শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তায় গড়াগড়ি করছিলেন ৩ প্রবাসী

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

মালয়েশিয়ায় একটি রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ৩ বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ মালয়েশিয়ায় অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর নিহতরা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স যথাসময়ে না আসায় তারা রাস্তার মধ্যে শুয়ে গড়াগড়ি করছিলেন। তাদের যথাসময়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে তারা মারা যেতেন না।

নিহত আবু তাহেরের ছোট ভাই তপন মিয়া বলেন, আমার ভাইসহ যারা মালয়েশিয়ায় মারা গেলো তারা তো সেই দেশে বৈধ লোক ছিল, অবৈধ ছিল না। কিন্তু যখন মালয়েশিয়ার জোহরবার্গে  কারখানায় আগুন লাগছে আগুনে আমার ভাইসহ নিহতরা দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কিন্তু কোনো অ্যাম্বুলেন্স আসে নাই। অ্যাম্বুলেন্স না আসায় তারা রোদে রাস্তার মধ্য শুয়ে গড়াগড়ি করছিল। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কেউ কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। যদি তারা খোঁজখবর নিতো তাহলে তিনটা লোকই বেঁচে যেতো।

নিহত আলি জব্বারের ছোট বোন নাজিফা বলেন, আমার ভাই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। আমার ভাইয়ের চিকিৎসা হলো না কেন? আমার ভাই আগুনে পুরে রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়েছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখেছে। অ্যাম্বুলেন্স অ্যাম্বুলেন্স কইছে কিন্তু কোনো অ্যাম্বুলেন্স আসে নাই। যদি এর বিচার না হয় আমি মরে গিয়া সরকারের বিরুদ্ধে লেইখা দিয়া যামু।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাবা মাসহ তিন ভাই পাঁচ বোনের সংসার তিনিই দেখাশোনা করতেন। এখন জানি না কীভাবে সংসার চলবে। প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করলে আমার ভাইয়ের লাশ দেশে নিয়ে আসতে পারতাম।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, তিনজন মালয়েশিয়ায় এভাবে মারা গেলেন অথচ সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যও তাদের বাড়িতে সরকারের কেউ যাননি।

একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, রাস্তার মধ্যে শরীর পোড়া অবস্থায় শুয়ে আছেন দুজন, অপরজন দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের শরীরের চামড়া পুড়ে খসে রয়েছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) এএসএম জাহিদুর রহমান বলেন, মরদেহগুলো বর্তমানে হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত মরদেহগুলো দেশে প্রেরণের আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিফা খান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। তাদের লাশ আনতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পরিবারগুলোর পাশে থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন, মরদেহগুলো দ্রুত কীভাবে দেশে আনা যায় সে বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। সেইসঙ্গে নিহতের পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা করা যায় সবটুকু করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মালয়েশিয়ার জোহরবার্গ রাজ্যের ইস্কান্দার পুতেরের গেলাং পাতার এসআইএলসি শিল্প এলাকায় একাধিক রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে কারখানার ভেতরে থাকা তিন বাংলাদেশি শ্রমিকের শরীরে ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়। এদের মধ্যে ১১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যায় জব্বার আলী, ১২ অক্টোবর ভোররাত ৩টার দিকে মারা যান আবু তাহের, ১৩ অক্টোবর বিকাল ৫টায় মারা যান সালাম। তারা ৩ জন ৮ বছর আগে বৈধভাবে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। নিহত ৩ জনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রমজানবেগ গ্রামে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com