হরমন্দির সাহিব বা দরবার সাহিব কিংবা স্বর্ণ মন্দির, শিখদের সবচেয়ে পবিত্র তীর্থস্থান। এই মন্দিরটি চতুর্থ শিখ গুরু রাম দাস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। এর অবস্থান পাঞ্জাবের অমৃতসরে এবং বিশ্বের যত শিখ ধর্মালম্বী আছে তাদের সিংহভাগই এই শহরের। শিখদের চতুর্থ ধর্মগুরু ‘গুরু রাম দাস’ ১৫৭৭ এর সময় এর প্রতিষ্টা করেন এবং পঞ্চম ধর্মগুরু অর্জন দেব জি এর নকশা করেন। মন্দিরের ভেতরে ‘আদিগ্রন্থ’ স্থাপন করা হয়, যা শিখদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ। এই মন্দির শুধু শিখদের জন্য নয়, বরং সব ধর্ম, জাতি, শ্রেণী, পেশার মানুষদের জন্য উন্মুক্ত এবং ৪ টি দরজা তারই বহিঃপ্রকাশ। প্রত্যেকদিন প্রায় ৩৫,০০০ লোক এখানে আসেন এবং বিনামূল্য খাওয়া-দাওয়া এবং রান্নার কাজে সেচ্ছায় সহযোগিতা করে থাকেন।
হরমন্দির সাহেব এর মানে ঈশ্বরের মন্দির। গুরু অমর দাস জি, গুরু রাম দাসকে শিখধর্মীদের জন্য মন্দির তৈরীর নির্দেশ দেন। পরে ১৫৭৮ সালে গুরু রাম দাস, শিখদের দের নিয়ে বর্তমান ট্যাংকটি খনন করেন এবং অমৃতসর নাম দেন। পরে জনপদের নাম ও সেই নামেই প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে এবং আজও সেই নামেই সারা বিশ্বের মানুষ।
কার জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে এই মন্দির তা নিয়ে দুটি গল্প প্রচলিত আছে। একদলের বিশ্বাস তুং গ্রামের কাছ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে এই জমি কেনা হয় অন্য দলের বিশ্বাস সম্রাট আকবর গুরু রাম দাসের স্ত্রীকে এই জমি দান করেন। পরে ১৫৮১ সালে গুরু অর্জন মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং সেই সময় জলাশয়টি শুকনো রাখা হয়। দীর্ঘ আট বছরে প্রথম ধাপের মন্দির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।
১৬ই আগষ্ট, ১৬০৪ তে হরমন্দির সাহিব-এ প্রথম আদিগ্রন্থ স্থাপন করা হয় এবং বাবা বুদ্ধকে প্রথম গ্রান্থি হিসাবে নিয়োগ পান। পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই মন্দির সবার নজরে আসে। মূঘল শাসনামল কিংবা ইংরেজ শাসনামল সর্বদা শিখদের প্রভাবিত করেছিল।
১৮০৯ সালে রণজিৎ সিং মার্বেল এবং কপার দিয়ে সজ্জিত করেন এবং সেই সাথে মন্দির সুবাধাবাদীদের কাছে থেকে মুক্ত করেন। পরে ১৮৩০ সালে সোনা দান করেন এবং সেই সোনা দিয়ে মন্দিরকে মোড়ানো হয়, সেই মন্দির আজকের ‘গোল্ডেন টেম্পল‘।