বর্তমান বিশ্বে উচ্চশিক্ষায় যেসব দেশ শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের, তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০-এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ছয়-সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদা যত্ন নেওয়া হয়। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, খণ্ডকালীন কাজ এবং সহজেই ভিসা পাওয়ার সুযোগ। নানা সুবিধার কারণে দেশটিতে বৃত্তি নিয়ে অনেকেই উচ্চশিক্ষায় পড়তে যেতে চান। অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে জানিয়েছেন শাকিল শাহরিয়ার খান।
বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার ছেলে শাকিল শাহরিয়ার খান। স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করছেন অস্ট্রেলিয়ার উলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই শাকিলের ইচ্ছে ছিল দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের। সে জন্য তুলনামূলক সহজ ও ভিসার জটিলতা কম থাকায় পছন্দের তালিকা থেকে অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ার উলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৬.৫ আইইএলটিএস স্কোরের ওপর চায়। আইইএলটিএসের প্রত্যেকটা মডিউলে ৬-এর ওপরে থাকতে হবে। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ৫.৫ স্কোর দিয়েও ভর্তি নেয়।
ভাষা দক্ষতা
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ভাষা ইংরেজি। তাই পড়াশোনার জন্যও ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থীদের বাড়তি কোনো ভাষা আত্মস্থ করতে হয় না। তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রচলিত ইংরেজি ব্রিটিশদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। তাই শুরুতে ভাষাগত দক্ষতা অর্জনে কিছুটা সময় লাগতে পারে সঠিকভাবে বোঝার জন্য।
খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ
অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি বা খণ্ডকালীন কাজের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। প্রতি ২ সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। নভেম্বর তথা গ্রীষ্মকালে শিক্ষার্থীদের পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ঘণ্টায় পে-রেট বা বেতনের হার তুলনামূলক বেশি।
আবেদন প্রক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও কম সময়সাপেক্ষ। প্রথম সারির কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বাদে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য একটা অনুমোদিত এজেন্সি লাগে। বাংলাদেশেও বেশ কিছু এজেন্সি আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই সেই সব এজেন্সিকে অনুমোদন দেয়।
আবেদনের জন্য এইচএসসি সনদ, আইইএলটিএস/পিটিই এবং আরও কিছু কাগজ লাগে। শিক্ষার্থী ভিসা পেতে অবশ্যই যথাযথ আয় বা উপার্জনের উৎস দেখাতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় অন্য দেশের মতো বেশি স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে শুধু হাতে গোনা কিছু শিক্ষার্থীকে ফুল ফান্ড বা সম্পূর্ণ বৃত্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ ছাড়া আইইএলটিএস, এইচএসসি ও স্নাতক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অভিজ্ঞতা থাকলে শতকরা ৩০-৪০ শতাংশ বৃত্তি পাওয়া যায়।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের দেওয়া ‘অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস’ শিক্ষাবৃত্তির জন্য এশিয়া, এশিয়া প্যাসিফিক, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। মূলত উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে এই শিক্ষাবৃত্তি। তা ছাড়া ভালো অ্যাকাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে গ্লোবাল এক্সিলেন্স বৃত্তিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বৃত্তির সুযোগ রয়েছে।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
অস্ট্রেলিয়ায় অন্য দেশের মতো বেশি পরিমাণ বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ নেই। আবার টিউশন ফি নিজ থেকে দিতে গেলে এ দেশে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তাই অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে মানসিকভাবে সেই প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। রান্না, ড্রাইভিংয়ের কাজ শিখে আসা ভালো। এ ছাড়া আইটি স্কিল, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারলে সহায়ক হয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য।