১৩৫ বছর। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালের পয়লা জুলাই এবং ২১ মাস ধরে কাজ করার পর এর কাজ শেষ হয় ১৮৮৯ সালের ৩১ শে মার্চ। এই লৌহ মানবী নির্মাণে ৫০ জন ইঞ্জিনিয়ার এবং ৩০০ জন্ শ্রমিক কাজ করেছে। প্রথমে কিন্তু এটা ভেঙে ফেলার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। ভাগ্য ভালো যে তা আর হয়নি। এটি আজ ফ্রান্সের প্রতীকগুলির একটি।
আইফেল টাওয়ার নিয়ে কিছু মজাদার তথ্য :
১. ১৮৮৯ সালে, আইফেল টাওয়ারের প্রথম অফিসিয়াল দর্শকরা হলেন ইংল্যান্ডের রাজকীয় পরিবার এবং বাফেলো বিল । ১৮৮৯ সালেই যারা আইফেল টাওয়ার ঘুরে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ইরানের শাহ নাসের আলাদিন শাহ কাজার অন্যতম। তারা সবাই গুস্তাভ আইফেলের গেস্ট বুকে স্বাক্ষর করেছে।
২. আইফেল টাওয়ার নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই, টাওয়ারটি ছিল সমালোচকদের লক্ষ্যের বস্তু। সুশীল সমাজের টার্গেটে পরিণত হয় আইফেল টাওয়ার।
৩. ৩২৪ মিটার উঁচু আইফেল টাওয়ার এখনও পর্যন্ত ফ্রান্সের সব চেয়ে উঁচু স্থাপনা। ফ্রান্স ইচ্ছা করলেই ১০০ তালা বিল্ডিং বানাতে পারে। কিন্তু করছে না যাতে আইফেল টাওয়ারের উঁচু কিছু না হয়।
৪. ১৯৯৯ সালে ঝড় যা কিনা বিংশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে আঘাত হানা সব চেয়ে আক্রমণাত্মক ঝড়ে আইফেল টাওয়ারের সব চেয়ে উঁচু স্থান ২০ সেন্টিমিটার সরে গিয়েছিল।
৫. ২০১২ সালে ইতালিয়ান চেম্বার অফ কমার্স মোনজা আইফেল টাওয়ারের দাম নির্ধারণ করে এবং এর মূল্য ধরা হয় ৪৩৪ বিলিয়ন ইউরো।
৬. এই লৌহ মানবীর বর্তমান রং বাদামি বা মেরুন। কিন্তু শুরুতে এর রং ছিল লাল, পরে করা হয় হলুদ এবং তারপর করা হয় নীল।
৭. এই লৌহ মানবীর লোহার অংশের ওজন ৭৩০০ টন এবং সর্বসাকুল্যে এর ওজন ১০০০০ টন।
৮. শীতকালে, আইফেল টাওয়ার ৪ থেকে ৮ সেন্টিমিটার হ্রাস পায়। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, এটি তার মূল আকার পুনরায় ফিরে পায়। তাপমাত্রায় মেটালের সম্প্রসারনের ফলে এই তারতম্য হয়ে থাকে। ১৯৭৬ প্রচন্ড গরমে এর সম্প্রসারণ ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়েছিল।
৯. বছরে গড়ে প্রায় ৭০ লক্ষাধিক পর্যটক আইফেল টাওয়ার দেখতে আসে। পৃথিবীতে অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র হলো আইফেল টাওয়ার। ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ারের পর যে সমস্ত পর্যন্তন কেন্দ্র আছে তা হলো ডিজনি ল্যান্ড, প্যারিসের নোটরডাম এবং ল্যুভরে মিউজিয়াম।
১০. আইফেল টাওয়ারে অবস্থিত রেস্টুরেন্টে আপনি বিবাহত্তর উৎসব করতে চান ? তাও সম্ভব প্রতিদিন গড়ে ২টি বিবাহত্তর উৎসব এখানে হয়।
১১. সম্পূর্ণ আইফেল টাওয়ার আলোকসজ্জা করতে ২০০০০ বাল্ব দরকার পড়েছে। যদিও সব গুলি বাল্ব একই সময় জ্বালানো হয় না।
১২. পৃথিবীতে আইফেল টাওয়ারের অনুকরণে কটি টাওয়ার আছে তা এখনো অনিশ্চিত তবে ৩০টির মতো হবে। তবে লাস ভেগাস, চীন এবং কানাডাতে যে আইফেল টাওয়ারের প্রতিলিপি আছে তা প্রায় নিশ্চিত। অর্থাৎ পুরো পৃথিবী জুড়েই আইফেল টাওয়ার আছে।
১৩. খুব সাহসীরা পায়ে হেঁটেই এই লৌহ মানবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় যেতে পারেন। এরজন্য আপনাকে টাওয়ারের পূর্বদিকের সিঁড়ি নিতে হবে। তবে সাবধান আপনাকে ১৬৬৫ টি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হবে।
১৪. আইফেল টাওয়ারের প্রধান আর্কিটেক্ট গুস্তাভ আইফেল যে আপ্পার্টমেন্টে থাকতেন তার পুরোটাই টাওয়ারের সর্বোচ্চ চুড়ায় স্থাপন করা হয়েছে। ওখানে তার একটি স্ট্যাচু বসানো হয়েছে যাতে দেখা যায় তিনি থমাস এডিসনের সাথে মিটিং করছেন। ফ্রান্সের অত্যাধুনিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার এন্টেনা টিও আইফেল টাওয়ারে অবস্থিত।
১৫. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার বাহিনী আইফেল টাওয়ার ধ্বংস করে দিতে পারে এই নিয়ে ফরাসীরা খুবই আতঙ্কে ছিল। আর তাই হিটলার যখন প্যারিসে আসে তখন আইফেল টায়ারের সব ইলেকট্রিক তার কেটে দিয়েছিল যাতে সে উপরে উঠতে না পারে। ফরাসিদের আরো আশংকা ছিল, জার্মান বাহিনী যদি উপরে উঠতে পারে, তাহলে পুরা প্যারিস তারা নজর রাখতে পারবে।
১৬. আইফেল টাওয়ারে তাদের নিজেদের পোস্ট অফিস আছে। এখন থেকে পর্যটকরা সরাসরি তাদের চিঠি পোস্ট করতে পারে।
Like this:
Like Loading...