মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা দালাল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মাসের পর মাস যাচ্ছে, কিন্তু মিলছে না পাসপোর্ট। ভুক্তভোগী প্রবাসীরা কাজ বাদ দিয়ে দিনের পর দিন ধরনা দিচ্ছেন হাইকমিশনে। উপরন্তু ঘুষবাণিজ্য করতে দালাল চক্র ও হাইকমিশনের অসাধু কর্মকর্তারা ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের বদলে পুরোনো এমআরপি (পাঁচ বছর) করতে বেশি উৎসাহ দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন বলেছে, এ ব্যাপারে কারো বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান। এই রেমিট্যান্স সচল রাখছে দেশের অর্থনীতির চাকা। অথচ হাইকমিশনের পাসপোর্ট বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত হয়ে আসছেন তারা। এমতাবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার উদ্যোগে দালালমুক্ত পরিবেশে পাসপোর্ট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আউটসোর্সিং কোম্পানি ইএসকেএলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইএসকেএলের দায়িত্ব হলো-অ্যাপয়েনমেন্ট, অ্যাপ্লিকেশন, ব্যাংকিং ও বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট সেবা প্রদান করা। এর পরের ধাপগুলোর দায়িত্ব হাইকমিশন, মালয়েশিয়া পাসপোর্ট বিভাগের। ইতিমধ্যে ইএসকেএল তাদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার জন্য সেবা গ্রহণকারীদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সম্পূর্ণ দালালমুক্ত পরিবেশে মাত্র ৩২ রিঙ্গিতের বিনিময়ে প্রবাসীদের ই-পাসপোর্ট সেবা প্রদান করে থাকে ইএসকেএল। অথচ এখনো পাসপোর্ট করে দেওয়ার কথা বলে দালালেরা প্রবাসীদের কাছ থেকে ৩০০-৫০০ রিংগিত হাতিয়ে নিচ্ছে নানান অজুহাতে।
২০১৪ সালে পাসপোর্ট অধিদপ্তর মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এমআরপি প্রদানের বিষয়ের প্রতিটি এমআরপি ইস্যুর জন্য ঠিকাদারকে সার্ভিস চার্জ ৭৮ দশমিক ৪৮ রিংগিত নির্ধারণ করেছিল। ভিএফএস কোম্পানিগুলো এখনো বিভিন্ন দেশে চড়া মূল্যে এই ধরনের সেবা দিয়ে থাকে।
সেই তুলনায় ইএসকেএল নামমাত্র মূল্যে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এছাড়াও ইএসকেএল ট্রাভেল পাশ, এনআইডি ও বিদেশিদের ভিসা প্রদান সংক্রান্ত কাজগুলো দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু হাইকমিশনের পাসপোর্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা পাসপোর্ট অ্যাপ্রুভাল, রিওয়ার্ক ও ডেলিভারির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক জটিলতা, সময়মতো কাজগুলো না করার জন্য প্রবাসীরা প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় নানা ধরনের ভিসাগত সমস্যাও ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। খায়রুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী ইত্তেফাককে জানান, পাঁচ মাস হলো ই-পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো খবর নেই। আমি চার বার অফিসে গেছি, অনেক টাকাও খরচ করছি কিন্তু পাসপোর্ট হাতে পাইনি। আরেক ভুক্তভোগী আবজাল হোসেন জানান, তিনি গত ৫ মে বায়োম্যাট্রিক করেও ই-পাসপোর্ট হাতে পাননি। এমন অভিযোগ শুধু খায়রুলের না, মালয়েশিয়ায় কর্মরত হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশির। চঞ্চল হোসেন নামের আরেক প্রবাসী জানান, পাঁচ মাস আগে আবেদন করলেও তার ই-পাসপোর্ট আজও অনলাইন সিস্টেমে ‘অন দ্য ওয়ে’ দেখাচ্ছে।