বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর যত সম্পদ

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

গাড়ি, বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট-কী নেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার। রীতিমতো গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। শুধু নিজের নামেই নয়; স্ত্রীর নামেও গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি।

তার বিপুল সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যুগান্তরের অনুসন্ধানেও এসব সম্পদের সত্যতা মিলেছে।

শুক্রবার বেলা আড়াইটায় ইস্কাটন গার্ডেন ১৩/এ প্রিয়নীড়ে গিয়ে জানা যায়, সেখানে আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী আব্দুস সালাম ও শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, আমরা এখানে নতুন এসেছি, তাই তেমন কিছু জানি না। ভবনের ম্যানেজার আজাদ আহমেদ জানান, ১৪ তলা এই ভবনে ৪০টি ফ্ল্যাট আছে। বেশিরভাগ ফ্ল্যাটই ২১৩৩ বর্গফুটের। ভবনের ১১ তলায় আছাদুজ্জমানের স্ত্রী আফরোজা জামানের একটি ফ্ল্যাট আছে। তবে সেখানে তিনি থাকেন না। ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়া আছে। অভ্যর্থনাকারী আবু বকর প্রতি মাসে ভাড়া তুলে আছাদুজ্জামানের কাছে দিয়ে আসেন। ভাড়া বকেয়া পড়লে বা কোনো সমস্যা হলে আমি নিজে স্যারের সঙ্গে (আছাদুজ্জমান) যোগাযোগ করি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের ১ নম্বর রোডের ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠার ওপর ৬ তলাবিশিষ্ট আলিশান একটি বাড়ি আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে। ওই বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে রিভেরিফ নামের একটি স্কুল। শুক্রবার বিকালে সেখানে গেলে স্কুলটি বন্ধ পাওয়া যায়। বাইরে থেকে নক করার পর বেরিয়ে আসেন এক ব্যক্তি।

তিনি যুগান্তরকে জানান, তার নাম রমজান আলী। তিনি এখানকার সিকিউরিটি ইনচার্জ। বাড়িটির বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে না পারলেও বলেন, শুনেছি এই বাড়িটি ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জমান মিয়ার স্ত্রীর নামে। তিনি বলেন, আমি আগে ধানমন্ডি ১২ নম্বরে লেকহেড গ্রামার স্কুলের কেয়ারটেকার ছিলাম। ওই রোডে আছাদুজ্জামান মিয়া থাকতেন। প্রায়ই লেকহেড গ্রামার স্কুলে এসে তিনি (আছাদুজ্জামান) ঝামেলা করতেন। পরে সেটি (স্কুল) বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমি এখানে এসে চাকরি নিই। স্থানীয় মোহাম্মদ আলী জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এই বাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি নম্বর রোডে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। ওই জমিতে গাড়ি রাখার শেড বানিয়ে রাখা হয়েছে। পূর্বাচলের এই প্লটের প্রতি কাঠা জমির মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। পূর্বাচলের সেক্টর ৪, রোড ১০৮-এ ৫৩ নম্বর প্লটটি আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে ছিল। ৫ কাঠার এই প্লটটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আফতাবনগরে ৩ নম্বর সেক্টরে রয়েছে ২১ কাঠা জমি। সেখানে নিজের নামে ১০ কাঠা ও আত্মীয়স্বজনদের নামে রয়েছে বাকি ১১ কাঠা জমি।

সূত্র জানায়, আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকা ছাড়াও ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে বিপুল সম্পদ রয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি রাজউক থেকে বিশেষ কোটায় একটি প্লট বরাদ্দ পান। অথচ রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই।

জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখোলা মৌজায় আফরোজা জামানের নামে ৬৭ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০১৭ সালে এই জমি কেনা হয়। ওই মৌজায় তার নামে ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেনা হয় আরও ৩৯ শতাংশ জমি। একই নামে ২০২০ সালে জোয়ার সাহারা মৌজায় কেনা হয় ১৫ কাঠা জমি। ওই বছর গাজীপুরের চাঁদখোলা মৌজায় ৩১ শতক জমি ক্রয় করেন আফরোজা। আফরোজা ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ২৮ একর জমি কেনেন। ওই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনেন তিনি। ওই বছরই রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ৬০ একর জমি তার নামে কেনা হয়। পরে তা বিক্রি করে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ৫৭ একর জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পান আছাদুজ্জামানের স্ত্রী। এরপর ওই জমি বিক্রিও করেন।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে আছাদুজ্জামান মিয়ার পরিবারের সদস্যদের মালিকানার দুটি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি হলো মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড। এর চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা। আছাদুজ্জামান ডিএমপি কমিশনার থাকাকালীন রাজধানীর রুট পারমিট কমিটির প্রধান ছিলেন। ওই সময় মৌমিতা পরিবহণকে রুট পারমিট দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com