্ষোভকে আরো নাড়িয়ে দিয়েছে টুইটারে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতিতে দেখা যায়, বাসে আটকে থাকা একজন আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হুমকি দিচ্ছেন।

বিক্ষোভের কয়েক ঘণ্টা পর আশ্রয়প্রার্থীদের বহনকারী বাসটি ভেতেরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। একইদিন সন্ধ্যায়, কলম্ব ব্যারাকে আসা খাবার সরবরাহকারী ট্রাকগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

আয়ারল্যান্ডে বিক্ষোভের এই দৃশ্যটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই ঘটনার ঠিক দুই দিন পরে, অভিবাসন বিরোধী একদল কর্মী বিভিন্ন ব্যানার ও প্লাকার্ড নিয়ে ডাবলিন বিমানবন্দরের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়।

আন্তজার্তিক ফরাসি গণমাধ্যম কুরিয়ার ইন্টারন্যাশনালের মতে, আয়ারল্যান্ডে এই ধরনের বিক্ষোভের ঘটনা বাড়ছে। ২০২৩ সালের শুরু থেকে ইতিমধ্যেই ৬০টিরও বেশি অভিবাসী বিরোধী সমাবেশ হয়েছে৷

তবে পুরো বিষয়টিকে আরও উসকে দিতে কট্টরপন্থিরা গুজব ছড়াচ্ছে। অভিবাসীরা সহিংসতা এবং যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধ করেছে বলে আইরিশ জনগণের কাছে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

৭ ফেব্রুয়ারি, ডাবলিনে আয়োজিত একটি বিক্ষোভে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ অভিবাসন বিরোধী নানা স্লোগানে রাস্তায় নেমেছিল।

আশ্রয় আবেদন এবং আবাসন সংকট বাড়ছে

আয়ারল্যান্ডের আশ্রয় কাঠামো বেশ কয়েক বছর ধরে আবাসন সমস্যায় জর্জরিত। তারপরেও ২০২২ সালে ইউক্রেনীয়দের জন্য দরজা খুলে দিয়েছিল দেশটির সরকার।

প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি ইউক্রেনীয় আইরিশ ভূখণ্ডে আশ্রয় পেয়েছিল। মাত্র ৫০ লাখ বাসিন্দার একটি দেশের জন্য এটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা।

অনেক আইরিশ পরিবার ইউক্রেনীয়দের সাহায্য করার জন্য বাসার গেস্ট রুম বা এমনকি পুরো বাড়িও খুলে দিয়েছিল।

গত বছর দেশটি ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীর পাশাপাশি মোট ১৩ হাজারেরও বেশি আশ্রয়ের আবেদন পেয়েছিল। যেটি ২০২১ সালে ছিল মাত্র দুই হাজার ১০০টি।

ডাবলিনসহ বিভিন্ন শহরে ক্রমশ বাড়ছে বাসা ভাড়া। একইসঙ্গে অভিবাসীদের আগমন বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা আর সহজভাবে বিষয়গুলো গ্রহণ করছেন না।

গত গ্রীষ্মে আইরিশ সংসদ সদস্যরা উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের এই আবাসন সংকটের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন।

এ বছরের জানুয়ারিতে আইরিশ সরকার ঘোষণা দেয়, দেশের অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলো পরিপূর্ন হয়ে গেছে। নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের বিভিন্ন বাড়িতে অথবা রাস্তায় তাঁবুতে রাখা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

‘তীব্র শীতে মৃত্যুর ভয়ে আছি’

চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি আয়ারল্যান্ডে এসেছিলেন একজন আফগান আশ্রয়প্রার্থী। আশ্রয় আবেদনের পর তাকে দেশটির অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল প্রোটেকশন (আইপিও) থেকে জানানো হয়েছিল আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো জায়গা খালি নেই।

তিনি বলেন, “আমার যাওয়ার কোথাও নেই, আমি ক্লান্ত এবং তীব্র শীতে মৃত্যুর ভয়ে আছি।”

সিটিওয়েস্ট ট্রানজিট হাব আয়ারল্যান্ডের অন্যতম প্রধান আশ্রয় অভ্যর্থনা এলাকা। ২০২৩ সাল থেকে নতুনদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে সেই দরজা।

একটি সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, “জাতীয় পর্যায়ে আবাসন সংকটের কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পুরুষদের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো আবাসন দেওয়া সম্ভব নয়। কারন ট্রানজিট সেন্টার এখন তার সর্বোচ্চ সক্ষমতায় পৌঁছেছে।”

সিটিওয়েস্ট ট্রানজিট হাবের আওতায় আশ্রয় ও অভ্যর্থনা কেন্দ্রে ৫২ হাজার ৮০০ জন ইউক্রেনীয় এবং অন্যান্য জাতীয়তার ১৯ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে স্থান দেয়া হয়েছে। এই বিশাল কেন্দ্রটি সম্প্রসারণ করে আরও ২০০টি আবাসন ব্যবস্থা নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ বসন্তের শেষ দিকে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রাথমিকভাবে গত নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, আবাসন সংকট ও অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে আইরিশ রিফিউজি কাউন্সিল। সংস্থাটি জানায়, “এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং নজিরবিহীন পরিস্থিতি। এটি সম্ভবত একটি মানবিক সংকটের দিকে নিয়ে যাবে।”

এনজিওটি তাদের এই বক্তব্য সম্প্রতি ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর এক্সাইলস (সিইআরই)-এর কাছেও পাঠিয়েছে।

কট্টর ডানদের ভূমিকা

আয়ারল্যান্ড বর্ণবাদ সমস্যায় নিমজ্জিত কোনো দেশ নয়। আইরিশ সাংবাদিক নাওমি ও’লিয়ারি আইরিশ টাইমসের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘অভিবাসী বিরোধী সমাবেশগুলো মূলত জরুরি পরিস্থিতি এবং সংকটের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, “এসব সংকটে ছোটো ছোটো কয়েকটি অতি ডানপন্থি দল ঘটনাকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা সংখ্যায় একেবারে কম। এমন সময়ে তারা চায় তাদের বক্তব্য গুরুত্ব পাক। আপনি দেখবেন ইউরোপে অভিবাসন ঘিরে বড় উত্তেজনার সময়েও বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর পক্ষে ছিল।”

ইউএনএইচসিআরের আইরিশ শাখার প্রধান এন্ডা ও’নিল বলেন, দ্বীপ রাষ্ট্রটির অভ্যর্থনা নীতি বাস্তবায়নের ক্ষমতা রয়েছে। আমি মনে করি গত কয়েক মাসের মিডিয়া কভারেজের ফলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি সাধারণ জনগণের কাছে ধারণা দেয়, আমরা এমন কিছু অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি যা অন্য দেশগুলোতে নেই।”

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com